ঢাকা, সোমবার   ২১ এপ্রিল ২০২৫,   বৈশাখ ৮ ১৪৩২

নির্বাচন

কোনভাবেই অঙ্ক মেলাতে পারছে না বিএনপি

মোহাম্মদ জুয়েল:

প্রকাশিত : ১২:৪৫ পিএম, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সোমবার | আপডেট: ১০:১২ এএম, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ মঙ্গলবার

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, বিএনপিতে অস্বস্তি ততই যেন দানা বাঁধছে। শুধু তাই নয়, বিএনপির উচ্চ পর্যায়ে বর্তমান সংবিধানের অধীনে নির্বাচন অংশগ্রহণ নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা বা না করার উপর দলটির ভবিষ্যৎ কি, তা নিয়ে দলটিতে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। তাই একেক সময় একেক নেতা নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিয়ে আসছেন।

এদিকে নির্বাচন নিয়ে দলের উচ্চ পর্যায়ের নেতারা যাই বলুক না কেন, দলটির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট তারেক রহমানের সিদ্ধান্তের ওপর। এদিকে তারেক রহমান বিদেশে থাকায় আগামী নির্বাচন নিয়ে কোন মন্তব্য না করলেও, দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলছেন, বর্তমান সরকারের অধীনে তারা কোন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, শেখ হাসিনাকে প্রধান রেখে নির্বাচনে অংশগ্রহণ হবে আত্মহত্যার শামিল।

এদিকে দলটির প্রধান খালেদা জিয়া ও তার পুত্র তারেক রহমান এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না বলে ঘোষণা দিয়ে আসলেও, দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলছেন ভিন্ন কথা। ফখরুলের ভাষায়, আগামী নির্বাচনে বিএনপি অবশ্যই অংশগ্রহণ করবে। তবে তার আগে সহায়ক সরকার গঠন করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে।

এদিকে গত ২৭ জানুয়রি দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, খালেদা জিয়া ও তার পুত্র তারেক রহমানকে ছাড়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না বিএনপি। একইসঙ্গে জোটের কোন দলকেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করতে চাপ দেবে তারা। এরপর দিনই নির্বাচন কমিশনে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানিয়ে দলটি জানায়, তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চায়। তবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে বাদ দিয়ে নির্বাচন আয়োজনের চেষ্টা করছে সরকার, এমন অভিযোগ এনে দলটি জানায় এ চেষ্টা অব্যাহত থাকলে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না।

এদিকে নির্বাচনকালীন সরকারের এক রূপরেখা তৈরি করেছে দলটি। ওই সরকারে প্রধানমন্ত্রীকে সরিয়ে বা তাকে ক্ষমতাহীন করে একটি নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের সুপারিশ করা হয়েছে। তবে ইতোমধ্যে সংসদে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন, সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোন কিছুই করা সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ দলটির হাইকমান্ডও একই সুরে কথা বলছেন।

এমতাবস্থায় বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে গিয়ে বিএনপির লাভ হবে না বলে মনে করছেন দলটির নেতারা। তবে সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোন কিছু করার সম্ভবনাও দেখছেন না তারা। এমতাবস্থায় বিএনপির দাবি আদায় করতে হলে, প্রথমে সংবিধান সংশোধন করতে হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তবে আগামী নির্বাচনে আর মাত্র ১০ থেকে ১১ মাস সময় পাবে দলটি। আগাম নির্বাচনের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা।

এই স্বল্প সময়ে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সহায়ক সরকারের রূপরেখা আদায় করা দলটির জন্য মারাত্মক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার আসন্ন রায়, অন্যদিকে ২০১৬ সালের ২১ জুলাই দুর্নীতির দায়ে তারেক রহমানকে দেওয়ার সাত বছরের কারাদণ্ড-সব মিলিয়ে বেশ চাপের মধ্যে রয়েছে দলটি।

এরইমধ্যে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা সিলেট সফরের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন। শেখ হাসিনার নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর পর রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ আবারও সক্রিয় হয়ে উঠলেও বিএনপির ঢাকার নেতারা আছেন দৌড়ের উপর। একদিকে মামলা অন্যদিকে উচ্চ-পর্যায়ের সিদ্ধান্তহীনতা সব মিলিয়ে রাজনীতির মাঠে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি বিএনপি।

এমজে/