এখনও জমে ওঠেনি বইমেলা
আলী আদনান
প্রকাশিত : ১১:৪২ পিএম, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সোমবার | আপডেট: ১১:৫৮ পিএম, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সোমবার
১ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া অমর একুশে গ্রন্থমেলা আজ পাঁচদিন অতিক্রম করলেও এখনো আশানুরূপভাবে জমে উঠেনি বলে জানালেন মেলায় অনেক প্রকাশক। এজন্য কর্তৃপক্ষের ভুল সিদ্ধান্তকেই দায়ি করলেন প্রকাশনীগুলো।
মেলা শুরু হওয়ার পাঁচদিন অতিক্রম করলেও এখনো পর্যন্ত অনেক স্টল নির্মাণ ও আলোকসজ্জার কাজ শেষ হয়নি। যা মেলার সৌন্দর্য নষ্ট করছে বলে বিভিন্ন স্টল কর্তৃপক্ষের অভিমত। মেলায় কোন তথ্যকেন্দ্র নেই। একটি মাত্র তথ্য কেন্দ্র আছে বাংলা একাডেমীর বর্ধমান হাউসে। এটি দূরত্বের কারণে মেলায় আগত ক্রেতাদের কোন উপকারে লাগছে না বলে অভিযোগ করলেন ইত্যাদি প্রকাশনের জিতু। জিতু আরও বলেন, তথ্যকেন্দ্রের অভাবে একদিকে যেমন ক্রেতারা স্টল নির্দিষ্ট স্টল খুঁজে পায় না তেমনি কোন কোন প্রকাশনী এবার কী কী বই আনছে তা নিয়ে সহজে জানার কোন উপায় নেই।
তবে বাঙালি প্রকাশনের নুসরাত জাহানের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিন্ন রকম। তিনি বলেন, রাত সাড়ে আটটায় মেলার গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর ফলে কর্মজীবী মানুষ মেলায় আসতে পারছে না। অথচ রাত ৯টার পরেই সবচেয়ে ভাল বেচা কেনা হওয়ার কথা।
জোনাকী প্রকাশনির কাজী গিয়াস উদ্দিনও মেলার গেট রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখার পক্ষে। একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে কাজী গিয়াস উদ্দিন বলেন, অন্যান্য বছর এরকম দিনে দৈনিক ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার বই বিক্রি হলেও এবার এখনো সাত আট হাজার টাকার বেশি বই বিক্রি করতে পারছি না। কেন পারছেন না জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলা একাডেমী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও শাহবাগের আশেপাশের এলাকা ছাড়া অন্যান্য এলাকার মানুষ এখনো জানেই না বইমেলার কথা।
খান ব্রাদার্সে কর্মরত তোতামিয়ার চোখে মুখেও অনেকটা হতাশা। তিনি বলেন, আমাদের একাডেমিক বই বেশি। অন্যান্যবার এসময়ে মেলা যতোটা জমজমাট থাকতো এবার এখনো তেমন হচ্ছে না। তবে আমি আশা করছি খুব শিগগিরই মেলা জমজমাট হয়ে উঠবে।
গ্রন্থমেলা নিয়ে বাংলা একাডেমীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন বাতিঘর প্রকাশনীর দীপঙ্কর। তিনি বলেন, বাণিজ্য মেলা বা সরকারি-বেসরকারি অন্যান্য ইভেন্ট নিয়ে বিভিন্ন প্রচারমাধ্যম যতোটা ব্যস্ত থাকে বইমেলা সে বিবেচনায় কোন প্রচার থাকে না। ঢাকা শহরে বইমেলা নিয়ে কোন ব্যানার বিলবোর্ড নেই। টিভি চ্যানেলগুলোতে নির্দিষ্ট খবরের বাইরে বইমেলা নিয়ে কোন আলাদা অনুষ্ঠান নেই। ফলে বইমেলা আশানুরূপ জমে উঠছে না।
মেলায় বই কিনতে এসেছেন ফৌজিয়া হাসনাত ও মিষ্টি বড়ুয়া। কাকলী প্রকাশনীর সামনে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় তাদের। তারা মনে করেন এখনো হুমায়ুন আহমেদ তাদের পছন্দের শীর্ষে। তবে সবজায়গায় মাত্র ২৫ শতাংশ ছাড় দেওয়ায় সন্তুষ্ট নন তারা। দুজনেই একসঙ্গে বলেন, বাইরে সব লাইব্রেরিতে সারা বছর ২৫ শতাংশ ছাড় দেয়। তাহলে মেলার বিশেষত্ব কী? তবে মেলায় বিকাশে লেনদেন করার সুবিধা থাকাকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন তারা।
ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শুধু অমর একুশে গ্রন্থমেলা উপলক্ষে ঢাকায় এসেছেন। তিনি বলেন, ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে দেশের প্রতিটি জেলা উপজেলায় বড় পরিসরে বইমেলা আয়োজনে উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
বাংলা একাডেমীর পরিচালক মোবারক হোসেন কে মেলার গেট তাড়াতাড়ি বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাত ৯টার আগে কখনো বন্ধ হয় না। এরপরও প্রকাশক বা ক্রেতারা অভিযোগ করলে বিবেচনা করে দেখা হবে। বর্ধমান হাউসের তথ্যকেন্দ্রটি মেলার জন্য পর্যাপ্ত নয়- এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, এ বিষয়টি আমি মেলা কমিটি ও বাংলা একাডেমীকে জানাব।
আর/এসএইচ