বিএনপির সভায় শোকপ্রস্তাব : একটি পর্যবেক্ষণ
ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ
প্রকাশিত : ০২:৪৩ পিএম, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৯:২২ পিএম, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ বুধবার
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো রাজধানীর একটি পাঁচতারকা হোটেলে। ওই সভায় যুদ্ধাপরাধের দায়ের মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত দলটির সাবেক নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর জন্য শোক প্রস্তাব আনা হয়। যা দেশের রাজনৈতিক মহলসহ নানা অঙ্গনে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। দেশের একজন শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীকে নিয়ে দলটির নেতাদের মায়াকান্নায় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিএনপির অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিএনপি একদিকে দাবি করে তাদের প্রতিষ্ঠাতা মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন অন্যদিকে দলটি মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়ে আছে। বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধীদের সাঁজার বিরোধিতা এবং যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াত ইসলামকে জোট সঙ্গী করে একই পথে হাঁটছে দলটি। বিএনপির এই দ্বৈতনীতিতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, দলটি যুদ্ধাপরাধী ও রাজাকারদের সঙ্গে নিয়ে পাকিস্তানের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যস্ত। বিএনপি-জামায়াত জোট শুধু রাজনৈতিক জোট নয়, পাকিস্তানি অ্যাজেন্টের জোট।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার হওয়ায় তারা নিজেদের মুক্তিযোদ্ধাবান্ধব দল হিসেবে দাবি করে আসছে। তবে দলটি শুরু থেকেই স্বাধীনতাবিরোধী দল জামায়াত ঘেষা রাজনীতি করে আসছে। তাদেরকে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রশ্রয় ও পূণর্বাসনের ব্যবস্থা করেছে। এখনও জোটসঙ্গী করে একই মেরুতে সন্তুষ্টচিত্তে পথ চলছে। শুধু তাই নয় যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে দণ্ডিত বেশ কয়েকজন মানবতাবিরোধী অপরাধীর সাজার বিরোধিতা করেছে। সর্বশেষ ৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বিএনপির নির্বাহী কমিটির সভায় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অধিবেশনেই শোক প্রস্তাব পাঠ করেন দলটির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন। শোক প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর সব নেতা দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।
ফাঁসি কার্যকর হওয়া সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ছাড়াও সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাস, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি লতিফুর রহমান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক এম এ মাজেদ, সাবেক প্রধান বিচারপতি এম এম রুহুল আমিন, ইস্পাহানি গ্রুপের চেয়ারম্যান মির্জা আলী বেহরুজ, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলাম, অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব হোসেন, সাংবাদিক ইউনিয়ন নেতা আলতাফ মাহমুদ এবং চিকিৎসক ডা. রশিদ উদ্দিন, নায়ক রাজ্জাক, লেখক শওকত আলী, সংগীতজ্ঞ সুধীন দাশ, কবি রফিক আজাদ, কন্ঠ শিল্পী আবদুল জাব্বার, বারী সিদ্দিকী, শাম্মী আখতার, লাকি আখান্দ, অভিনেতা নাজমুল হুদা বাচ্চু, নৃত্যশিল্পী রাহিজা খানম ঝুনু ও কথা সাহিত্যিক জুবাইদা গুলশানারা, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আর এ গনি, এম কে আনোয়ার, আসম হান্নান শাহ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য হারুনুর রশীদ খান মুন্নু, ফজলুর রহমান পটল, সাবেক ডেপুটি স্পিকার আখতার হামিদ সিদ্দিকী, নুরুল হুদা, খুলনার সাবেক মেয়র শেখ তৈয়বুর রহমানসহ দলের চার শতাধিক নেতাকর্মী ছাড়াও বাসদ নেতা আ ফ ম মাহবুবুল আলম ও জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধানের নামেও শোক প্রস্তাব আনা হয়।
এদের মধ্যে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাসের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া জাগপা নেতা শফিউল আলম প্রধান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে `সেভেন মার্ডার` এর মতো কুখ্যাত ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বিতর্কিত ছিলেন। এই শোক প্রস্তাব ও যুদ্ধাপরাধী-রাজাকারদের নিয়ে বিএনপির পূর্বাপর অবস্থান (চিহ্নিত মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের রাজনীতিতে সুযোগ করে দেওয়া, মন্ত্রিসভায় ঠাই দেওয়া, জোট করে একসঙ্গে পথ চলা) এটাই প্রমাণ করে যে, দলটি স্বাধীনতাবিরোধীদের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে।
বিএনপি, জামায়াত এবং পাকিস্থান মূলতএকই বৃন্তের ৩টি ফুল। আদর্শগত ভাবে এদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। মৌলিক ভাবে এরা একে অপরের পরিপূরক। একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, যুদ্ধাপরাধীরদের বিষয়ে সর্ব প্রথম শোক প্রকাশ করে জামায়াত। এরপর পাকিস্তান তার পার্লামেন্টে শোক প্রস্তাব আনে। সর্বশেষে, বিএনপি তাদের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি সভায় একজন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামীর উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জানিয়ে শোক প্রস্তাব এনেছে। তাদের এই মায়া কান্না প্রমাণ করে তারা কোনো রাজনৈতিক দল নয় বরং তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হল এদেশে পাকিস্তানের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা।
মূলত রাজাকার ও মানবতাবিরোধীদের পক্ষে সদা বিএনপির অবস্থানের কারণে তাদের কোনো নৈতিক অধিকার নেই স্বাধীন দেশে রাজনীতি করার। তাদের এরূপ কর্মকাণ্ড শুধু মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি অবমাননা নয় বরং ৩০ লাখ শহীদ ও ৫ লাখ নির্যাতিতা মা-বোনের দীর্ঘশ্বাসের প্রতি চরম অপমান। তাই সময় এসেছে বিএনপি-জামাত জোটকে রাজনৈতিক জোট না বলে পাকিস্থানি এজেন্টদের জোট নামে সম্বোধন করার ।
/ এআর /