টানা পাঁচ কার্যদিবস পতনের পর উত্থানে পুঁজিবাজার
রিজাউল করিম
প্রকাশিত : ১০:২৬ পিএম, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ মঙ্গলবার
টানা পাঁচ কার্যদিবস পতনের পর উত্থানে ফিরেছে দেশের পুঁজিবাজার। সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবস মঙ্গলবার দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় লেনদেন শেষ হয়েছে। সূচকের পাশাপাশি এদিন বেড়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। গত সপ্তাহের দুইদিন ও চলতি সপ্তাহের তিন দিনের পতনের পর বাজারের এ উত্থানকে সরকারের তৎপরতার ইতিবাচক প্রভাব হিসেবে দেখছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। আর অর্থনীতিবীদরা পতনের জন্য বিনিয়োগকারীদের অযৌক্তিক আতঙ্ককে কারণ হিসেবে দেখছেন। আতঙ্ক কেটে যাওয়ায় আবার সূচকেরউত্থান হয়েছে বলে মনে করছেন তারা।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘ পতনে উদ্বিগ্ন হয়ে সরকারের পক্ষ থেকে পুঁজিবাজার সংক্রান্ত নিয়ন্ত্রক সংস্থাদের সঙ্গে গতকাল বৈঠক করা হয়েছে। সেখানে বাজারের পতনের কারণ উদ্ঘাটনের পাশাপাশি তা উত্থানের ধারায় ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা ও কর্মপন্থা নিয়ে আলোচনা করা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে এমন তৎপরতা দেখে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও আজ ক্রয় চাপ বাড়িয়েছেন। ফলে মঙ্গলবার বাজারে উত্থান ঘটেছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, মুদ্রানীতি ঘোষণায় একদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক তফসীলি ব্যাংকগুলোকে ঋণ আমানতের অনুপাত (এডিআর) নির্দেষণা পালনের কথা জানায়। অন্যদিকে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কায় অনেকে ভীত হয়ে পড়েন। যেখানে বাজার স্থিতিশীলতার মূল শক্তি‘আস্থা’র ঘাটতি দেখা দিয়েছে। আস্থার সংকটে বাজারে ভালো কোম্পানির অভাবও দেখা দিয়েছে। আর বাজারে ভালো কোম্পানির সংখ্যা কম থাকায় অল্পতেই বিনিয়োগকারীরা হাতে থাকা খারাপ কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করে দেন। ফলে পতনের মাত্রা বাড়ে।
বাজারের এ পরিস্থিতিতে গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বোর্ড রুমে ‘পুঁজিবাজারে বর্তমান পরিস্থিতি’ শীর্ষক বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ), ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) এবং ডিএসই শীর্ষ ৩০ ব্রোকার নেতাদের এক জরুরি বৈঠক হয়। বাজার সংশ্লিষ্ট সরকারের বিভিন্ন সংস্থার তৎপরতায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে আসে। যার প্রভাবে বাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাএ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বাজার পতনের জন্য বিনিয়োগকারীদের অযৌক্তিক হতাশাকে দায়ী করছেন। তিনি বলেন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ৬ হাজার থেকে ৬ হাজার ২০০ পয়েন্টের মধ্যে বেশ কয়েকদিন ধরে ঘুরপাক খাচ্ছিল। এটাকে স্থিতিশীল পরিস্থিতি বলা যায়।কিন্তু গত কয়েকদিন তা পতনের দিকে গেছে। এরজন্য যৌক্তিক কোন কারণ আমি দেখছি না।
তিনি বলেন, অনেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি ও আগামী ৮ তারিখের রায়কে দুষছেন। কিন্তু আমি এটাকে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক কারণ মনে করছি। কারণ মুদ্রানীতিতে আমানতের বিপরীতে ঋণের অনুপাত (এডিআর রেশিও) ৮৫ থেকে কমিয়ে সাড়ে ৮৩ শতাংশ করা হয়েছে। তাতে ব্যাংকগুলোর ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে বড় ধরনের কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
আবার মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা আগের চেয়ে বাড়িয়ে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ ধরা হয়েছে। কাজেই মুদ্রানীতির কারণে ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট হবে বলে মনে করি না। তাই যাঁরা বলছেন মুদ্রানীতির কারণে বাজারে দরপতন হচ্ছে, সেটি ভিত্তিহীন যুক্তি।
অন্যদিকে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারির রায়কে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে একধরনের অনিশ্চয়তার কথা বলা হচ্ছে। যুক্তির খাতিরে আমি যদি ধরে-ই নিই আইনশৃঙ্খলার কিছুটা অবনতি হবে। তাহলে সেটি তো তাৎক্ষণিকভাবে বিনিয়োগকারীদের ওপর প্রভাব ফেলছে না। তাই একটি আশঙ্কাকে কেন্দ্র করে শেয়ার বিক্রির হিড়িক শুরু হওয়া মোটেই যুক্তিসংগত নয়।
এদিকে আজকের বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দিনশেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৭৯ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৫৯৪৯ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৮ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১৩৮৫ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ২৪ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ২২১৬ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৩৭টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২৭৬টির, কমেছে ৩৮টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৩টির। আর দিনশেষে লেনদেন হয়েছে ৩২২ কোটি ৮৪ লাখ ৪৯ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, দিনশেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূ্ল্যসূচক ২৪৩ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ১৮ হাজার ৩৭৩ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ২২০টি কোম্পানির ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৫৪টির, কমেছে ৪৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৩টির। আর দিনশেষে লেনদেন হয়েছে ১৭ কোটি ৯৬ লাখ ৪৩ হাজার টাকা।
আরকে//