কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে কাজ করছে বেজা: পবন চৌধুরী
প্রকাশিত : ০৮:২২ পিএম, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৭:১২ পিএম, ৪ এপ্রিল ২০১৮ বুধবার
২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প হাতে নিয়েছে বর্তমান সরকার। ফাস্ট ট্র্যাকের আওতায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে দেশের বড় বড় প্রকল্প। সেই সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগেও বাস্তবায়িত হচ্ছে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প।
দেশের চলমান জনসংখ্যার বোনাস যুগকে কাজে লাগানোর জন্য সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির জন্য কাজ করছে সরকার। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে এক কোটি লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে দেশি বিদেশি বিনিয়োগকে আরও বেশি আকৃষ্ট করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করা হচ্ছে। আর এসব অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়নে করছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। বেজার নিজস্ব তত্ত্বাধায়নে বর্তমানে ২১টি অঞ্চলে অবকাঠামো উন্নয়ন করা হয়েছে।
এসব অর্থনৈতকি অঞ্চলে বিনিয়োগকারীদের নিরবিচ্ছিন্ন সেবা দিতে ওয়ানস্টপ সার্ভিস আইন পাশ করে সরকার। ইতোমধ্যে এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে। বেসরকারি খাতে কয়েকটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে উৎপাদনও শুরু হয়েছে। এ সব বিষয় নিয়ে একুশে টেলিভিশন অনলাইন ও একুশে বিজনেসের মুখোমুখি হয়েছেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: সর্বশেষ ৬টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের চূড়ান্ত অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। সেগুলো সে সম্পের্কে জানতে চাই?
পবন চৌধুরী: আমরা ৬টি বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলকে চুড়ান্ত লাইসেন্স প্রদান করেছি। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও-এ আমান ইকোনোমিক জোনে এবং মেঘনা অর্থনৈতিক অঞ্চলে এরই মধ্যে অনেকগুলো ইন্ডাস্ট্রি কাজ শুরু করেছে। সেখানে এখন আর খালি কোনো প্লট নেই। মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অর্থনৈতিক জোনে ৬টি ইন্ডাস্ট্রি উৎপাদন শুরু করেছে। সেখানে আরো একটি ইন্ডাস্ট্রি হচ্ছে। আশা করছি এক বছরের মধ্যেই এটি উৎপাদনে যাবে। এছাড়া সেখানে বিদেশি বিনিয়োগও আসছে।
আর মুন্সিগঞ্জের আব্দুল মোনেম অর্থনৈকি অঞ্চলে হোন্ডার মতো আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান এসেছে। গাজীপুরের বে অর্থনৈতিক অঞ্চল ইতিমধ্যে তাদের উৎপাদিত পণ্য রফতানি শুরু করেছে।
মেঘনা অর্থনৈতিক অঞ্চল থেকেও অনেক পণ্য রফতানি হচ্ছে। একই কথা আমান অর্থনৈতিক অঞ্চলের ক্ষেত্রেও। বলা যায় বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলকে আমরা চূড়ান্ত পর্যায়ে এনেছি এবং তারা উৎপাদনেও গেছে।
এর মধ্যে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি)’র অধীনে বাস্তবায়িত জোন এবং সরকারি জোনগুলো সরকার ও দাতা সংস্থার অর্থায়নে বেজা উন্নয়ন করে দিচ্ছে। সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো কাজ করছে মীরেরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে।
বেজার নিজস্ব তত্ত্বাধায়নে বর্তমানে ২১টি জোনের অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ করছে। এছাড়া দু’টি পিপিপি জোনের অবকাঠামো উন্নয়নের কাজও করা হচ্ছে। এর একটি হচ্ছে বাগেরহাটের মংলাতে। যা ২০৫ একর জমির উপর নির্মিত হচ্ছে। এটি সম্পূর্ণ প্রস্তুত। তবে সেখানে শিল্প কারখানা তৈরির বিষয়ে হাইকোর্টের ৬ মাসের একটা নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ইতোমধ্যে বিদেশি বহু কোম্পানি সেখানে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে। আমরা আশা করি হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হবে এবং সব নিয়ম নীতি মেনেই সেখানে পরিবেশবান্ধব শিল্প কারখানা তৈরি হবে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: বেজার উদ্যোগেই চলতি বছরে জাতীয় সংসদে ওয়ানস্টপ সার্ভিস আইন পাশ হয়েছে। বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) ক্ষেত্রে এটি কতটুকু ভূমিকা রাখবে?
পবন চৌধুরী: শুধু এফডিআই নয়, দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, বাংলাদেশে শিল্পায়নের ক্ষেত্রে শুরু থেকেই হয়রানির জায়গাগুলো বিস্তৃত। অনেকে বলেন, ২৭ এর জায়গার পরিবর্তে তাদের ৫৪টা জায়গাতে যেতে হয়।
এই এই হয়রানি থেকে বিনিয়োগকারীদের মুক্তি দিতেই ২০১৫ সালে একটা উদ্যোগ উদ্যোগ নেওয়া হয়। যাতে এক ছাদের নিচে থেকেই বিনিয়োগকারীরা সবসেবা পেতে পারেন। আর তাই ওয়ানস্ট সার্ভিসের জন্য প্রধানমন্ত্রীর অফিসে আমরা একটা ড্রাফট পাঠাই। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি একটা ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
বিনিয়োগকারীদের সার্বিক সেবা দেওয়ার জন্যই এ সেবা চালুর সিদ্ধান্ত হয়। গত সপ্তাহে আইনটি সংসদে পাশ হওয়ার মধ্য দিয়ে বেজার এই নিরন্তর প্রয়াস সফল হয়েছে। আমরা মনে করি এই আইন বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতিতে বড় ভূমিকা রাখবে। বিনিয়োগকারীরা এর মাধ্যমে উৎসাহিত হবে এবং সামগ্রিকভাবে এটি ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি হবে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: বেজা, বেপজা, বিডা, হাইটেকপার্ক-এই ৪টি সংস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ আসছে। এগুলোকে একই কর্তপক্ষের অধীনে আনা যায় কিনা?
পবন চৌধুরী: ৪টি সংস্থার ব্যাপারে এটা একটি কঠিন প্রশ্ন। আমি মনে করি এই সংস্থাগুলো চমৎকার ভাবে কাজ করছে। আলাদাভাবে কাজ করলেও সবার লক্ষ্য হলো দেশে কীভাবে বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে আসা। সেই সাথে দেশি বিনিয়োগকে কীভাবে আরও বেশি সম্প্রসারিত করা যায়।
তবে নীতিগতভাবে বলা যায় যে, এটা একটা রেগুলেটেড বডি না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কিন্তু সব সংস্থা যখন ভালো ভাবে কাজ করছে তখন মনে হয় এজন্য আরো কিছুটা সময়ের প্রয়োজন হবে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করা হচ্ছে। এই সব অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য দক্ষ মানব শক্তির প্রয়োজন। এটাকে কিভাবে দেখছেন?
পবন চৌধুরী: বেজা, বেপজা, বিডা এবং হাইটেক পার্কের নিয়ন্ত্রণে বা অধিগ্রহণে প্রতিষ্ঠিত শিল্প কারখানাতে দক্ষ জনবল গড়ে তোলা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর অফিসের উদ্যোগে একটা স্কিল ডেভেলপমেন্টে অথোরিটি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ কারণে আমরা আজও (বুধবার) বেজা অফিসে একটা ওয়ার্কশপ করেছি। যারা প্রশিক্ষণে জড়িত, টেকনিক্যাল কলেজে যারা আছেন এবং বোর্ডে যারা আছেন সবাইকে নিয়ে আমরা বসেছি।
আমরা বিশ্বব্যাংকের সাথে কাজ করছি। তারাও একটা টেকনোলজি সেন্টার করার জন্য মীরেরসরাইকে বাছাই করেছে। চীনকে আমরা অনুরোধ করেছি ২টি স্কিল ডেভেলপমেন্ট করে দেওয়ার জন্য।
এছাড়া মীরেরসরাই-এ একটা নলেজ ভিলেজ করার জন্য আমরা ৫০০ একর জমি নির্দিষ্ট করেছি। সেখানে পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিউট ও স্কিল সেন্টারগুলো খোলা হবে। তাছাড়া ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজও করার সুযোগ রাখা হয়েছে।
একইভাবে প্রশিক্ষণ ইনস্টিউট করার জন্য আমরা কয়েকটি স্থানকে নির্দিষ্ট করেছি। যা দিয়ে উত্তরবঙ্গ, সিরাজগঞ্জ অঞ্চলে এ ধরনের সহযোগিতামূলক কাজগুলো করা যাবে। যেখানে আমরা স্কিল ম্যান পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট করতে পারব।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: দক্ষ জনশক্তির পাশাপাশি নিরাপদ খাদ্য জোন করবেন। এটাকে কিভাবে দেখছেন?
পবন চৌধুরী: নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ বিশেষত দেশের প্রধান প্রধান শহরগুলো বাইরের খাবারের উপর নির্ভরশীল। যেমন ঢাকা হলো দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, রংপুর এলাকার খাদ্যের উপর নির্ভরশীল। আবার চট্টগ্রাম তার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর উপর নির্ভরশীল। নিরাপদ খাদ্য সরবরাহের জন্য কিছুদিন আগে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) কিছু প্রস্তাব নিয়ে এসেছে।
তারা কিভাবে বাংলাদেশে নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ করবে এ বিষয়ে তারা সম্ভাব্যতাও যাচাই (ফিজিবিলিটি স্টাডি) আমরা তাদের দু’টি জায়গা চিহ্নিত করে দিয়েছিলাম। এজন্য তারা কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা করেছে। তবে সে বিষয়ে কোন অগ্রগতি আসেনি। সরকারের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
ইতিমধ্যে আমরা বগুড়াতে একটা জায়গা নির্বাচন করেছি। চলতি বছরের শেষ নাগাদ আমরা এটার উন্নয়নের কাজে হাত দিতে পারব। যশোরে দু’টি জোন এবং নাটোরে একটি জোন আমরা নির্বাচন করেছি। নাটোরে আমরা এগ্রো ফুড প্রসেসিং জোন (কৃষি খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল) করতে চাই। সেখান থেকে নিরাপদ খাদ্য ঢাকাসহ আশেপাশের যে শহরে সরবরাহ করা হবে। ডিস্ট্রিবিউশন সেন্টার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আমরা এটি সরবরাহ করতে পারব।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: আমরা জানি দেশে ট্যুরিজম করপোরেশন আছে। তার পরও বেজা এই সেক্টরে আনেক কাজ করছে। এই বিষয়ে জানতে চাই।
পবন চৌধুরী: ট্যুরিজম বিষয়টা আমাদের সবাইকে কষ্ট দেয়। সাধারণ নাগরিকদেরও কষ্ট দেয়। আবার রেগুলেরেটেড বডিতে যারা আছেন তাদেরও কষ্ট দেয়। বাংলাদেশের মতো এতো সুন্দর একটা জায়গা যেখানে এতো প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য রয়েছে, জাতি সত্তার মধ্যে বৈচিত্র আছে। এখানে অনেক আদিবাসী আছেন। আমাদের দেশে পৃথিবীর সর্ব বৃহৎ সমুদ্র সৈকত রয়েছে, সুন্দরবন, পর্বত ও নদী পৃথিবীর কম দেশেই আছে। আমার পৃথিবীর দীর্ঘতম সুমদ্র সৈকত আছে, ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট আছে। কিন্তু দু:খের বিষয় আমাদের দেশে বিদেশি পর্যটক আসে না বললেই চলে।
কিন্তু বাংলাদেশের অভ্যন্তরেও বিপুল সংখ্যক পর্যটক রয়েছে। যেখানে ৫০ থেকে ৬০ লাখ মানুষ এদিক-সেদিক যায়। আবার বাংলাদেশ থেকে শুধু ভারতেই ২০ লাখ পর্যটক ভ্রমণে যায়। এই পরিস্থিতে বিদেশি পর্যটকদের উপযুক্ত সুযোগ-সুবিধা তৈরি করা দরকার। আমরা সেজন্য অনেকগুলো এক্সক্লুসিভ ট্যুরিজম পার্ক করছি। এ বিষযে চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারে আমরা একটি সেমিনারও করেছি।
কক্সবাজারে আমরা বড় ধরনের ট্যুরিজম সিটির কাজে হাত দিয়েছি। মাস্টার প্লানও করা হয়েছে। এবং সমুদ্র থেকে যাতে সেগুলোকে রক্ষা করা যায় এজন্য সম্ভাব্যতা যাচাইও (ফিজিবিলিটি স্টাডি) চলছে। ট্যুরিজম সিটিটা ২ বছর পর শুরু হবে। আর ট্যুরিজম পার্ক যেটা কক্সবাজারের নাফ নদীতে এবং সাবরাং-এ। এগুলোর অল রেডি কাজ চলছে। সেখানে অনেক ডেভেলপমেন্ট হয়েছে। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি পর্যটন সেক্টরে গুণগত মানে বড় পরিবর্তন দেখতে পারবেন।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: ইপিজেড ও বেজার মধ্যে পার্থক্য কোথায়? সাম্প্রতিক সময়ে বেপজার একটি প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেছেন। এ বিষয়টা যতি একটু বলেন।
পবন চৌধুরী: সরকার দেশের বিনিয়োগকে ত্বরান্বিত করতে বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন অথোরিটি (বেপজা)’এর মাধ্যমে উদ্যোগ নেয়। এ জন্য ১৯৮০ সালে একটা আইন তৈরি করা হয়। বেপজা সফলভাবে এ পর্যন্ত ৮টি ইপিজেড বাস্তবায়ন করেছে। দেশর রফতানির ২০ শতাংশ এই ইপিজেডের অবদান। সেখানে ব্যাপক কর্মসংস্থানও হয়েছে। এর কারণ হলো টেক্সটাইল এবং তিরি পোশাক (আরএমজি) খাতে অনেক বেশি বিনিয়োগ রয়েছে সেখানে।
আবার সেখানে কিছু লিমিটেশনও আছে। ওখানে কিন্তু বড় ইন্ডাস্ট্রি করা সম্ভব হয় না। সেখানে কিন্তু ২০০, ৩০০, ৪০০ একরের বড় কোনো ইন্ডাস্টি করা যাবে না। আপনি যদি একটা স্টিল মিল করেন তবে তার জন্যই দরকার এক হাজার একর জমির।
এক্ষেত্রে ছোট আকারের এ অঞ্চলগুলোকে ওভারকাম করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে অত্যান্ত চমৎকার আইন হয়েছিল। এই সরকারের আমলেই ১৯৯৬ সালে প্রাইভেট ইপিজেড অ্যাক্ট আইনটি করা হয়।
কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বেসরকারি ইপিজেডে কোরিয়ান ইপিজেড ছাড়া আর কোনো ইপিজেড এখানে তৈরি হয়নি। ২০১০ সালে সরকার বাংলাদেশ ইকোনোমিক জোন অ্যাক্ট আইন নিয়ে আসে। এই আইনের ফলে দেশের ১৬ কোটি মানুষের জন্য পণ্য উৎপাদন করা যাবে আবার শতভাগ রফতানিও করা যাবে। এটা কিন্তু ইপিজেডের মধ্যে নেই। এর ফলে অনেক বড় বড় ইন্ডাস্ট্রি ইকোনোমিক জোনে আসছে। যেটি ইপিজেডে নেই। এখানে ইন্ডাস্ট্রিগুলো স্থানীয় এবং বিদেশি মার্কেটগুলোকে টার্গেট করে আসতে পারছে। আমরা মনে করি এর প্রভাব সমাজে এবং অর্থনীতি পড়বে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: এই ইকোনোমিক জোনে ডেভেলপাররা কি কি সুবিধা পাবে?
পবন চৌধুরী: আমরা যে প্রনোদনা প্যাকেজ উন্নয়ন করেছি সেটা রিজেওনালি কম্পিটিটিভ। এই কম্পিটিটিভ হওয়াটা যথেষ্ট না। কারণ আমার কম্পিটিটোর যারা আছেন তারাও তাদের প্রনোদনা প্যাকেজগুলো প্রতিনিয়ত আপডেট করছেন, বেশি বেশি সুযোগ-সুবিধার অফার করছেন। যার ফলে ভারত, মিয়ানমারসহ আমাদের কাছাকাছি যারা আছেন (ভিয়েতনাম এবং কম্বোডিয়া) যেখানে প্রচুর বিনিয়োগ যাচ্ছে।
আমরা মনে করি আমাদের প্রনোদনা প্যাকেজ আরো বেশি আকর্ষণীয় হওয়া উচিৎ। এ বিষয়ে আমরা এনবিআরের (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) সাথে কাজ করছি। প্রধানমন্ত্রীর অফিস প্রয়োজনীয় সহায়তা দিচ্ছেন, কো-অর্ডিনেট করছে। আমরা আশা করি, অদূর ভবিষতে আরো ভালো করবে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: অর্থনৈতিক অঞ্চলে এই মুহুর্তে দেশি-বিদেশি কোম্পানির কেমন প্রস্তাব পচ্ছেন বা তাদের আগ্রহ কেমন দেখছেন?
পবন চৌধুরী: অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের মাত্রাটা অনেক বেশি থাকার পরেও নতুন করে জমি বরাদ্দের জন্য আমরা আর কোনো ফরম বিক্রি করছি না। যদিও মীরসরাই-এ প্রচুর পরিমাণ জমি এখনও বরাদ্দের বাইরে রয়েছে। কারণ আমরা ইতোমধ্যে আমাদের ইকোনোমিক জোনে ১৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব পেয়েছি। এর মধ্যে ৮ বিলিয়ন ডলারই বিদেশি বিনিয়োগের প্রস্তাব। বাকি ৯ বিলিয়ন দেশি বিনিয়োগকারীদের প্রস্তাব। প্রস্তাবের দিক থেকে এটা হিউজ এবং এটা বাস্তব প্রস্তাব; এটা নট অনলি ইন্টারেস্ট।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: সামনে সবচেয়ে বড় (৪ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকার) বাজেট। সেখানে বেজার জন্য কোনো প্রত্যাশা থাকবে কিনা?
পবন চৌধুরী: আমরা আমাদের পরবর্তী বোর্ড মিটিংটা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে সময় চেয়েছি। সেখানে আমরা ১৫ হাজার কোটি টাকার একটা ফান্ড গঠন করার জন্য প্রস্তাব করেছি। এটা দিয়ে আগামী ৫ বছরের মধ্যে ইকোনোমিক জোনগুলোর যে অফসাইড অবকাঠামো আছে সেটা ডেভেলপমেন্টের জন্য ব্যবহৃত হবে।
এখানে সব অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্যই এই ফান্ডটা চেয়েছি। এটা শুধু সরকারি, জিটুজি (সরকার থেকে সরকার) বা প্রাইভেট জোনের জন্য নয়।
একুশে বিজনেসের সঙ্গে পবন চৌধুরী
আর/টিকে