প্রশংসা পাচ্ছে রাজধানীর আধুনিক টয়লেট
শাওন সোলায়মান
প্রকাশিত : ১১:৫০ পিএম, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ রবিবার | আপডেট: ১১:৪৫ পিএম, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সোমবার
রাজধানী ঢাকার মহানগরীর দুই সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে নির্মিত আধুনিক টয়লেটগুলো প্রশংসা পাচ্ছে নগরবাসীর। ক্রমাগতভাবে বদলে যাওয়া এসব আধুনিক টয়লেট বা শৌচাগার ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, দুর্গন্ধবিহীন, পর্যাপ্ত আলো-বাতাস, উন্নত রক্ষণাবেক্ষণ এবং ঝকচকে-তকতকে এসব শৌচাগার ব্যবহারে স্বস্তিবোধ করছেন এর ব্যবহারকারীরা।
রাজধানীর উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকার বিভিন্ন পাবলিক টয়লেট সরেজমিনে দেখা যায় যে, এগুলোর চেহারা চিরাচরতি পাবলিক টয়লেটের থেকে একেবারে পাল্টে গেছে। নারী, পুরুষ এবং প্রতিবন্ধীদের শৌচাগার ব্যবহারের জন্য আছে আলাদা আলাদা ব্যবস্থা। নিয়মিত পানি সরবরাহের কারণে প্রাকৃতিক কাজ করা, হাত ধোয়া, খাবার পানি সংগ্রহ করা যাচ্ছে বেশ আরামে। আছে গোসলেরও ব্যবস্থা। সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সংগ্রহের জন্য আছে সোলার সিস্টেম।
যেহেতু এই টয়লেটের ব্যবহারকারীদের বড় অংশই হল ভ্রাম্যমাণ লোকজন তাই তাদের কথা চিন্তা করে এখানে রাখা হয়েছে লকারেরও সুবিধা। নিরাপত্তার জন্য আছে সার্বক্ষণিক ক্লোজড সার্কিড ক্যামেরা। টয়লেট ব্যবহারের জন্য আছে নির্দিষ্ট ফি। সাধারণ ব্যবহারের জন্য ৫ টাকা, গোছল করলে ১০ টাকা আর লকার ব্যবহার করলে ৫ টাকা ফি দিতে হবে। বিনিময়ে পাওয়া যাবে টিকিটও। তবে প্রতিবন্ধীরা এসব টয়লেট ব্যবহার করতে পারবেন বিনামূল্যে।
এসব টয়লেটে সব থেকে বেশি উপকৃত হচ্ছেন নারীরা। মিরপুর চিড়িয়াখানা রোডে অবস্থিত ডিএনসিসি’র টয়লেট ব্যবহার শেষে কলেজ ছাত্রী কাশফিয়া শ্রাবন্তী শান্তা বলেন, “চিড়িয়াখানা ঘুরতে এসেছিলাম। সেখানেই বাথরুমের বেগ পাচ্ছিল। কিন্তু চিড়িয়াখানার ভেতরে থাকা টয়লেট দেখে আর রুচি হল না। যাওয়ার সময় খেয়াল করেছিলাম যে এই রোডেই একটি পাবলিক টয়লেট আছে। বাইরে থেকে দেখে ভালও লেগেছিল। ভাবলাম এখানেই আসি। এখানকার পরিবেশটা বেশ স্বস্তিদায়ক”।
পাবলিক টয়লেটগুলো ব্যবস্থাপনার জন্য আছে একটি কমিটি। এই কমিটিই নিয়মিত টয়লেটের তদারকি করে থাকে। টয়লেট ব্যবহারকারীদের দেওয়া টাকা জমা হয় একটি নির্দিষ্ট ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। সেই অর্থ দিয়েই কমিটির মাধ্যমে টয়লেট পরিচালনা, কর্মীদের বেতন, ইউটিলিটি বিল পরিশোধ ও মেরামতের কাজ করা হয়।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা যায়, এর আওতায় পাবলিক টয়লেট আছে ৩৬টি। এগুলোর মধ্যে ১৭টি আধুনিক পাবলিক টয়লেট। আর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন বলছে, ৩০টি নতুন আধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করেছে তারা। এর পাশাপাশি ১৭টি পুরনো টয়লেট আধুনিক নকশায় সংস্কার করেছে। সবগুলোই এখনও চালু আছে। ২০১৮ সালের মধ্যে দুই সিটি কর্পোরেশনে আধুনিক পাবলিক টয়লেটের সংখ্যা হবে প্রায় ১৭০টি।
ডিএনসিসি’র পরিবেশ, জলবায়ু ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ড. তারিক বিন ইউসুফ ইটিভি অনলাইনকে বলেন, “আপগ্রেডেশন, রিজেনারেশন এবং গ্রিনিং অফ ঢাকা নর্থ সিটি কর্পোরেশন এরিয়া’ শীর্ষক এক প্রজেক্টের মাধ্যমে ডিএনসিসি এলাকার মধ্যকার পাবলিক টয়লেটগুলোর আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ওয়াটার এইডের সাহায্য ১৫টি এবং ওয়ার্ল্ড টয়লেট অ্যাসোসিয়েশন এর পৃষ্ঠপোষকতায় স্পেস নামক একটি এনজিও ১টি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ ও পরিচালনা করছে। এছাড়াও আরও একটি টয়লেট নির্মানাধীন আছে। আর ডিএনসিসি নিজ অর্থে ১টি টয়লেট নির্মাণ করেছে। আরও ২টি নির্মাণাধীন আছে। আর পুরো প্রজেক্টের আওতায় আরও ৭৩টি আধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হবে। তবে এই প্রজেক্টের সব থেকে বড় সমস্যা হল এই যে, পাবলিক টয়লেট নির্মাণের জন্য পর্যাপ্ত জায়গাই পাই না আমরা”।
আর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা উত্তম কুমার বলেন, “আমাদের পুরান ঢাকায় জায়গা পাওয়া এমনিতেই এক সমস্যা। তারপরেও আমরা টয়লেটগুলো আধুনিকায়নে কাজ করছি। আরও ২০-১১টি নতুন আধুনিক টয়লেট নির্মাণের কথা রয়েছে”।
টিকে