ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

ভালোবাসার দুটি ফুল

ম হামিদ ও ফালগুনী হামিদের ভালোবাসার গল্প

প্রকাশিত : ০৪:০২ পিএম, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সোমবার | আপডেট: ০৪:০২ পিএম, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সোমবার

ম হামিদ। একজন নাট্যব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি)। তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদেও নিযুক্ত ছিলেন।

অপরদিকে ফালগুনী হামিদ। খুব সহজেই সবাই তাকে চেনেন একজন অভিনেত্রী হিসেবে। সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ থানার উত্তর শ্রীপুর গ্রামের নিখিল চন্দ্র রায় ও সুষমা রায় দম্পতির আদরের মেয়ে পদ্মই হচ্ছেন সবার প্রিয় অভিনেত্রী, নাট্যনির্দেশক ফাল্গুনী হামিদ।

১৯৭৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর। ভালোবেসে বিয়ে করেন ম. হামিদ ও ফাল্গুনী হামিদ। এরপর ১৯৭৯ সালের ১২ মার্চ সেই বিয়ের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পায়। সেদিন থেকে ফাল্গুনী রায় চৌধুরী হয়ে যান ফাল্গুনী হামিদ।

ভালোবাসা দিবসকে সামনে রেখে একুশের অনলাইনের বিশেষ আয়োজন ‘ভালোবাসার দুটি ফুল’। এ বিভাগে আজকের তারকাদম্পত্তি হামিদ ও ফালগুনী হামিদ। তাদের নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন- সোহাগ আশরাফ

# আমরা আপনাদের ভালোবাসার গল্পটা শুনতে চাই। প্রথম দেখা কবে এবং কিভাবে?

হামিদ : প্রথম দেখা সমকাল পত্রিকা অফিসে। এখনকার সমকাল পত্রিকা না। সেটা ছিলো সমকাল সাহিত্য পত্রিকা। যেটার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন কবি সিকান্দার আবু জাফর।

ফালগুনী হামিদ : প্রথম পরিচয়টা লৌকিক পরিচয় ছিলো। তারপর কাজের মাধ্যমে পরিচয়টা বৃদ্ধি পায়। এক সময় ঘনিষ্ঠতা হয়। তারপর বোঝাপড়া। তারপর বিয়ে।

# বিয়ে হয়েছিলো কত সালে?

হামিদ : ১৯৭৯ সালে।

ফালগুনী হামিদ : হা হা হা। আসলে আমাদের দু’রকম বিয়ে হয়েছে।

# মানে কি?

হামিদ : হ্যাঁ। প্রথম বিয়েটা হয় ১৯৭৮ সালে।

ফালগুনী হামিদ : আমরা দুজন নিজেরা বিয়ে করেছিলাম। পরে পরিবারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক পর্ব ও বৌ ভাতের আয়োজন করা হয়।

# তার মানে দুইবার বিয়ে। হা হা হ। বোঝাই যাচ্ছে আপনাদের প্রথম বিয়েটা অনেক মজার ছিলো। গল্পটা শুনতে চাই।

হামিদ : ফালগুনী হামিদের দিকে তাকিয়ে ম হামিদ- ‘আমি বলবো নাকি তুমি বলবে!’ আচ্ছা তুমিই বলো।

ফালগুনী হামিদ : আসলেই মজার গল্প। আমি হোস্টেলে ছিলাম। ও আমাকে এসে বললো যে স্মৃতিসৌধে বেড়াতে যাবো। আমাদের বোঝাপড়াটা আগে থেকেই ছিলো। আমরা বেড়াতে গেলাম। সে তার বন্ধুর কাছ থেকে একটা মাটর সাইকেল নিয়ে আসলো। এটাতে করে আমরা স্মৃতিসৌধে গেলাম। আমি তো কিছু জানি না। ও দুটো গাঁধা ফুলের মালা বের করলো। বলেলো যে- মালা বদল করে আজই আমরা বিয়ে করবো। আমিও রাজি হয়ে গেলাম। ও আমাকে মালা পড়িয়ে দিলো, আমি ওকে মালা পড়িয়ে দিলাম। এরপর ওকে একটা প্রণাম করলাম। হয়ে গেলো।

# এমন কিছু করবেন তা কি আগে থেকে জানতেন?

ফালগুনী হামিদ : বিয়ে করবো এটা কয়েকদিন ধরে প্লান ছিলো। তবে ওই দিন ওই ভাবে বিয়ে করাটা সারপ্রাইজ ছিলো।

হামিদ : (চুপ। মুচকি মুচকি হাসছেন) হঠাৎ বললেন- আমার বন্ধু ছিলো স ম হুমায়ূন। চিত্রনায়িকা শাবনাজে বাবা। সে তিতাসে চাকরি করতো। তার মটর সাইকেল ছিলো ওটা।

আমাদের দেখা হলো রমনা রেস্টুরেন্টের সামনে। ওকে বলেছি চলে আসো। ও আসলো। মটর সাইকেলে তুলে নিয়ে সোজা সাভার স্মৃতিসৌধ। স্মৃতিসৌধের মধ্যে যে জায়গাটাতে এখন বঙ্গবন্ধুর উদ্বোধনের ফলকটা লাগানো রয়েছে আগে ওখানে ছিলো না। পাশেই একটা জায়গাতে ছিলো। তখন পুরোপুরি নির্মাণ হয়নি স্মৃতিসৌধ। আমরা ওই জায়গাটাতে দাঁড়িয়ে মালাবদল করি। চিন্তাটা এমন ছিলো যে- এর চেয়ে পবিত্র স্থান জাতির আর কোথায় আছে?

আর একটা কথা বলি- বঙ্গবন্ধু একবার বলেছিলেন ‘আমার ছেলে-মেয়েরা বেলিফুলের মালা দিয়ে বিয়ে করবে’। এখন ভাবি আমরাও তো তাই করলাম। হয়তো তখন বেলি ফুল পাইনি। গাঁধা দিয়ে করেছি।

ফালগুনী হামিদ : বেলি ফুলের দামটা তখন বেশি ছিলো। বাজেটেরও তো একটা ব্যপার ছিলো। হা হা হা। মজা করলাম। অবশ্য তখন এভাবে বেলি ফুল পাওয়া যেতো না। ঢাকা শহরে এখন যেমন সব জায়গাতে ফুল পাওয়া যায়। ওই সময় শুধু হাইকোর্টের পশে পাওয়া যেত। আর কোথাও ছিলো না।

# অনেক দিনের সম্পর্ক। অনেক দিনের সংসার। অনেক দিন এক সঙ্গে পথ চলা। যদি জানতে চাই আপনাদের এই ভালোবাসার মূল ভিত্তি কি-তাহলে এক কথায় কি বলবেন?

হামিদ : আমি বলবো, ফালগুনীর নিষ্ঠা, একাগ্রতা।

ফালগুনী হামিদ : এক কথায়ই বলবো, বিশ্বাস।

# বিয়ে হলো। মালা বদল হলো। এরপরই কি দুজন এক সঙ্গে সংসার করতে পেরেছিলেন?

ফালগুনী হামিদ : না। আসলে আমাদের বাড়ি থেকে কেউ ই মেনে নেয়নি। আমাদের দিকে মানেনি। ওদের দিকেও মানেনি। কাজেই আমরা যে খানেই থাকতাম সে সেখানেই ছিলাম। আর সেটা মানাটাও তাদের জন্য দুরুহ ব্যপার ছিলো। নানা রকম প্রতিবন্ধকতা ছিলো। এরপর দুই বাড়ি থেকে যখন আমাদের দেখেছে। আমাদের সম্পর্কে ধারণা জন্মেছে। উভয়েই সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে গেছি। আমার বাবা ওকে আদর করে বাবু বলে ডাকতেন।

হামিদ : হ্যাঁ। আমার শশুর আমাকে অনেক আদর করতেন। আমি যখন ওই পরিবারে ঢুকলাম খুবই ভালোবাসতেন। মজার বিষয় হচ্ছে শেষের দিকে বাবা-মা (শশুর-শাশুড়ি) আমাদের সঙ্গেই ছিলেন। আর আমাদের বাড়ির কথা যদি বলি- আমাদের বাড়িতে দুটি ধারা। একটি দল সাংস্কৃতিক ধারায়। অন্যরা ধর্মীয় ধারায়। আমার বাবা ধর্মীয় ধারার পক্ষে। আমার মা ছিলেন সাংস্কৃতিক ধারার প্রতিনিধি। শুরুর দিকে আমার মা যখন শুনতে পেয়েছিলেন তখন গোপনে তিনি আমার দুই বোনকে পাঠিয়েছিলেন ওকে দেখার জন্য।

# অনেক সময়ই দেখা যায় এধরণের সম্পর্ককে পরিবার মেনে নেয় না। তাদের ক্ষেত্রে আপনাদের সাজেশন কি থাকবে?

ফালগুনী হামিদ : আমি বলবো যে-একটু ধৈর্য্য ধরতে হবে। আর আমি যে পরিবারের জন্য উপকারি অর্থাৎ অপকারি নই, আমার যে তাদের প্রতি গভীর শ্রোদ্ধাবোধ আছে তার প্রমাণ করতে হবে। আমার শশুর প্রথম দিকে আমার রান্না খেতেন না। কিন্তু পরবর্তিতে তিনিই আমাকে ফোন করে বলতেন, খাসির মাংস রান্না করো।

হামিদ : ধৈর্য্য ধারণের পাশাপাশি বোঝার সময়টাও দিতে হবে।

# তখনতো যোগাযোগের তেমন কোন মাধ্যম ছিলো না। দুজন কিভাবে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন?

হামিদ : প্রয়োজন পড়েনি। কারণ পরিচয়ের কয়েক মাসের মধ্যেই সম্পর্কটা গাড় হয়ে যায়। এবং বিয়েটাও হয়ে গেছে। তারপর ৭৯-এর মার্চের দিকে ঘর সংসার শুরু করলাম।

ফালগুনী হামিদ : সব থেকে মজার বিষয় হচ্ছে টিএসসিতে আমাদের বৌ চা হয়েছে। মানে সবাইতো বিয়েতে বৌ ভাতের আয়োজন করেন। আমরা করেছিলাম বৌ চা। তখনতো আমাদের তেমন রোজগারও নেই। ওই বৌ চাতে তৎকালিন ভিসি স্যার-ও এসেছিলেন। আরও অনেক বিখ্যাত মানুষ এসেছিলেন। আমি বৌ। অথচ একটি সাধরণ জরজেট শাড়ি পড়ে যাই ওখানে। কারণ সাজার মত তেমন কিছুই ছিলো না। অনেকেই ফুলটুল দিয়ে সেজে এসেছে। ভিসি স্যার এসে ওকে বলছে কনে কোনটা? হা হা হা।

# অনেক ধন্যবাদ। ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা রইলো।

হামিদ : ধন্যবাদ একুশে টিভিকেও।

ফালগুনী হামিদ : ধন্যবাদ।

এসএ/