ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

বিনিয়োগ না বাড়িয়ে কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা আশা করা যায় না

প্রকাশিত : ০৮:৪০ পিএম, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সোমবার

দেশের বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ না বাড়িয়ে পুঁজিবাজার থেকে কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা আশা করা যায় না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম।

সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘শিল্পায়নে আইপিও’র গুরুত্ব’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন বিজনেস আওয়ার২৪.কমের উপদেষ্টা ও ওমেরা অয়েলের সিইও আক্তার হোসেন সান্নামাত। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জিটিভি’র প্রধান প্রতিবেদক ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ।

মির্জা আজিজ বলেন, কোনো কোম্পানি তার বর্তমান অবস্থা সম্প্রসারণ বা নতুন কোনো উৎপাদনের জন্য শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করে থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে বড় অন্তরায় হচ্ছে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ স্থগিত হয়ে আছে। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ স্থগিতের কারণে গত ৮ বছরে দেশে জিডিপির আনুপাতিক হার মাত্র ১ শতাংশ বেড়েছে। এর পেছনে জমির সমস্যা, অবকাঠামোগত সমস্যা, গ্যাস ও বিদ্যুতে সমস্যা, সুশাসনের সমস্যা, দক্ষ জনশক্তির অভাবসহ বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। যদি এসব সমস্যা অনেকাংশে লাঘব না হয় এবং বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ না বাড়ে তবে শেয়ারবাজার থেকে কাঙ্খিত ভূমিকা প্রত্যাশা করা যায় না।

শেয়ারবাজার থেকে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে অর্থ সংগ্রহ করা সময় সাপেক্ষ মন্তব্য করে তিনি বলেন, আগে বুক বিল্ডিং পদ্ধতি ছাড়াই ভালো কোম্পানিকে ভালো প্রিমিয়ামে টাকা উত্তোলন করতে পেরেছে। ওই সময় সহজেই টাকা সংগ্রহ করা গেছে।

তিনি বলেন, পৃথিবীর সবদেশেই শেয়ারবাজারে কিছু সমস্যা হয়। আমাদের দেশেও হয়। কিছুদিন আগেও শেয়ারবাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। তবে সেটা আশঙ্কাজনক না। এখন শেয়ারবাজার সুষ্ঠভাবে চলছে। এমতাবস্থায় বিনিয়োগ করলে বড় ক্ষতি হবে না।

তিনি আরও বলেন, আইপিওর মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন একটি দেশের শিল্পায়ন বা সার্বিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে শেয়ারবাজার হচ্ছে অর্থ সংগ্রহের একটা মাধ্যম। অন্যটি হলো ব্যাংক ঋণ।

বিএসইসির সাবেক এই চেয়ারম্যান মনে করেন, বাংলাদেশে ৫৮টি হিসেবে মার্চেন্ট ব্যাংকের সংখ্যা বেশি। যা ঠিক না। আর এই মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো আইপিও অনুমোদন ফাইল জমা দিলেই হবে না, ডিউ ডেলিজেন্স পালন করার বিষয়টি দেখতে হবে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, বিএসইসি বাজার নিয়ন্ত্রণ করে ও উৎসাহ প্রদান করে। যা স্বার্থের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তারপরেও ভালো কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে আনার জন্য বিএসইসির সমঝোতা করা উচিত। এতে শেয়ারবাজার সমৃদ্ধ হবে।

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হলে কোম্পানির অনেক জবাবদিহিতা বাড়ে বলে জানিয়েছেন মির্জা আজিজুল ইসলাম। এছাড়া পারিবারিক নিয়ন্ত্রণ কমে আসে। যে কারণে অনেক উদ্যোক্তা শেয়ারবাজারে আসতে চায় না।

সেমিনারে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের ট্রেক হোল্ডাররা শেয়ারবাজারের মূল সমস্যা বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ।

তিনি বলেন, দেশের স্টক এক্সচেঞ্জে ডিমিউচ্যুয়ালাইজড (মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনা পৃথকীকরণ) যথাযথ হয়নি। প্রকৃতপক্ষে ডিমিউচ্যুয়ালাইজড এতো সহজ না। এতোটা সহজ হলে তো হতোই।

 

তিনি আরও বলেন, ১০০টি কোম্পানি আইপিওতে আবেদন করেও ১টির অনুমোদন না পাওয়া দুঃখজনক। এক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজার থেকে দূরে সড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।

মূল প্রবন্ধে রাজু আহমেদ বলেন, একটি কোম্পানির আইপিও প্রক্রিয়া শুরুর পর অনুমোদন নিয়ে মূলধন সংগ্রহে যথেষ্ট সময় লেগে যায়। আইপিও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র (ডকুমেন্ট) তৈরি থেকে শুরু করে প্রতিটি পদক্ষেপেই এই দীর্ঘসূত্রিতা দেখা দেয়। নির্ধারিত মূল্য (ফিক্সড প্রাইস) এবং বুকবিল্ডিং দুই পদ্ধতির ক্ষেত্রেই এই দীর্ঘসূত্রিতা দেখা যায়। তবে নানা পথ পাড়ি দিয়ে বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে তুলনামূলক সময় লাগে বেশি। অনেক কোম্পানির ক্ষেত্রে দুই থেকে আড়াই বছর সময় ব্যয় হওয়ার নজিরও দেখা গেছে। অথচ প্রতিবেশি দেশ ভারতে আইপিওর পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সময় লাগে ১০ থেকে ১২ সপ্তাহ। এমতাবস্থায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পদ্ধতি পর্যালোচনা করে আইপিও প্রক্রিয়া সহজে ও স্বল্প সময়ে সম্পন্ন করা গেলে বিভিন্ন কোম্পানি তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত হবে।

 

আরকে/টিকে