উৎপাদন বাড়িয়ে ইলিশ রফতানি করতে চায় সরকার
প্রকাশিত : ০১:২৯ পিএম, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ মঙ্গলবার
উৎপাদন বাড়িয়ে বিদেশে ইলিশ রফতানি করতে চায় সরকার। এ লক্ষে বেশ কিছু কর্মসূচি বাস্তবায়নে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
‘ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা’ শিরোনামের এই প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে মন্ত্রণালয়। খুব শিগগিরই প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উঠতে পারে বলে মনে করে হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ২১৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে প্রকল্পটির জন্য। প্রকল্পটি দেশের ২৯ জেলার ১৩৪ উপজেলায় বাস্তবায়নের কথা রয়েছে।
‘মৎস্য সংরক্ষণ আইন’ কঠোরভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব হলে ইলিশের উৎপাদন বাড়বে বলে আশা করছেন মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। তারা মনে করেন, ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে হলে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা ছাড়া ইলিশের উৎপাদন বাড়ানো কঠিন হবে। তাই তাঁদের প্রধান টার্গেট থাকবে মানুষকে বেশি করে বোঝানো।
জানা গেছে, দেশের সারা দেশে বর্তমানে ইলিশের পাঁচটি অভয়াশ্রম মধ্যে রয়েছে চাঁদপুরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত মেঘনা নদীর অববাহিকায় ১০০ কিলোমিটার, ভোলার ভেদুরিয়া থেকে পটুয়াখালীর চররুস্তম পর্যন্ত তেঁতুলিয়া নদীর প্রায় ১০০ কিলোমিটার, ভোলার মদনপুর থেকে চরপিয়াল পর্যন্ত শাহবাজপুর শাখা নদীর ৯০ কিলোমিটার এবং শরীয়তপুরের নড়িয়া-ভেদরগঞ্জ উপজেলা অংশে পদ্মার ২০ কিলোমিটার। এর পাশপাশি চট্টগ্রামের মিরসরাই এলাকা, পটুয়াখালীর কলাপাড়া, ভোলার তজুমুদ্দিন, কক্সবাজারের কুতুবদিয়া এলাকাও ইলিশের প্রজননকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। প্রজনন মৌসুমে এসব অভয়াশ্রমে মা ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ হলেও প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে ওই সব অভয়াশ্রম থেকে জেলেরা জাটকা ইলিশ ধরছে।
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বলছে, বিদ্যমান পাঁচটি ইলিশ অভয়াশ্রম ব্যবস্থাপনা গতিশীল করতে বেশ কিছু কার্যক্রমে পরিবর্তন আনা হবে। এর মধ্যে রয়েছে জেলেদের মাধ্যমে ‘আদর্শ মৎস্যজীবী গ্রাম’ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা। এ ছাড়াও জাটকা আহরণকারী ৪০ হাজার জেলে পরিবারের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান সংস্থাটির কর্মকর্তারা। সেই সঙ্গে জাটকা ইলিশ ধরা বন্ধ করতে মৎস্য সংরক্ষণ আইনের আওতায় ভ্রাম্যমাণ আদালত ও অভিযান জোরদার করা হবে।
কর্মকর্তারা বলছেন, এসব কর্মসূচি বাস্তবায়িত হলে ইলিশের উৎপাদন বাড়িয়ে নিজেদের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি সম্ভব।
গত ৮ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, সরকার ইলিশ মাছ রপ্তানি বন্ধ রাখলেও অবৈধভাবে তা পাচার হচ্ছে। এর ফলে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রাষ্ট্র। তাই আমরা যদি ইলিশ রপ্তানি করি, তাহলে গোপনে যাওয়ার পথটা অনেকটা সংকুচিত হয়ে যায়। তাই পাচার ঠেকাতে বৈধভাবে ইলিশ রপ্তানি করতে পারলে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে বলে মনে করেন মন্ত্রী।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১ আগস্ট থেকে ইলিশসহ সব মাছ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও পরে ২৩ সেপ্টেম্বর ইলিশ ছাড়া অন্য সব মাছ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
সম্প্রতি আবার ইলিশ রপ্তানির লক্ষ্যে নেওয়া প্রকল্পের আওতায় যেসব কার্যক্রম হাতে নেওয়া হবে, সেগুলো হলো সম্মিলিত বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হবে দেড় হাজারটি। মৎস্য সংরক্ষণ আইন বাস্তবায়নে অভিযান চালানো হবে ১৭ হাজার। দেড় শতাধিক বিলবোর্ড ও সাইনবোর্ড স্থাপন করা ছাড়াও ১৩৪ উপজেলায় আয়োজন করা হবে প্রায় আড়াই হাজার জনসচেতনতামূলক সভা। ৪০ হাজার জেলেকে বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও থাকছে এই প্রকল্পের আওতায়।
পরিকল্পনা কমিশনের কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আগে জেলেদের জন্য নেওয়া একটি প্রকল্পে সঠিকভাবে জেলে চিহ্নিত করা না যাওয়ায় পরিচয়পত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিলো। তবে এ প্রকল্পে সেই ধরনের অনিয়ম না হওয়ার দিকে বিশেষ নজর রাখার পরামর্শ দিয়েছে কমিশন।
বাংলাদেশের পদ্মা ও মেঘনার মিষ্টি পানির প্রবাহ এখনও ভালো থাকায় এবং প্রয়োজনীয় খাবার থাকায় ইলিশের সংখ্যা বাড়ছে। গত বছর ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ইলিশ। ফলে দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশের ইলিশের জনপ্রিয়তা আরও বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। তাই ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সবার সমন্বিত উদ্যোগ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান তারা।
একে// এআর