ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১

শুভ বিবাহ বার্ষিকী

ইচ্ছে ছিলো ভ্যালেন্টাইনস ডে তেই বিয়ে করবো

প্রকাশিত : ০৯:১৭ এএম, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ বুধবার | আপডেট: ০৪:০৯ পিএম, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ বুধবার

‘প্রথম দেখায় গালের টোলটা যদি দেখা না হত, বেহায়ার মত তোমার দিকে তাকিয়েও থাকা হতোনা। পেতাম না তোমার ভালোবাসার ছোঁয়া। আর চঞ্চলও হতো না মনটা আমার। তোমার অস্থির ভালোবাসায় বলাও হত না প্রিয়া, আমার দুচোখের ভালোবাসার সাগরের জলে তোমাকে মিশাতে চাই। বলা হতো না চলো ভ্যালেন্টাইনস ডে তে (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিয়েটা করি।’

অনুভুতিগুলো জনপ্রিয় তারকা টনি ডায়েসের। নিজের বিবাহ বার্ষিকীতে প্রিয় মানুষটিকে ভালোবাসার অনুভুতিগুলো এভাবেই তিনি প্রকাশ করেছেন।

টনি ও প্রিয়া ডায়েস বাংলাদেশের টিভি নাটকের এক সময়ের পরিচিত ও জনপ্রিয় মুখ। এই দম্পতি বর্তমানে দেশ ছেড়ে রয়েছেন আমেরিকাতে। ডায়েস দম্পত্তি ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন ২০০১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারী। ভালোবাসার এ এক অনন্য দৃষ্টান্ত। তাদের একমাত্র কন্যা অহনা। তাকে নিয়েই দুই তারকার পথ চলা।

যদিও অনেক বছর হলো অভিনয় থেকে কিছুটা দূরে সরে রয়েছেন এই দম্পত্তি। তবে ইদানিং প্রবাসে থেকেই দেশের জন্য নাটক নির্মাণ করছেন তারা। অপরদিকে দেশীয় তারকারা যখন আমেরিকাতে যান প্রায় সকলেই যোগাযোগ করেন ডায়েস দম্পত্তিদের সঙ্গে। টনি ডায়েসের ফেসবুকে প্রবেশ করলেই সে দৃশ্য সবার চোখে পড়বে।

মজার বিষয় হচ্ছে দূরে থাকলেও তিনি ভক্তদের খুব কাছে অবস্থান করছেন। কারণ আমেরিকার জীবন ও পথচলার সব স্মৃতি নিয়মিতই আপলোড করেন নিজের ফেসবুকে। আমেরিকার বিভিন্ন জায়গাতে বিভিন্ন সময় পরিবার নিয়ে ঘোরার ছবি, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা সবই দেখা যায় তার প্রফাইলে। হাস্যজ্জল তাদের ছবিগুলো দেখলেই বোঝা যায় বেশ ভালো আছেন জনপ্রিয় এই তারকা দম্পতি।

আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি দেশের এই জনপ্রিয় জুটির বিবাহ বার্ষিকী। একুশে টেলিভিশন (ইটিভি) ও ইটিভি অনলাইনের পক্ষ থেকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা ডায়েস পরিবারকে।

প্রিয় তারকাদের ভালোবাসার গল্প পাঠকদের সামনে তুলে ধরতে যোগাযোগ করা হয় টনি ডায়েসের সঙ্গে। তার সঙ্গে কথা বলে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন- সোহাগ আশরাফ


ইটিভি অনলাইন : কেমন আছেন ভাই?

টনি ডায়েস : ভালো আছি। যাচ্ছে দিন।

ইটিভি অনলাইন : আমেরিকার জীবন কেমন উপভোগ করছেন?

টনি ডায়েস : আমেরিকার জীবন ভালোই যাচ্ছে। এখানে তো টেনশন কম থাকে। বেশী চিন্তিত হতে হয় না। সব কিছু একটা সিস্টেমের মধ্যে চলে। বেশ ভালো উপভোগ করা যায়।

ইটিভি অনলাইন : সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনার এবং প্রিয়া আপুর রঙিন রঙিন ছবি দেখে ভক্তরা বুঝেই নিয়েছেন দুজনের ভালোবাসা আসলে কতটা রঙিন। ব্যস্ত শহরে কেমন কাটছে দুজনার?

টনি ডায়েস : আমরা দুজনে সব সময়ই খুব ছিমছাম থাকতে ভালোবাসি। জীবনটাকে আমি উপভোগ করতে চাই। বলতে গেলে মানুষ পৃথিবীতে খুব কম সময়ের জন্য থাকে। উপভোগ করটাই আমার কাছে প্রধান মনে হয়। সেটা যে কোনো ভাবেই হতে পারে। আর রঙিন জীবন ... হা হা হা ...! সেটা কেনা চায়! আর আমি চাই সবাইকে নিয়ে রঙিন থাকতে। খুব বেশী চাহিদা নেই।

ইটিভি অনলাইন : ১৪ ফেব্রুয়ারি আপনাদের দুজনার জন্য একটা বিশেষ দিন। দিনটি নিয়ে পরিকল্পনা কি?

টনি ডায়েস : ইচ্ছে ছিলো ভ্যালেন্টাইনস ডে তে বিয়ে করবো। তার জন্য এনগেজমেন্টের পর এক বছর অপেক্ষা করেছিলাম। সাধারণত আমাদের দেশে মেয়েদের পরিবার অপেক্ষা করতে চায় না। তাড়াতাড়ি বিয়েটা সেরে ফেলে। এখনতো একদিনেই বিয়ে হয়ে যায়। পরে শুধু সামাজিকতার জন্য সবাই এক হয়। প্রতিবার অনেক আয়োজন থাকে। তবে এবার তেমন কিছু হচ্ছে না। কারণ এবছর ১৪ ফেব্রুয়ারী আমাদের রোজা শুরু হচ্ছে। এ্যাশ ওয়েডন্সে ডে। বাংলায় আমরা বলি ভর্সো বুধবার। পরবর্তী ৪০ দিন কোনো ধরনের জাকজমক অনু্ষ্ঠান কিংবা বেশী আনন্দ হবে না। কিছুটা ত্যাগস্বীকার করতে হয় ইস্টার সানডে পর্যন্ত। আমি খুব বেশী ধার্মিক মানুষ না। তবে সামাজিকতা কিংবা পারিবারিক মূল্যবোধকে প্রাধান্য দেই। তা নাহলে পরবর্তী প্রজন্ম শিখবে না।

ইটিভি অনলাইন : আপনার কাছে ভালোবাসার সঙ্গা কি?

টনি ডায়েস : ভালোবাসা আমার কাছে মনে হয় দুজনার পারস্পরিক সমঝোতা। শুধু মুখে ভালোবাসি বললেই হয় না। সেটা কর্ম দিয়ে প্রকাশ করতে হয়। চাওয়া পাওয়ার ‌অনেক কিছুই ছাড় দিতে হয়। খেয়াল রাখতে হয় পছন্দ অপছন্দের দিকে।

ইটিভি অনলাইন : একটি মধুর সম্পর্ক আরও মধুর করে তুলতে দম্পত্তিদয়কে কোন বিষয়ের উপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ বলে আপনি মনে করেন?

টনি ডায়েস : ওই যে বললাম-দুজনের বোঝাপড়াটা ভালো হতে হবে। অনেক সময় অনেক কিছু ত্যাগ করার মানষিকতা থাকতে হবে।

ইটিভি অনলাইন : প্রবাস জীবনে থেকে দেশের সবাইকে কি মিস করেন?

টনি ডায়েস : হুম, দেশের ‌অনেক কিছুই মিস করি। বিষেশ করে বন্ধুদের সঙ্গে হৈচৈ আড্ডাটা।

ইটিভি অনলাইন : দেশের কোটি কোটি দর্শক সেই টনি ডায়েসকে আবার ফিরে পেতে চায়। প্রসঙ্গে আপনার বক্তব্য কি?

টনি ডায়েস : দেশে গিয়ে নিয়মিত কাজ করা আর হবে না এটা ঠিক। তবে মাঝে মাঝে গিয়ে করা যেতে পারে। এখন তো সবার সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমটা অনেক সহজ। চাইলেই যে কারো সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়। পরিকল্পনা হলে আমার কোনো সমস্যা নেই। তবে আমি চাই আমেরিকাতে যদি নাটক অথবা ফিল্মের কাজ করা যায়, বেশী ভাল হবে। এখানে শুটিং করা বেশ সহজ। কারিগরি দিক থেকে সবই পাওয়া যায়। খুব বেশী খরচও না। লোকেশন ভেরিয়েশনের সঙ্গে সঙ্গে সব জায়গায় শুটিং করা যায়। তেমন কোনো ‌অনুমতিরও প্রয়োজন হয় না।

ইটিভি অনলাইন : প্রবাসে থেকেও কিছু কাজ করছেন দেখা যাচ্ছে। এটা কি শুধুই কারো অনুরোধে নাকি মিডিয়ার প্রতি আপনার ভালোবাসা থেকে?

টনি ডায়েস : আমাদের আসলে আন্তর্জাতিক ভাবে কাজ বেশী করা উচিত। তাতে করে একসময় অনেক ভালো ক্ষেত্র তৈরী হবে, ভালো সুযোগের সৃষ্টি হবে।

আমরা বেশ কিছুদিন থেকেই এখান থেকে কাজগুলো করে ঢাকার চ্যানেলগুলোর জন্য পাঠাতে চাচ্ছি। কারণ আগেই বলেছি খুব একটা ঝামেলা এখানে নেই, বিষেশ করে নিউ ইয়র্কে সবই পাওয়া যায়। এবছর বেশ কিছু কাজ করার ভাবনা আমাদের আছে। মিডিয়ার প্রতি ভালোবাসা থেকেই করতে চাই। সারাক্ষণ বিভিন্ন সুন্দর সুন্দর লোকেশন যখন দেখি, মাথায় শুধুই শট কাজ করে, এঙ্গেল কাজ করে। তাইতো আমার বাসায় সবই আছে। গত কয়েক বছরে নিজেই সব যোগার করেছি। এখানে সব কিছুই পাওয়া যায়। প্রচুর ভালো অভিনেতা অভিনেত্রী এখানে আছেন। আমাদের শুধু দরকার চ্যনেলগুলোর সহযোগিতা। কারণ আমাদের ভাষার টিভি অনুষ্ঠান আমরা বাংলাদেশের মানুষ ছাড়া কেউ দেখে না।

ইটিভি অনলাইন : নতুন কোন কাজ করেছেন সম্প্রতি?

টনি ডায়েস : গত বছর শেষের দিকে একটা ১০০ পর্বের ধারাবাহিক করছি প্রিয় মানুষ, প্রিয় পরিচালক রহমতউল্লাহ তুহিনের পরিচালনায়। সঙ্গে আমার প্রিয় সব শিল্পী। নাম ‘নিউ ইয়র্ক থেকে বলছি’। খুব শিঘ্রই প্রচার হবে দীপ্ত টিভিতে। নিউ ইয়র্কে বিভিন্ন লোকেশনে কাজ করেছি আমরা। তাছাড়া ভেলেন্টাইনস ডে উপলক্ষে বিষেশ নাটক ‘ওপারে তুমি’ করেছি কিছুদিন আগে। রচনা ও পরিচালনায় সৈয়দ জামিম। সঙ্গে আছে প্রিয় অভিনেত্রী রিচি সোলায়মান। প্রচার হবে ১৫ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টায় আরটিভিতে।

ইটিভি অনলাইন : প্রবাস জীবন কেনো বেছে নিলেন? অভিমান নাকি অন্যকিছু?

টনি ডায়েস : আমেরিকা আসা হয়েছে পরিবারের জন্যই। আমার আর প্রিয়ার পরিবারের সবাই এখানে থাকে প্রায় ৪০ বছর ধরে। পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখানে চেইন ইমিগ্রেশন পদ্ধতি চালু আছে। সেই চেইন ইমিগ্রেশনের কারনেই চলে আসা। অভিমান থাকলেও সেটা আমার মধ্যেই রাখতে চাই। সবাই সবকিছু করতে পারেনা। আমি কখনই কম্প্রোমাইজ করিনি কোনো কিছুর সঙ্গে। সব সময় নিকট ভবিষ্যতটা আমি দেখতে পাই। তাইতো পরিকল্পনাটা সে ভাবেই করি।

আর তাছাড়া আমাদের শোবিজের আকাশটা খুব সহজেই ধরা যায়। আর মার্কেটাও খুব ছোট। আপনি ৫ বছরে যে কাজটা করে যে জায়গায় থাকবেন, ২০ বছর ধরে কাজ করেও সেই জায়গাটাই থাকবেন। যদি না আন্তর্জাতিক ভাবে কাজ করা না হয়। শিল্পীদের ইউটিলাইজেনটা খুব কম হয়। একটা সময় শুধুমাত্র পেশার কারনেই কাজগুলো করে যেতে হয়, বাচ বিচার করা যায় না।

ইটিভি অনলাইন : মিডিয়ায় নতুন কিছু নিয়ে কি কোন পরিকল্পনা আছে? দেশে ফিরবেন কবে?

টনি ডায়েস : আগেই বলেছি আমেরিকায় বাংলাদেশের মিডিয়ার জন্য বেশ ভালো সুযোগ। এখানে সব কিছুই সহজ, কাজ করার জন্য। সরকার নিয়মগুলো খুব সহজ করে রেখেছে। তাইতো এখান থেকেই মিডিয়ার জন্য কাজ করতে চাই।

ইটিভি অনলাইন : একুশে টিভি অনলাইনের পক্ষ থেকে আপনাদের দুজনকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। জীবনটা আরও রঙিন হোক এই কামনা। ভালো থাকবেন।

টনি ডায়েস : একুশে টেলিভিশন পরিবারকেও শুভেচ্ছা। দেশের সব দর্শক ও বন্ধুদের শুভেচ্ছা জানাই। আমাদের জন্য দেয়া করবেন।

এসএ