মন বাড়িয়ে ছোঁয়ার দিন আজ
ভালোবাসি ভালোবাসি
প্রকাশিত : ১০:১০ এএম, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ বুধবার | আপডেট: ১০:৩৫ এএম, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ বুধবার
‘হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই। দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।’ কবি নির্মলেন্দু গুণের কবিতার এ পঙ্ক্তির মতোই আজ হয়তো কারও কারও হৃদয় ছুঁয়ে যাবে ভালবাসায়। হৃদয়ের গহিনে বাস করা অনুভূতি পরষ্পরকে মন বাড়িয়ে ছুঁইবে আজ। বসন্তের উতলা হাওয়ার এমন দিনে মনের মানুষটির পানে একগুচ্ছ গোলাপ তুলে দিয়ে বলবেন, মন বাড়িয়ে হৃদয় উজার করে ছুঁতে চাই তোকে।
আবার, ‘রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন দুজন,মাথার উপর তপ্ত রোদ, বাহন পাওয়া যাচ্ছেনা। এমন সময় হঠাৎ দাঁড়িয়ে পথ রোধ করে যদি তোমাকে বলি ভালবাস, তুমি কি হাত সরিয়ে দেবে?নাকি রাস্তার সবার দিকে তাকিয়ে কাঁধে হাত দিয়ে বলবে, ভালবাসি, ভালবাসি..।’ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতার এ পঙ্কঙ্তির মতোই আজ রাস্তায় রাস্তায়, স্টেশনে স্টেশনে, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে, প্রতিটি ঘরে ঘরে, প্রতিটি জায়গায় দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে বলবে ভালবাসি ভালবাসি।
দীর্ঘদিন ধরে তীর্থের কাকের মতো বসে আছেন আপনি। দিনটি কবে আসবে? আর হাতে লাল গোলাপ নিয়ে বসে আছেন আপনি? কতদিন হয়নি বলা, বলবেন আজ, ভালবাসি ভালবাসি। হয়তো ওপ্রান্ত থেকে কোন উত্তর পাওয়া যাবে না। হয়তো সে চুপ করে থাকবে। খানিক পর জড়তা ভেঙ্গে মৃদু হাসি হেসে বলবে তোমায়, ‘আমিও তোমায় ভালোবাসি। ভালবাসি, ভালবাসি’। আজ ভালোবাসার জয় হবেই। আজ যে ভালোবাসার দিন, ভ্যালেন্টাইন্স ডে।
বসন্তের ঝিরিঝিরি বাতাসে আজ হারিয়ে যাবে প্রেমিকযুগল। সব আবেগ আর অনুভূতি দিয়ে প্রিয় মানুষটিকে বুঝিয়ে দেবে ভালোবাসার গভীরতা। মানব-মানবীর চিরকালের যে প্রে,ম তার জয়গান হবে চারদিকে। আজকের এই রাঙা প্রভাত, দুপুর বিকেল বা সন্ধ্যাটা হয়ে হবে জীবনের এক চিরস্মরণীয় দিন। আর সারাটি দিন একসঙ্গে কাটিয়ে প্রেমিকযুগল গাইবে ভালোবাসার গান। অনেকের জন্য যেমন আজকের কোনো একটা সময় হবে ভালোবাসার প্রথম প্রহর, তেমনিভাবে অনেকে উদযাপন করবেন একসঙ্গে পথচলার কয়েক বছর। এমনকি কয়েক যুগ। কেউ করবেন প্রতিজ্ঞা, যে প্রতিজ্ঞাই হাজারো বছর কাটিয়ে দিবেন, ভালবাসায় ভালবাসায়।
আজকের দিনে সবকিছুতেই প্রাধান্য পাবে ভালোবাসার মানুষটির পছন্দ। তাই প্রিয় মানুষটি প্রিয় রং বা প্রিয় পোশাকে নিজেকে সাজিয়ে উপস্থিত হবেন আরেকবার। তবে ভালোবাসার রং লাল বলে বেশির ভাগ যুগলই নিজেদের সাজাবেন লালে। নতুন করে একে অপরের প্রেমে পড়বেন। নিজেদের মতো করে কাটিয়ে দেবেন সারাটি দিন।
আজ ভালোবাসা দিবসে প্রেমিকযুগলের পদচারণায় মুখর থাকবে শহরের নানা পথ-প্রান্তর। দু’জনে দু’জনার হাত ধরে ঘুরবে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত। কারণ আজ নিজেদের মতো করে হারিয়ে যাওয়ার দিন। একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া, ছবি-সেলফি তোলা চলবে। অনেক যুগল রিকশায় ঘুরে বেড়াবেন। অনেকে আবার বিভিন্ন উদ্যানে-পার্কে গাছের ছায়ায় বসে মন খুলে কথা বলবেন।
রাজধানীতে চলছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। তাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবং বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ মেতে থাকবে ভালোবাসার উৎসবে। টিএসসি, শাহবাগ, চারুকলা, ধানমণ্ডির রবীন্দ্র সরোবরও থাকবে যুগলদের পদচারণায় মুখর। এ ছাড়া ধানমণ্ডি লেক, বনানী, গুলশান, উত্তরার ফাস্টফুড ও কফিশপগুলোতে হয়ে ওঠবে ভালবাসার মিলনমেলা। রাজধানীর শপিংমলের ফুডকোর্ট যেমন যমুনা ফিউচার পার্ক, বসুন্ধরা সিটিতে চলবে খাওয়া-দাওয়া।
আবার অনেকে আবার একসঙ্গে সিনেমা দেখবেন। কেউ কেউ হয়তো প্রেয়সীকে নিয়ে একেবারেই নিজেদের মতো করে সময় কাটানোর জন্য লং ড্রাইভে চলে যাবেন দূরে কোথাও। রাজধানীসহ এর আশপাশের বিনোদন কেন্দ্রগুলো হয়ে ওঠবে যুগলারণ্য। রাজধানীর বাইরেও ভালবাসা দিবসকে স্মরণীয় করে তুলতে অনেকেই পাড়ি জমাবেন ক্যাম্পাসে। যারা যুগল নন, তারা বন্ধুদের সঙ্গে পাড়ি জমাবেন লং ড্রাইভে সারাদিন ঘুরবেন। খুঁজে বেড়াবেন মনের মানুষকে। হয়তো নতুন করে প্রেমে মজবেন। এরপর আবার কোন ভালবাসা দিবসে গিয়ে বলবেন ভালবাসি, ভালবাসি।
অনেক প্রেমিকযুগল আবার ভালোবাসা দিবসকে বেছে নিয়েছেন বিয়ের দিন হিসেবে। তাই ভ্যালেন্টাইন্স ডে এখন বিয়ের দিন হিসেবেও জনপ্রিয়। দিনটিতে দু’জন দু’জনকে উপহার দেয়ার প্রচলন আছে। আজ চকোলেট, পারফিউম, বই, প্রিয় পোশাক, আংটি, ঘড়ি, খেলনা উপহার হিসেবে দেয়া-নেয়া চলবে। তবে সবচেয়ে বেশি দেয়া-নেয়া হবে রক্তগোলাপের। পাশাপাশি প্রেমবার্তা, শুভেচ্ছা কার্ড, ই-মেইল, মোবাইলে এসএমএস পাঠানো চলবে সমান তালে। আর এতে জয় জয়কার চলবে তারুণ্যের। জয় জয়কার চলবে ভালবাসার।
এমজে/