ইয়াবা পরিবহণকারী এক চালকের জবানবন্দি
প্রকাশিত : ০৪:৫৪ পিএম, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ বুধবার
পরিমান নয়, সংখ্যার ভিত্তিতে নির্ধারিত হয় ইয়াবা পরিবহনের ভাড়া। কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে ঢাকায় প্রতিটি ইয়াবা বড়ি পাঠানোর পরিবহন খরচ সাত থেকে আট টাকা। চট্টগ্রাম আদালত দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এই তথ্য দিয়েছেন হাসান নামে এক ইয়াবা বহনকারী কাভার্ড ভ্যান চালক।
হাসানকে গত ১ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারের রামু থেকে গ্রেফতার করে ডিবি। তাঁর বাড়ি রামুর গর্জনিয়ায়। ইয়াবা পরিবহণ করে মাত্র দেড় বছরে হাসান চালক থেকে কাভার্ড ভ্যানের (দাম ৩০ লাখ টাকা) মালিক হয়েছেন বলে জানান চট্টগ্রাম নগর ডিবির পরিদর্শক মো. কামরুজ্জামান।
চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আবু সালেম মোহাম্মদ নোমানের আদালতে ৪ ফেব্রুয়ারিতে জবানবন্দি দেন কাভার্ড ভ্যান চালক মো. হাসান। ইয়াবা পরিবহনের ব্যয় এবং কীভাবে কাভার্ড ভ্যানে ইয়াবা রাখার বক্স বানানো হয়, সেসব তথ্য উল্লেখ করে জবানবন্দিতে।
জবানবন্দি থেকে জানা যায়, ইয়াবা পরিবহনের জন্য কাভার্ড ভ্যানের ভেতরের (পণ্য রাখার জায়গা) ইস্পাতের কাঠামো কেটে ছোট দুটি বক্স বানানো হয়। একেকটি বক্স প্রস্থে প্রায় এক ফুট। বক্সের ওপরে এবং নিচে দুটি দরজা থাকে। একেকটি দরজা লম্বায় এক ফুটের মতো। ওপরের দরজা দিয়ে ইয়াবা ঢোকানো হয়। নিচের দরজা দিয়ে তা বের করা হয়। বক্সে ইয়াবা ঢোকানোর পর দরজা ঝালাই বা স্ক্রু দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে তা রং করা হয়। বক্সের অস্তিত্বই চট করে ধরা কঠিন। একটি বক্সে ১ লাখ ৩০ হাজার ইয়াবা বড়ি ঢোকানো যায়।
জবানবন্দিতে হাসান আরো জানায়, তিন বছর আগে দুবাই থেকে আসার পর পরিচিত এক ব্যক্তির মাধ্যমে ইয়াবা পরিবহনের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। প্রতিটি বড়ি বহনের জন্য সাত থেকে আট টাকা পেতেন তিনি। ইয়াবা পরিবহনের জন্য চট্টগ্রামের কালু শাহ মাজার এলাকার একটি গ্যারেজ (মেরামত কারখানা) থেকে নিজের কাভার্ড ভ্যানে বিশেষ বক্স লাগান। গ্যারেজের দুই শ্রমিক শাহজাহানের (২০ নভেম্বর গ্রেপ্তার) পরিচিত ছিল। তাঁর মাধ্যমে তিনি ওই গ্যারেজে যান। অপরিচিত কারও কাজ করেন না ওই দুই শ্রমিক। তাঁর মতো আরও অনেক চালক গাড়িতে বক্স লাগিয়েছেন।
গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সূত্রে জানা যায়, ওজনে নয়, সংখ্যার ভিত্তিতে ইয়াবা পরিবহনের ভাড়া নির্ধারিত হয় এবং টাকা লেনদেন হয় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে । এক লাখ ইয়াবা টেকনাফ থেকে ঢাকায় আসতে খরচ হয় সাত থেকে আট লাখ টাকা। টেকনাফে প্রতিটি ইয়াবার মূল্য ৫০ থেকে ৭০ টাকা হলেও ঢাকায় পৌছানোর পর প্রতিটি ইয়াবার মূল্য হয় ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা।
এছাড়াও ইয়াবা পরিবহনে জড়িত সাত-আটজন কাভার্ড ভ্যান চালককে শনাক্ত করা গেছে বলেও জানান নগর ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার এ এ এম হুমায়ুন কবির।
চট্টগ্রাম নগর ডিবির উপকমিশনার মো. শহীদুল্লাহ জানান, পণ্যবাহী কাভার্ড ভ্যানে ইয়াবা পরিবহন করাকে বড় বিপদ। কাভার্ড ভ্যানে ইয়াবা পাচারের তথ্য আগে থেকে জানা না থাকলে ধরা সম্ভব নয়। এর কারণ, এসব গাড়ি ভারী পণ্যে ঠাসা থাকে, আর ইয়াবা রাখার বক্স থাকে পণ্য রাখার শেষ প্রান্তে। গাড়ির সব মালামাল নামিয়ে তল্লাশি করা কঠিন। এ জন্য যেসব গাড়িতে বক্স রয়েছে, তা শনাক্তের চেষ্টা চালাচ্ছেন তাঁরা।
আন্ত:জেলা মালামাল পরিবহন সংস্থা ট্রাক কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী জাফর আহমেদ জানান, কিছু মালিক ও চালক ইয়াবা পরিবহনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। গত বছরের নভেম্বর মাসে মাছের চালান নিয়ে আসা কাভার্ড ভ্যানে ইয়াবা ধরা পড়ার পর তাঁরা সতর্ক হন। সমিতির অধীনে ৯৫৮টি কাভার্ড ভ্যান চলে। ইয়াবা পাচারে না জড়াতে মালিক ও চালকদের সমিতির পক্ষ থেকে সতর্ক করা হয়েছে। এরপরও কেউ জড়িয়ে পড়লে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২০ নভেম্বর টেকনাফ থেকে মাছ নিয়ে চট্টগ্রামের নিউমার্কেট এলাকায় আসা এ রকম একটি কাভার্ড ভ্যান জব্দ করে ডিবি। কাভার্ড ভ্যানের ভেতরে থাকা বক্সে ১ লাখ ২০ হাজার ইয়াবা ছিল। এ ঘটনায় চালক মো. মামুন, তাঁর সহকারী শাহজাহান ও মো. আনোয়ারকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হাসানকে (জবানবন্দি দিয়েছেন) গ্রেপ্তার করে ডিবি। তবে হাসানের কাভার্ড ভ্যানটি এখনো জব্দ করা যায়নি।
/ এআর /