ভালোবাসার নির্দিষ্ট দিনক্ষণ নেই
কাজী মঞ্জুরুল আলম
প্রকাশিত : ১১:২১ পিএম, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১১:১৪ এএম, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ রবিবার
আমরা ভালোবাসি আমাদের মা-বাবাকে। ভালোবাসি প্রাণাধিক প্রিয় সন্তানকে। সমানহারে ভালোবাসি পরিবারের প্রত্যেকটি সদস্যকে। এর বাহিরেও আত্মীয়তা এবং নিবিড় সম্পর্কও রয়েছে। তাছাড়া কোনো না কোনোভাবে প্রতিনিয়ত ভালো লাগা, ভালোবাসার মানুষগুলোর সাথে ভাব বিনিময় এবং মান-অভিমান, ভুল বুঝাবুঝি, অবসান, সাথে পরম্পরা বন্ধন সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে দিনাতিপাত করছি।
বর্ষপঞ্জির নির্দিষ্ট একদিন ভালোবাসি, ভালোবাসি বলে জানান দিতে হবে। পাশাপাশি উপঢৌকন, বর্ণিল সাজে সজ্জিত হয়ে বাহিরে ঘুরাফেরা এবং পকেট কেটে নামজাদা হোটেল রেস্টুরেন্টে বসে কষ্টার্জিত অর্থব্যয়ে দামী খাবার খেতে হবে। নইলে ভালোবাসা দিবস মূল্যহীন। এমন হতে হবে কেন?
তার মানে ৩৬৪ দিন অবহেলা অনাদরে ছিল। নতুন পোশাক পরিচ্ছদ না দিয়ে নোংরা মলাট কাপড়চোপড় দিয়ে ঘরের ভেতর বন্দি রাখা হয়েছিল। ভালো খাবার খেতে না দিয়ে পান্তাভাত আর কাঁচামরিচ ঢলা খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করেছে। এমন ঘটনা কি ঘটেছে? মোটেও না। অপ্রিয় হলেও সত্য এসব বড্ড বাড়াবাড়ি। হালের ফ্যাশন, নোংরা মানসিকতার পরিচায়ক।
শহরবাসী উৎসব করে, বিভিন্ন দিবস উৎযাপন করে। পালনকারীদের সংখ্যা নেহাত কম নয়। বরং দিনদিন মতাবলম্বীর সংখ্যা বাড়ছে। তবে বয়সে তরুণ তরুণীর আধিক্য বেশি। বিবাহিত এবং জটিল সম্পর্কে যারা জড়িয়ে আছেন তাদের বেশিরভাগ অন্তরাল অথবা অন্দরমহলে নয় বরং সগৌরবে সমান তালে নিজেদের উজার করে দিচ্ছেন।
আকাশ সংস্কৃতির কল্যাণে প্রতিনিয়ত উদ্ভট দিবস পালনের নামে ব্যভিচার বেড়ে চলছে। যোগ আছে হিন্দি সিরিয়ালের নায়ক নায়িকাদের অনুকরণ। হরহামেশা দেখা যাচ্ছে ব্যক্তি জীবন ও পারিবারিক জীবন বন্ধনের উপর প্রভাব ফেলছে হিন্দি ও বাংলা সিরিয়াল। সাথে বিকৃত হচ্ছে মায়ের ভাষা। হিন্দি শব্দ ব্যবহার করে প্রিয়জনকে সম্বোধন, ভিনদেশি ভাষা অবিরাম বলতে পারলে সবার সামনে বিশেষ গুণের-গুণী বনে যান। যারা শেকড় ভুলে ভিনদেশি ভাষা ব্যবহার, চলনবলন অনুকরণ ও পোশাক আশাক ধারণ করে অহংবোধ করেন তাঁরা কেমন মানুষ? ভাবতে অবাক হই। সামনে আর কি বাকি আছে। বাকিগুলো পূর্ণতা পেলে সেদিন গুলো কেমন যাবে। মাবুদ ভালো জানেন।
ক্রমে ক্রমে ভুলতে বসছি নিজস্ব সংস্কৃতি, আচার-অনুষ্ঠান, স্নেহ, মমতা, শ্রদ্ধা, সম্মান, দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ। বর্তমান দিনকাল, অভ্যাস সবকিছু কেমন জানি অস্থিরতায় ভরপুর। অস্থিরবুদ্ধি, উদ্ভট চিন্তাজগত, উগ্র চলাফেরা, উচ্চস্বরে বাক্য বিনিময়, বেপর্দা, সেলফি, চ্যাটিং, ভিডিও কথোপকথন, লাইভ আড্ডা, চ্যাটাংচ্যাটাং কথাবার্তা এসব কিছু গ্রাস করছে সোনালি অতীত ও বর্তমান প্রজন্মকে।
ভালোবাসা দিবসের নামে বর্ণিল সাজ, রগচটা পোশাক, স্পর্শের নামে নগ্নতা, আড়ালে নয় সবার নজরে আসে এমন স্থানে জড়াজড়ি, চুম্বন, কুরুচিপূর্ণ আলিঙ্গন। চলার পথ, বেড়ানোর রাস্তা, উম্মুক্ত পরিবেশ সবি যেন নির্লজ্জদের দখলে। চোখ ন্যুয়ে আসে, মুহুর্তে বিবেক ধর্ষিত হয়।
ভালোবাসার অপর নাম খুব করে জড়িয়ে ধরা নয়। ভালোবাসা মানে হৃদয়ের বন্ধন, আত্মার টান, সমান শ্রদ্ধা, অধিকার নিয়ে দায়িত্বপালন।
আপনার সন্তানসহ নিকটতম স্বজনের দিকে নজর দিন। কোথায় যাচ্ছে, কি করছে। নচেৎ আপনার পরিবারের সম্মানহানি হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
আসুন সুস্থ চিন্তা ও সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্কের মধ্যে দিয়ে সত্য সুন্দর সমাজ বিনির্মাণ করি।
লেখক: রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিককর্মী