ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

নায়িকা রোজিনার অজানা কথা

প্রকাশিত : ১১:৫৬ পিএম, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১২:০৮ এএম, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ শুক্রবার

বাংলাদেশের অসম্ভব জনপ্রিয় একজন অভিনেত্রী রোজিনা। চলচ্চিত্রের দীর্ঘ এ পথ পাড়ি দেওয়া তার জন্য ততটা সহজ ছিল না। ছোটবেলা থেকেই চলচ্চিত্রের প্রতি ছিল তার ভিষণ আগ্রহ। সেই আগ্রহই তাকে খ্যাতির এই চূড়ায় নিয়ে এসেছে। তার শুরুটা ছিল খুবই ছোট একটি কাজ দিয়ে। মাত্র কয়েকটি শট। এই কয়েকটি শটই তার জীবনের গতিধারা পাল্টে দেয়। স্বপ্ন দেখতে থাকেন বড় মাপের একজন অভিনেত্রী হওয়ার। বুনতে লাগলেন কিভাবে এই জগতে নিজের জায়গাটি তৈরি করবেন। কিন্তু শুরুতে কেউই তাকে সে সুযোগ দিতে চায়নি।    

নায়িকা রোজিনার ভাষায়, ‘ছোটবেলা থেকেই সিনেমায় কাজ করার খুব ইচ্ছে ছিল। কিন্তু কোনো সুযোগ পাচ্ছিলাম না। একবার সংসদ ভবন এলাকায় একটা ছবির শ্যুটিং হচ্ছিল আমি সেটা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম। ওই সময় ড্রিংকস পরিবেশনের জন্য একজনের প্রয়োজন পড়ে। তখন আমি আগ্রহ প্রকাশ করি। তারপর আমি ড্রেস চেঞ্জ করে কয়েকটি শট দেই। এটাই প্রথম। এরপর নিজের স্বপ্ন আরো বেড়ে গেল। অনেকের সঙ্গে পরিচয় ঘটলো। কিন্তু কেউ কাজ দিতে চায় না। তারপর একটি ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হই কিন্তু পরবর্তীতে সেই ছবিতে আর কাজ করা হয়নি।’   

রোজিনার পারিবারিক নাম ছিল রওশন আরা রেণু। কিন্তু সিনেমা করতে এসে সেই নাম পাল্টে হয়ে গেলেন রোজিনা। তবে ১৯৭৬ সালে যে ছবির জন্য নাম পরিবর্তন করে রোজিনা নাম নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে পরিচিত হয়েছিলেন সেই ছবি তার আর করা হয়নি। এরমাঝে আরো একটি ছবিতে তিনি চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন, হঠাৎ ওই সময় অসুস্থ হয়ে গেলে পরিচালক অন্য একজন নায়িকাকে নিয়ে ফেললে রোজিনা ভিষণ কষ্ট পান। এরপর তিনি প্রতিজ্ঞা করেন যেভাবেই হোক চলচ্চিত্রে নিজের অবস্থান তৈরি করবেন।

এ সম্পর্কে রোজিনা একুশে টিভি অনলাইনকে বলেন, ‘নিজের সঙ্গে নিজে যুদ্ধ শুরু করি। চেষ্টা করতে থাকি নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার। সর্বোচ্চ দিয়ে নিজেকে তৈরি করার চেষ্টা করতে থাকি। এরপর ১৯৭৭ সালে এফ কবীর চৌধুরীর ‘রাজমহল’ ছবিতে চিত্রনায়ক ওয়াসিমের বিপরীতে অভিনয় করে ব্যাপক প্রশংসা পাই। তারপর একে একে অনেকগুলো ছবিতে অভিনয় করি। আমজাদ ভাই এর ‘কসাই’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাই। তারপর শুধু বাংলাদেশ নয়- নেপাল, পাকিস্তান, ভারত এসব দেশের ছবিতেও অভিনয় করি।’

ব্যর্থতার মাধ্যমে পথ চলা শুরু করলেও পরবর্তীতে রোজিনা একের পর এক সুপার-ডুপার হিট ছবি উপহার দেন। যারাই তাকে শুরুর দিকে অবজ্ঞা করেছেন, সুযোগ দিতে চাননি। তারাই পরবর্তীতে তাকে পাওয়ার জন্য ব্যকুল হয়ে থাকতেন।

‘কসাই’ চলচ্চিত্রের পর মতিন রহমান পরিচালিত ‘জীবনধারা’ ছবির জন্য তিনি ১৯৮৮ সালে আবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। এরপর কবীর আনোয়ার পরিচালিত ‘দিনকাল’ ছবিতে অনবদ্য অভিনয়ের জন্যও পুরস্কৃত হন।   

খ্যাতিমান এই অভিনেত্রী ১৯৮৬ সালে পাকিস্তানী যৌথ প্রযোজনার ছবি ‘হাম সে হায় জামানা’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে ‘নিগার অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেন। ওই ছবিতে তার বিপরীতে ছিলেন সেই সময়ের জনপ্রিয় নায়ক নাদিম।

এরপর ১৯৮৪ সালে ভারত-বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র ‘অবিচার’ এ মিঠুন চক্রবর্তীর বিপরীতে অভিনয় করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন।

রোজিনা অভিনীত চলচ্চিত্রের গান এখনো মানুষের মুখে মুখে ফেরে। ‘এই মন তোমাকে দিলাম, তুমি চোখের আড়াল হও, কাছে কি বা দূরে রও’ ‘ছেড়ো না ছেড়ো না হাত’ ‘তুমি আমার কত চেনা’ এ ধরনের অসংখ্যা কালজয়ী গানের মাধ্যমে রোজিনা নিজেকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।

রোজিনা বলেন, ‘অসংখ্যা ছবিতে আমি অভিনয় করেছি। রাজ্জাক, ফারুক, আলমগীর সবার সঙ্গেই কাজ করা হয়েছে। চলচ্চিত্রের গানগুলো ছিল অনেক মেলোডি নির্ভর যা এখনকার ছবিতে খুব একটা দেখা যায় না। ভালোবাসা নির্ভর ছবি এখন কম। আমাদের সময় গল্প, গান, চিত্রনাট্য সব কিছু নিয়েই ভালো করার একটা চেষ্টা ছিল। আমরাও চেষ্টা করতাম সর্বোচ্চটা দেওয়ার। কিন্তু এখন সবাই টাকার পেছনে দৌঁড়াতে চায়। ফলে কেউ আর ভালো অভিনেত্রী হিসেবে গড়ে উঠছে না।’

অভিনেত্রী রোজিনা বর্তমানে লন্ডনেই বেশিরভাগ সময় থকেন। ক্ষতিপূরণ, ধনী গরীব, আনারকলি, কসাই, দোলনা, রুপবান, অবিচার, রাস্তার রাজা, মিস ললিতা, অভিযান, মানসীসহ প্রায় ২৫৫টি চলচ্চিত্রে তিনি অভিনয় করেছেন। সর্বশেষ ২০০৫ সালে ‘রাক্ষসী’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে এ জগত থেকে বিদায় নেন এক সময়ের পর্দা কাঁপানো এই অভিনেত্রী।   

এসি/