ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে এক কোটি লোকের কর্মসংস্থান হবে

প্রকাশিত : ১০:২১ এএম, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ শুক্রবার | আপডেট: ০১:২১ পিএম, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ শুক্রবার

বছরে অতিরিক্ত ৪০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য উৎপাদন ও রফতানির প্রত্যাশা নিয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল। ইতিমধ্যে ২১টি অঞ্চলে অবকাঠামো উন্নয়ন করা হয়েছে। সবগুলোর কাজ পুরোদমে শুরু হলে এক কোটি লোকের কর্মসংস্থান হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)।

বেজা সূত্রে জানা গেছে, ব্যাপক কর্মসংস্থানের লক্ষে সারাদেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয় সরকার। এজন্য গঠন করা হয় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)।

বেজা এখন পর্যন্ত ৭৯টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য স্থান নির্ধারণ করছে। এর মধ্যে ২৩টি বেসরকারি। বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে ছয়টি চূড়ান্ত লাইসেন্স পেয়ে গেছে। অন্যগুলো সরকারি ও বিদেশি বিনিয়োগে নির্মিত হওয়ার কথা রয়েছে।

সূত্র জানায়, বেজার নিজস্ব তত্ত্বাবধায়নে বর্তমানে ২১টি অঞ্চলের অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ এগিয়ে চলছে। এরইমধ্যে কোনো কোনো অর্থনৈতিক অঞ্চল উৎপাদন শুরু করেছে। তাদের উৎপাদিত পণ্য এখন রফতানি হচ্ছে।

এছাড়াও সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব চুক্তির আওতায় দুটি জোন করা হচ্ছে। এর মধ্যে বাগেরহাটের মংলায় ২০৫ একর জায়গা নিয়ে করা অর্থনৈতিক অঞ্চলটি বিনিয়োগের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। সেখানে চীন, ভারতসহ অনেক বিদেশি কোম্পানি বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে।

অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও-এ চূড়ান্ত লাইসেন্স পাওয়া বেসরকারি উদ্যোগে আমান অর্থনৈতিক অঞ্চল উৎপাদন শুরু হয়েছে। একই এলাকায় আরেক বেসরকারি মেঘনা অর্থনৈতিক অঞ্চলের ইন্ডাস্ট্রিগুলোতেও উৎপাদন কাজ শুরু হয়েছে। এদের উৎপাদিত পণ্য এখন দেশের বাইরে রফতানি হচ্ছে। পাশাপাশি সেখানে বড় বড় বিদেশি বিনিয়োগ প্রস্তাবও আসছে।

চূড়ান্ত লাইসেন্স পাওয়া আরেক জোন মুন্সিগঞ্জের আব্দুল মোনেম অর্থনৈতিক অঞ্চল। সেখানে উৎপাদিত সিমেন্ট বিদেশে রফতানি হচ্ছে। এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে আন্তর্জাতিক মানের ব্রান্ড হোন্ডা এসেছে। তারা সেখানে হোন্ডা উৎপাদনের জন্য বিনিয়োগও করেছে। হোন্ডার ইন্ডাস্ট্রি এখন দৃশ্যমান। গাজীপুরের বে অর্থনৈতিক অঞ্চলের উৎপাদিত পণ্যও রফতানি হচ্ছে।

বেজার হিসাবে মতে, গত সাত মাসে অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রায় ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে।

সরকারের এই উদ্যোগ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল দেশের জন্য অবশ্যই ইতিবাচক। এখান থেকে দেশ বড় ধরনের বেনিফিট পাওয়া যাবে যা দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের অবদান রাখবে। তবে এসব অঞ্চলে সার্বক্ষণিক গ্যাস, বিদ্যুৎ-এর পাশাপাশি সরকারি অন্য লজিস্টিক সাপোর্ট প্রয়োজন হবে। পরিবেশবান্ধব ও পরিকল্পিত শিল্পায়নের মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠলে তা দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে বলেও মন্তব্য করেন সাবেক এ গর্ভনর।

এ বিষয়ে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা ৭৯টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য আমরা অনুমোদন পেয়েছি। বাকিগুলো সরকারের অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছে। সর্বশেষ সিটি ইকোনোমিক অঞ্চলসহ ছয়টি বেসরকারি অঞ্চলকে আমরা চূড়ান্ত লাইসেন্স দিয়েছি। সেখানে তারা উৎপাদন শুরু করেছে। তাদের উৎপাদিত পণ্য এখন দেশের বাইরে রফতানি হচ্ছে।

তিনি বলেন, ১৫ বছরের কর্মসূচি নিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে আমরা কাজ শুরু করেছি। সেখানে গত সাত মাসে ১৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো আগামীতে দেশের বিনিয়োগের গতি-প্রকৃতি নির্ধারণ করবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে এক কোটি লোকের কর্মসংস্থান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

প্রতিটি জেলায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা সম্ভব কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে পবন চৌধুরী বলেন, আমরা চাইলে যে কোনো স্থানে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করতে পারব না। সেখানে বন্দরের প্রয়োজন হবে, লজিস্টিক সাপোর্ট প্রয়োজন পড়বে। এ ক্ষেত্রে আমরা বিমান বন্দর, নৌবন্দর, স্থল বন্দরের কাছাকাছি অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য স্থান নির্বাচন করি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারলে আগামী কয়েক দশকে দেশের ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণ বদলে যাবে। কিন্তু এই সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্য প্রয়োজন হবে সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা। এখানে অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি পর্যাপ্ত গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে সরকারের অন্যতম কাজ। সর্বোপরি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে যেকোনো মূল্যে।

//আর/এএ/এসএইচ/