ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

সিনেটে নাকচ হল অভিবাসন বিল

প্রকাশিত : ০৫:৪৯ পিএম, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ শুক্রবার | আপডেট: ০৯:৩৫ পিএম, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ শুক্রবার

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা সিনেটে অভিবাসন বিষয়ে প্রস্তাবিত চারটি বিল নাকচ করা হয়েছে। বিল পাস হওয়ার জন্য সর্বনিম্ন ৬০টি ভোট না আসায় বাতিল হয় এসব বিল। আর এতে দেশটিতে থাকা প্রায় ১ কোটি ৮ লাখ অভিবাসন প্রত্যাশীর ভাগ্য অনিশ্চিত হয়ে পড়ল।
গতকাল বৃহস্পতিবার দেশটির আইন প্রণয়নের সর্বোচ্চ সংস্থা সিনেটে এই বিলগুলোর বিষয়ে আলাদা আলাদাভাবে ভোটাভুটির আয়োজন করা হয়। বিলগুলো পাস হওয়ার জন্য প্রয়োজন ছিল ৬০টি করে ভোট। কিন্তু কোন বিলই ৬০টি ভোট পায়নি। যে কারণে বাতিল হয়ে যায় বিলগুলো।
বাতিল হওয়া বিলগুলোর মধ্যে আছে খোদ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সুপারিশ করা একটি বিল। যুক্তরাষ্ট্রে থাকা অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা প্রদানের লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটি প্রস্তাবনা দেন। এ প্রস্তাবনা অনুযায়ী অবৈধ অভিবাসীদেরকে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। তবে এর জন্য তাদেরকে দিতে হবে বিপুল অংকের টাকা। সেই টাকা ব্যয় হবে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের জন্য।
তবে হোয়াইট হাউসের এই বিলের বিপক্ষে ভোট দেয় খোদ রিপাবলিকান দলের ১৪ জন সিনেটর। সিনেটে বিলটি উত্থাপন করেন সিনেটের রিপাবলিকান দলের প্রধান চাক গ্র্যাসলে। বিপক্ষে ভোট দেওয়া রিপাবলিকান সিনেটরদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন জন থুন, জন ব্যারাসো, টেড ক্রুজ এবং র্যােন্ড পল।
অন্যদিকে বহুল আলোচিত ‘বাইপার্টিশান’ বিলটিও বাতিল হয়ে যায় সিনেটে। রিপাবলিকান সিনেটর সুজান কলিনস উত্থাপিত এই বিলের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের স্থায়ী অনুমতি পেতে পারত অভিবাসন প্রত্যাশীরা। পাশাপাশি মেক্সিকো সীমান্তের কাছে দেয়াল নির্মাণের জন্য ২৫ বিলিয়ন ডলার অর্থ বরাদ্ধের সুপারিশও ছিল বিলটিতে। তবে সেটিও ৫৪-৪৫ ভোটে নাকচ হয়ে যায়।
অভিবাসন প্রত্যাশীদের এবং সীমান্ত সুরক্ষার সুপারিশ করে একটি বিল উত্থাপন করেন রিপাবলিকান দলের সদস্য জন ম্যাককেইন। ৫২-৪৭ ভোটে বাতিল হয়ে যায় এটিও।
আর সবশেষে দেশটির কেন্দ্রীয় অভিবাসন কর্তৃপক্ষের সাথে যেসব অঙ্গরাজ্য সহায়তাও করে না তাদেরকে এক ধরণের আইনী বাধ্যবাধকতায় নিয়ে আসতে উত্থাপিত বিলও ভোটাভোটিতে হেরে যায়।
এই চারটি বিলের পক্ষেই ভোট দেওয়া রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম বলেন, “মনে হচ্ছে বামপন্থীরা হেরে গেল। তবে জিতে গেল ডানপন্থীরা”।
ভোটাভোটি শেষে এক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রিপাবলিকান সিনেটর মিচ ম্যাককনেল গণমাধ্যমকে বলেন, “ভোটাভোটিতে হেরে যাওয়ার মানে এই না যে আমাদের উদ্যোগ শেষ হয়ে গেল। ডেমোক্রেটিক সিনেটরদের এই অচলাবস্থার জন্য দায়ী করে তিনি বলেন, “আমি সকল সিনেট সদস্যদের প্রতি অনুরোধ করব যে, আমরা যেন সব ধরণের তর্ক বাদ দিয়ে অভিবাসন ইস্যুতে একটা সমাধানে পৌঁছাতে পারি”।
সিনেটে এই বিলগুলো পাস না হওয়ার জন্য ডেমোক্রেটদেরই দায়ী  করছেন খোদ প্রেসিডেন্ট। এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্টের পক্ষে হোয়াইট হাউজ জানায়, “তারা (ডেমোক্রেটিক সিনেটরেরা) অভিবাসন ইস্যুতে আন্তরিক না। তারা দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার বিষয়েও আন্তরিক না”।
তবে বিলগুলো নাকচ হওয়ার বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে সিনেটে ডেমোক্রেটিক দলের প্রধান চাক স্কুমার রয়টার্সকে বলেন, “এই ভোটাভোটিই প্রমাণ যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ইচ্ছা এদেশে আইন হবে না। তিনি যদি বাইপার্টিসান বিলটি পাস করতে দিতেন তাহলে তা একটি ভাল আইন হতো”।
তবে সিনেটরদের এ দ্বন্দ্বে আবারও আশার আলো বন্ধ হয়ে গেল অভিবাসন প্রত্যাশীদের। শিশু বয়সে অবৈধ উপায়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসা এসব অভিবাসীরা বর্তমানে পূর্ণ বয়স্ক। নিজেদেরকে “স্বপ্নদ্রষ্টা” হিসেবে নাম দিয়ে সাংগঠনিকভাবে বৈধতা পেতে আন্দোলন করে যাচ্ছেন তারা।
সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা’র সময়ে নেওয়া ডিফার্ড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারাইভাল (ডাকা) নামক কর্মসূচির মাধ্যমে দেশটিতে অবস্থান করছেন এসব অভিবাসীরা। তবে সে কর্মসূচিও শেষ হবে আগামী ৫ মার্চ। রিপাবলিকান সিনেটর বব কর্কার বলেন, “আমরা এখন চিন্তা ভাবনা করে দেখছি যে, মার্চের ২৩ তারিখ পর্যন্ত অল্প সময়ের জন্য এই কর্মসূচির মেয়াদ যায় কী না”।
সূত্রঃ রয়টার্স

এস এইচ এস// আরকে//