গণহত্যার দায়ে দোষী হতে পারেন সুচি: জাতিসংঘের বিশেষ দূত
প্রকাশিত : ০৮:১৪ পিএম, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ শুক্রবার
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান রোহিঙ্গাদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনীর নির্যাতনে মানবাধিকার বিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। আর এ অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করা যেতে পারে দেশটির নেতা অং সান সু চি’কে। এমনটাই দাবি করেছেন রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াং হি লী।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক গণমাধ্যম চ্যানেল-ফোর’কে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন লী। চ্যানেলটির বিশেষ প্রতিনিধি জনাথন মিলারকে দেওয়া ঐ সাক্ষাৎকারে ইয়াং হি লী মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর হওয়া এ নির্যাতনকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তবে বিষয়টিকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে আমলে নিতে হলে আন্তর্জাতিক আইনের স্বীকৃতির প্রয়োজন বলে জানান তিনি। আর নির্দিষ্টি আইনের মধ্যে দিয়েই তা সম্ভব বলেও জানান তিনি।
পাশাপাশি এ গণহত্যা’র জন্য সু চি দায়ী বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এ বিষয়ে কোনো বিচার হলে দেশটির নিরাপত্তাবাহিনীকে এ গণহত্যায় ‘সহায়তা’ করা অথবা তা রোধে কোনো ভূমিকা না নেওয়ায় সু চি দোষী সাব্যস্ত হতে পারেন বলেও মনে করেন এই মানবাধিকার কর্মী।
এসময় সু চি’কে কখনো মানবাধিকার লংঘনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে দেখা যায়নি উল্লেখ করে লী বলেন, “তিনি আগেও একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি ছিলেন। এখনও তেমনি আছেন। তিনি যেখানে তার সুবিধা দেখবেন সেদিকেই কথা বলবেন”।
জনাথনের এক প্রশ্নে লী বলেন, “তারা (মিয়ানমার) বলে আমি নাকি পক্ষপাতদুষ্ট। আমি জিজ্ঞেস করলাম কীভাবে। তারা বলে যে তাদের দেশে কোনো রোহিঙ্গা নেই। কোনো নির্যাতন, খুন বা ধর্ষণ হয়নি। আমি মানতে পারলাম না। তাহলে কীভাবে পক্ষপাতী হলাম? প্রমাণ তো তাদের বিপক্ষে”।
রোহিঙ্গাদের রক্ষায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ কেন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “দেখেন এর জন্য বিগত কয়েক বছরের ঘটনা বুঝতে হবে। কোন এক কারণে বিগত কয়েক দশক ধরেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এক রকম নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছিল। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আগে থেকেও কোনো পদক্ষেপ নিত না নিরাপত্তা পরিষদ। এখানে রোহিঙ্গাদের সাথে একরকম বৈষম্য করা হয়”।
“আইনের বিধি-নিষেধ আর আইনের প্রয়োগ দুইটি আলাদা বিষয়। রোহিঙ্গাদের সার্থে আর আইনের প্রয়োগ হয় না”।
সু চি’কে সকলের “রোল মডেল” উল্লেখ করে দক্ষিণ কোরিয়ার এই মানবাধিকার কর্মী বলেন, “সু চি সকলের কাছে এক রোল মডেল। এই সকলের মধ্যে আমি নিজেও। তবে এটা খুবই হতাশাজনক যে সু চি এমন একটি কাজ করলেন”।
রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিচ্ছে মিয়ানমার। রোহিঙ্গাদের এখনই দেশটিতে ফিরে যাওয়া কী নিরাপদ হবে?-জনাথনের এই প্রশ্নে নেতিবাচক উত্তর দিয়ে লী বলেন, “দেখুন, রোহিঙ্গাদের ওপর হওয়া এই জাতিগত নিধন নির্যাতন অনেক পুরনো দিনের। এটি এখনই সমাধান হবে না। আর এখনই তাদের ফিরে যাওয়া নিরাপদও নয়। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ অবস্থান নিশ্চিত হলে তবেই তাদের দেশটিতে ফেরত পাঠানো যেতে পারে”।
নিজের কাছে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য আছে উল্লেখ করে ইয়াং হি লী বলেন, “দেশটিতে আরও অনেক গণকবর পাওয়া যাবে। মৃতের সংখ্যা আমরা যা ভাবছি বাস্তবে তার থেকে অনেক বেশি। আর এই সত্য আজ অথবা কাল বেরিয়েই আসবে”।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সদস্য তালিকায় না থাকা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যতদিন না আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সোচ্চার হবে ততদিন মিয়ানমারে প্রকৃত শৃংখলা ফিরে আসবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
“নিজ দেশের বৌদ্ধদেরসহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের চোখে ধুলো দিচ্ছে মিয়ানমার। কিন্তু বাস্তবতা হল দেশটিতে থাকা রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার লংঘন করা হচ্ছে”।
সূত্র: চ্যানেল ফোর
//এস এইচ এস//টিকে