দ. এশিয়ায় আঞ্চলিক বাণিজ্য রাজনীতিনির্ভর
প্রকাশিত : ০৬:৫৩ পিএম, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ রবিবার
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক বাণিজ্য বাজারের ওপর নির্ভর করে না। এখানে প্রথমেই কাজ করে রাজনীতি। এছাড়া নিরাপত্তা, আমলাতন্ত্র এগুলোও বাণিজ্যকে নিয়ন্ত্রণ করে। এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যিক বিষয়েও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পৃক্ত থাকে। থাকে নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর মতামত।
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, বাণিজ্য বাড়াতে এশিয়ান হাইওয়ে ও এশিয়ান রেলওয়ে খুবই ভালো ধারণা ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত কারণে তা হয়নি। আঞ্চলিক যৌথ উদ্যোগের সফলতা ও ব্যর্থতা যা হয়েছে তা রাজনৈতিক কারণেই হয়েছে। এজন্য অনেক দেশই এখন আর আঞ্চলিক উদ্যোগ না নিয়ে দ্বিপক্ষীয় মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করছে। তবে প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, ভ্যালু চেইন সৃষ্টি ও আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করা গেলে বাণিজ্য বাড়বেই।
শনিবার বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সানেম আয়োজিত তৃতীয় বার্ষিক অর্থনীতিবিদ সম্মেলনের একটি পর্বে প্রধান আলোচকের বক্তব্য রাখতে গিয়ে রেহমান সোবহান এসব কথা বলেন।
`বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক প্রেক্ষিতে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো এবং বাণিজ্যের নতুন চ্যালেঞ্জ` শীর্ষক এ আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান।
রেহমান সোবহান বলেন, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানে নিরাপত্তা বড় বিষয়। যে কারণে এখানে রাজনীতি মুখ্য ভূমিকা রাখে। এটা অস্বীকার করাও যাবে না। এজন্য বাণিজ্য বাড়াতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে। বিশেষ করে নীতি প্রণয়ন, নিয়ন্ত্রণ, বাণিজ্য বাধা দূর ইত্যাদি বিষয়ে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে হবে। বাজারগুলোতে সুশাসন নিশ্চিত করা গেলে বাণিজ্য সহজ হবে। ভ্যালু চেইন সৃষ্টি করা গেলে এক দেশের পণ্যের প্রতি অন্য দেশের ব্যবসায়ীরা আগ্রহী হবেন।
তিনি এসএমই উদ্যোক্তাদের বৈশ্বিক উদ্যোক্তা ও রফতানিকারকের ভূমিকায় নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয় নীতি প্রণয়নের পরামর্শ দেন।
যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক কুনাল সেন বলেন, আঞ্চলিক বাণিজ্যে নানা ধরনের বাধা রয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানো গেলে ও আইনগত সমস্যাগুলো দূর করা গেলে এসব বাধা অনেকটা কমে আসবে। শুল্ক্কও কমাতে হবে।
সিপিডির ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রাজনৈতিক অর্থনীতিতে সরকারের ভূমিকা অনেক। প্রাতিষ্ঠানিক ও অবকাঠামো সুবিধা ঠিকমতো না থাকলে ৭৫ ভাগ বাণিজ্য সম্ভাবনা কাজে লাগানো যায় না। এজন্য নীতি, নিয়ন্ত্রণ ও বাস্তবায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে। পানামা পেপারস, প্যারাডাইস পেপারস থেকে অর্থ পাচারের তথ্য আসছে। রাজস্ব বোর্ড বলছে, বন্ডেড ওয়্যারহাউসের সুবিধা নিয়ে ৬০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এসবই হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার কারণে। সক্ষমতা বাড়ানো গেলে এসব কমে আসবে। তিনি বলেন, মাথাপিছু আয়, জিডিপি সমান হওয়া সত্ত্বেও ভিয়েতনামের রফতানি বাংলাদেশের সাতগুণ বেশি। এটা শুধু দক্ষতা ও সুশাসনের কারণে হয়েছে।
ভারতের রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম ফর ডেভেলপিং কান্ট্রিজের অধ্যাপক প্রবীর দে বলেন, ভারত আগ্রহী না হলে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক বাণিজ্য এগোবে না। কারণ ভারত এ অঞ্চলে বড় দেশ। এ ছাড়া এ অঞ্চলের দেশগুলোর সরকারের মনোভাবও গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণ হিসেবে তিনি সার্কের অবস্থা তুলে ধরেন। এজন্য দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, তবে প্রাতিষ্ঠানিক উন্নতি হলে, সুশাসন নিশ্চিত করা গেলে বাণিজ্য স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে।
নেপালের গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়া ওয়াচ অন ট্রেড, ইকোনমিকস অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের চেয়ারম্যান পশ রাজ পান্ডে বলেন, আঞ্চলিক বাণিজ্য বাড়াতে হলে এখন দক্ষতা বাড়াতে হবে। বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়াতে হবে। সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। বাণিজ্য বাড়াতে বাজারকে উৎসাহিত করতে হবে। সেবা বাণিজ্য বাড়াতে হবে। এসব করতে হলে অশুল্ক্ক বাধা দূর করতে হবে। এসব করতে দরকার গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা।
/ এআর /