বাংলাদেশ ব্যাংক পুরস্কার পেলেন আজিজুর ও মাহবুব
প্রকাশিত : ১২:০৪ এএম, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সোমবার
অর্থনীতিতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ড. আজিজুর রহমান খান এবং ড. মাহবুব হোসেনকে (মরণোত্তর) পুরস্কার দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আজ রোববার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে উভয়ের সহধর্মীনির হাতে পুরস্কার তুলে দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
ড. আজিজুর রহমান খান যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, রিভারসাইডের প্রফেসর এমিরেটাস এবং ড. মাহবুব হোসেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও ব্র্যাকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ছিলেন। ‘বাংলাদেশ ব্যাংক পুরস্কার-২০১৭’সম্মাননা হিসেবে প্রত্যেককে একটি করে স্বর্ণপদক, বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেস্ট এবং নগদ দুই লাখ টাকা দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে দেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরী। সভাপতিত্বর বক্তব্যে গভর্নর ফজলে কবির বাংলাদেশ ব্যাংক পুরস্কার ২০১৭ প্রাপ্ত প্রতিথযশা দুজন অর্থনীতিবিদের জীবন ও কর্মের উপর বক্তব্য তুলে ধরেন। এরপর অর্থমন্ত্রী ড.আজিজুর রহমান খান ও প্রয়াত ড. মাহবুব হোসেনের সহধর্মীনির হাতে স্বর্ণপদক, বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেস্ট ও দুই লাখ করে টাকা পুরস্কার হিসেবে তুলে দেন।
গভর্নর ফজলে কবির বলেন, ড.আজিজুর রহমান এ দেশে প্রান্তিক জনগোষ্ঠির উন্নয়নের জন্য কাজ করে সংগঠন উৎস বাংলাদেশকে সে পুরস্কারের অর্থ দান করেন। ড. রহমান উন্নত ও অনুন্নত অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি, তা বিতরণ ও বাজার ব্যবস্থার সঠিক তথ্য বিভিন্ন মৌলিক দিক আলোকপাত করে বক্তব্য উপস্থাপন করেন। অন্যদিকে ড. মাহবুব হোসেনকে কৃষকদের জীবনমান উন্নয়নে গবেষণার জন্য ভূয়সী প্রসংসা করেন।
প্রধান অতিথি অর্থমন্ত্রী বিশেষভাবে ড. আজিজুর রহমান ও সকল বক্তার ব্যক্তব্যের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি দুজন অর্থনীতিবিদের জীবন ও কর্মের অকুন্ঠ প্রশংসা করে এ পুরস্কার প্রদানের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে বিশেষ ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন পিকেএসএফ এর চেয়ারম্যান ড.কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বক্তব্য রাখেন ও সভার সমাপ্তি ঘোষনা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস.এম. মনিরুজ্জামান। অনুষ্ঠানে প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদ-বুদ্ধিজীবীসহ বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
যে কারণে পুরস্কার দেওয়া হলো: পুরস্কারপ্রাপ্ত ড. আজিজুর রহমান একজন উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ। বর্তমানে তিনি আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, রিভারসাইডের অর্থনীতি বিভাগের এমিরেটাস প্রফেসর হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। উন্নয়ন অর্থনীতিতে বিশেষ করে উন্নয়ন পরিকল্পনা, কৃষিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ও ভূমি সংস্কার এবং আয় বণ্টন ও অসমতা বিষয়ে গবেষণা কর্মে তাঁর অবদান অসামান্য।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর এবং ইংল্যান্ডের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে তিনি বিআইডিএস এর গবেষণা পরিচালক, বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের প্রধান, লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্স এর প্রভাষক, আইএলও’র এশিয়ান এমপ্লয়মেন্ট প্রোগ্রামের পরিচালক এবং বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ইকনমিস্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি আমেরিকান এসোসিয়েশন ফর দ্যা অ্যাডভান্সমেন্ট অব সাইন্সের একজন সম্মানিত ফেলো।
পুরস্কারপ্রাপ্ত ড. মাহবুব হোসেন ছিলেন বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতি গবেষণার পথিকৃৎ। তিনি গ্রামীণ অর্থনীতি ও শিল্প, কৃষিভিত্তিক কাঠামো, ভূমি সংস্কার, আয় বণ্টন, দারিদ্র্য বিমোচন কৃষিতে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, ক্ষুদ্র ঋণের প্রভাব ও প্রান্তিক কৃষকদের জীবনমান উন্নয়নে নিবিড় গবেষণা করে দেশে-বিদেশে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ও ইংল্যান্ডের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে তিনি বিআইডিএস এর মহাপরিচালক, আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠান (ইরি) এর সোস্যাল সাইন্সেস ডিভিশনের অর্থনীতিবিদ ও প্রধান, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ও সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কৃষির উন্নয়নে অবদানের জন্য তিনি ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতি থেকে স্বর্ণপদক লাভ করেন। বরেণ্য এ কৃষি অর্থনীতিবিদ ২০১৬ সালের ৩ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের নেতৃত্বে দেশের প্রথিতযশা চার জন অর্থনীতিবিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি জুরি বোর্ড উল্লিখিত পুরস্কার দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, রিভারসাইডের প্রফেসর এমিরেটাস ড. আজিজুর রহমান খান এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও ব্র্যাকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ড. মাহবুব হোসেন (মরণোত্তর)-কে যৌথভাবে মনোনীত করে।
এর আগে ২০০০ সালে অধ্যাপক রেহমান সোবহান, ২০০৯ সালে ড. নুরুল ইসলাম, ২০১১ সালে প্রফেসর ড. মুশররফ্ হোসেন এবং ২০১৩ সালে অধ্যাপক ড. মোজাফফর আহমদ (মরণোত্তর) এবং ড. স্বদেশ রঞ্জন বোস (মরণোত্তর)-কে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক পুরস্কার’ প্রদান করা হয়।
আরকে//এসি