ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

গ্রন্থমেলায় তারকাদের বই

প্রকাশিত : ১১:১৮ এএম, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ বুধবার | আপডেট: ১১:১৯ এএম, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ বুধবার

আজ একুশে ফেব্রুয়ারি। জমে উঠেছে অমর একুশে বই মেলা। বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মাসজুড়ে আয়োজিত এই বই মেলায় বইপিপাসু মানুষের ভিড় দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে দর্শনার্থী ও লেখক, পাঠক, প্রকাশকদের মিলন মেলায় পরিণত হচ্ছে বই মেলা প্রাঙ্গন।

প্রতিবারের মত এবারও বই মেলাকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে শোবিজ তারকাদের বই। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখে চলা তারকারা তাদের দৈনন্দিন কাজের মাঝেও লেখক সত্তাকে তুলে ধরছেন সাধারণ পাঠকদের সামনে। এবারের বই মেলায় নবীন-প্রবীণ সাহিত্যিকদের পাশাপাশি পাওয়া যাচ্ছে বেশ কয়েকজন বিনোদন জগতের তারকাদের বই। সেইসব বইয়ের খবর নিয়ে তৈরি করা হয়েছে আজকের প্রতিবেদন। প্রতিবেদনটি লিখেছেন- সোহাগ আশরাফ

 

শ্রোতাপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপা। তিন বছর পর নতুন বই নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন তিনি। একুশে গ্রন্থমেলায় নিজের লেখা একটি স্মৃতিচারণমূলক বই প্রকাশ করছেন এই সঙ্গীতশিল্পী। বইটির নাম ‘কাটা ঘুড়ি’। গত দুই বছর ধরে বইটি লিখছেন কনকচাঁপা। বইটিও প্রকাশ করছে অনন্যা প্রকাশনী।

এ প্রসঙ্গে কনকচাঁপা বলেন, ‘প্রতিটি মানুষই একটি দর্শন নিয়ে তার জীবনকে এগিয়ে নেয় সামনের পথে। আমার জীবনের দর্শন আমার বাবা-মা। তাদের সঙ্গে কাটানো মুহূর্তের স্মৃতি উঠে এসেছে কাটা ঘুড়ি বইটিতে।’

বইটির নামকরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মানুষ সময়কে কখনোই ধরে রাখতে পারে না। সময়ের সঙ্গে আমি ঘুড়ির সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছি। ঘুড়ির সুতা হচ্ছে স্মৃতি। সেই স্মৃতি দিয়ে আমি ফেলে আসা সময়কে খুঁজে বেড়াই। তাই এর নামকরণ করেছি কাটা ঘুড়ি।’

কনকচাঁপা গানের পাশাপাশি নিয়মিত লেখালেখি ও ছবি আঁকেন। ২০১৬ সালে ‘দ্বিধার দোলাচল’ নামে তার একক চিত্রপ্রদর্শনী হয়। আর লেখক হিসেবে তিনি আত্মপ্রকাশ করেন ২০১০ সালে। ওই সময় অনন্যা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত ‘স্থবির যাযাবর’ বই। এরপর ‘মুখোমুখি যোদ্ধা’ ও ‘মেঘের ডানায় চড়ে’ নামে আরও দুটি বই প্রকাশ হয় এই গুনি শিল্পীর।

দর্শকপ্রিয় মডেল ও অভিনেত্রী আশনা হাবিব ভাবনা এবারের গ্রন্থমেলার মাধ্যমেই ঔপন্যাসিকের খাতায় নাম লেখালেন। তাম্রলিপি প্রকাশনা থেকে বের হয়েছে তার প্রথম উপন্যাস ‘গুলনেহার’।

এ বিষয়ে ভাবনা জানান, বিষয়টি নিয়ে আমি খুব উচ্ছ্বসিত। প্রথম সিনেমা মুক্তির মতো টেনশন হচ্ছিল। একটি মানবিক গল্পের উপন্যাস লেখার চেষ্টা করেছি। জানি না কতটা পেরেছি। পাঠকের প্রতিক্রিয়া বেশ ভালো পাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, ‘উপন্যাসটির মূল চরিত্র ৮৭ বছরের বৃদ্ধা গুলনেহার। তার স্বপ্ন, প্রেম আর কষ্টের চিত্র পাওয়া যাবে উপন্যাসটিতে।’

এবারের গ্রন্থমেলায় লাক্সতারকা শানারেই দেবী শানুর লেখা তিনটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ পেয়েছে। এরমধ্যে চৈতন্য প্রকাশনী থেকে ‘অসময়ের চিরকুট’, অনন্যা প্রকাশনীর ব্যানারে ‘লাল এপিটাফ’ ও তাম্রলিপি থেকে ‘ত্রিভুজ’ শিরোনামের বইটি আসছে।

এ বিষয়ে শানু বলেন, ‘জানি না আমার কবিতার মান কতটা উন্নত। কিন্তু গতবার আমার কবিতার প্রতি পাঠকের যে আগ্রহ দেখেছি তা আমাকে ভীষণ অনুপ্রাণীত করেছে। তাই এবার সাহস করে তিনটি বই লিখেছি। প্রকাশকরাও আগ্রহ করে বই তিনটি প্রকাশ করছেন। বই তিনটি ইতিমধ্যে সাড়া ফেলছে।’

শানু আরও বলেন, ‘আমার বাবা এ কে সেরাম একজন নামকরা কবি। তাই লেখালেখি আমার রক্তেই ছিল। তাছাড়া নিয়মিত পৃথিবীর বিখ্যাত কবিদের কবিতা পড়ে বড় হয়েছি। স্বপ্ন ছিল একদিন আমিও বাবার মতো ভালো কবিতা লিখব।’

এর আগে একুশে বইমেলায় শানুর কবিতার বই ‘নীল ফড়িংয়ের কাব্য’ প্রকাশ হয়েছে।

অপরদিকে ক্লোজআপ তারকা সাজিয়া সুলতানা পুতুলের প্রথম উপন্যাস ‘একটি মনস্ত্বাত্ত্বিক আত্মহনন ও তার পুতুলকাব্যিক প্রতিবেদন’ প্রকাশ পেয়েছে এবারের বই মেলায়। প্রিয়মুখ প্রকাশনী থেকে প্রকাশ হওয়া এই বইটি তিনি উৎসর্গ করেছেন প্রয়াত লেখক হুমায়ুন আজাদকে।

এ প্রসঙ্গে পুতুল বলেন, ‘হুমায়ুন আজাদের প্রভাব আমার লেখালেখি বা ব্যক্তি জীবনেও আছে। এটি আমার দুর্ভাগ্য যে, তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারিনি। তবুও তাকে আমার লেখা প্রথম উপন্যাসটি উৎসর্গ করতে পেরে ভালো লাগছে।’

পুতুল আরও বলেন, ‘একটি মেয়ের গল্প উঠে আসবে উপন্যাসটিতে। এতে অনেক মেয়ের অভিজ্ঞতা, আমার স্মৃতি- সবই আছে। ভিন্ন অনেক মেয়ের জীবন ও বাস্তবতা বিশ্লেষণ করে এটি লেখা।’

এছাড়া গত দুই বইমেলায় প্রকাশ করেছেন তার দুটি কবিতার বই।

অভিনেতা-উপস্থাপক খন্দকার ইসমাইল এবার লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ কছেন। বই মেলায় নিজের আত্মজীবনী প্রকাশ করছেন তিনি। ‘আমার স্মৃতি কইবে কথা’ শীর্ষক বইটি প্রকাশ পেয়েছে শ্রাবণ প্রকাশনী থেকে। এ বইয়ে তিনি নিজের ব্যক্তিজীবন ও ক্যারিয়ারের দীর্ঘ সময়ের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি তুলে ধরেছেন।

এ সম্পর্কে খন্দকার ইসমাইল বলেন, ‘আমার ২৬ বছরের ক্যারিয়ার ও ব্যক্তিজীবন নিয়ে বইটি লিখেছি। অনেকে ভাবতে পারেন, এত তাড়াতাড়ি আত্মজীবনী কেন? মানুষ ক’দিন বাঁচে সেটা কেউ বলতে পারেন না। আমার কাছে মনে হয়েছে এখনই বইটি লেখা উচিৎ, তাই লিখেছি। বইটিতে আমার মিডিয়ার কাজের পাশাপাশি ব্যক্তিজীবনের নানা অজানা তথ্য পাঠক জানতে পারবেন।’

অপরদিকে আরও বেশ কয়েকজন বিখ্যাত তারকার বই এবারের গ্রন্থমেলায় প্রকাশ পেয়েছে। এর মধ্যে নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদের লেখা নাটক সমগ্র-১ ও ২, রামেন্দু মজুমদারের থিয়েটার বর্ষ-২-৪, হালাতুর প্রত্যাবর্তন, জনপ্রিয় অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদারের পাথরের স্যুপ ও ফড়িং আর পিঁপড়া বইগুলো পাওয়া যাচ্ছে থিয়েটারের স্টলে।

জনপ্রিয় অভিনেতা আবুল হায়াতের চারটি বই পাওয়া যাচ্ছে এবারের বই মেলায়। অনন্যা প্রকাশনী থেকে বেরিয়েছে ‘এসো নীপবনে’, ‘ঢাকামি ও জীবন খাতার ফুটনোট’। এছাড়া শব্দ শিল্প প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে ‘মিতুর গল্প’ শিরোনামের একটি বই। তার চারটি বই এরই প্রচ্ছদ করেছেন লেখকের মেয়ে অভিনেত্রী বিপাশা হায়াত।

অভিনেতা ও বিজ্ঞাপন নির্মাতা আফজাল হোসেনের পুরোনো চারটি উপন্যাস পাওয়া যাবে এক মলাটে। নাম দেওয়া হয়েছে ‘চার দরজা’। এছাড়া নতুন কিছু গল্প নিয়ে প্রকাশ পেয়েছে ‘গল্পগ্রহন্থ ‘জাহাঙ্গীর বাদশার ঘোড়া’। দুটি বই ই প্রকাশিত হয়েছে অনন্যা প্রকাশনী থেকে।

এছাড়া অনন্যা প্রকাশনী থেকে গণসংগীতশিল্পী ফকির আলমগীরের চারটি বই প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে ‘সুরমা নদীর গাঙচিল’ প্রকাশিত হয়েছে, বাকি তিনটি প্রকাশের অপেক্ষায় আছে। এগুলো হচ্ছে-স্মৃতি কাব্যে প্রিয়মুখ, ‘আবহমান বাংলার লোকসংগীত’ স্মৃতির আলাপনে মুক্তিযুদ্ধ এবং মিজান পাবলিশার্স থেকে বের হচ্ছে স্মৃতির আয়নায় নামের একটি বই।

তাম্রলিপি থেকে প্রকাশ পেয়েছে নির্মাতা অনিমেষ আইচের উপন্যাস ‘শহরের বারে একদল মাতাল’।

আন্ডারওয়ার্ল্ড ক্রাইম থ্রিলার কিংবা কাইন্ড অব রোমান্টিক থ্রিলার নিয়ে লিখেছেন প্রখ্যাত গীতিকবি লেখক লতিফুল ইসলাম শিবলী। ‘দখল’ শিরোনামের এই বইটি নালন্দা প্রকাশনী থেকে এবারের বইমেলায় এসেছে।

লেখক লতিফুল ইসলাম শিবলী বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, ভালোই সাড়া পাচ্ছি। গত মেলায় আসা ‘দারবিশ’ থেকেও এই বইয়ের বিক্রি বেশি।’

একই ভাবে এবিসি রেডিওর জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘কুয়াশা’র সঞ্চালক শারমীনের গ্রাফিকস নভেল ডার্করুম প্রকাশ পেয়েছে এবারের বই মেলায়।

এসএ/