ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ২০ ১৪৩১

শিক্ষানীতি ও ব্যবস্থার সংস্কার দরকার

অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক

প্রকাশিত : ১১:৫৯ এএম, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১১:০৭ পিএম, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ বৃহস্পতিবার

বাংলাদেশে শিক্ষানীতি ও শিক্ষা ব্যবস্থার অমূল সংস্কার দরকার। এর জন্য প্রথম পর্যায়ে দরকার সর্বজনীন কল্যাণে বিবেকবান চিন্তাশীল ব্যক্তিদের দূরদর্শী চিন্তা ভাবনা, আলোচনা-সমালোচনা ও বিচার-বিবেচনা। শিক্ষানীতি ও শিক্ষা ব্যবস্থা কেমন হওয়া উচিত, সে সম্পর্কে ধারণা যদি ঠিক হয়, তাহলে সেই লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে চেষ্টা চালালে সমাধানযোগ্য সব সমস্যারই সমাধান করা যাবে। লক্ষ্য ও যাত্রা পথ সম্পর্কে স্পস্ট ধারণা নিয়ে এগোতে হবে।

উন্নত প্রযুক্তি ও শ্রমশক্তির কল্যাণে উৎপাদন ও সম্পদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু নৈতিক চেতনা নিম্নগামী হওয়ার ফলে সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এবং মানুষ মানবিক গুণাবলি হারিয়ে চলছে। এ অবস্থায় জাতীয় শিক্ষানীতি এ শিক্ষাব্যবস্থার পাশাপাশি রাষ্ট্রের অন্য সব ব্যবস্থারও সংস্কার দরকার।

অভীষ্ট সংস্কারের জন্য দীর্ঘকালের প্রচেষ্টা লাগবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও লক্ষ্য আর কায়েমি স্বার্থবাদীদের দৃষ্টি ভঙ্গি ও লক্ষ্য এক নয়। আমরা পরিবর্তন চাই সর্বজনীন কল্যাণে। কায়েমি-স্বার্থবাদ যাদের চালিকা শক্তি, তাদের সঙ্গে সর্বজনীন কল্যাণবোধ যাদের চালিকা শক্তি, তাদের বিরোধ চিরকালের। সর্বজনীন কল্যাণে, অশুভ বুদ্বিকে দমন করে,শুভবুদ্বি অবলম্বন করে এগোতে হবে।

রাষ্ট্র ব্যবস্থায় ও শিক্ষাক্ষেত্রে যে অবস্থা বিরাজ করছে, তাতে সহজে এর উন্নতি সাধন সম্ভব হবে না। অভীষ্ট নির্ণয়ের অভীষ্ট অর্জনের জন্য যাঁরা কাজ করবেন, তাঁদের সঙ্ঘবদ্ধ দূরদর্শী ধারাবাহিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। অগ্রাধিকার ঠিক করে পর্যায়ক্রমে এগোতে হবে। প্রথম পর্যায়ের কাজের জন্য নিম্নোক্ত বিষয়গুলোকে কর্মসূচিভুক্ত করা যেতে পারে:

১. প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণির পরিবর্তে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত রেখে এর মান উন্নয়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষা হচ্ছে পরবর্তী সকল শিক্ষার ভিত্তি। পঞ্চম শ্রেণির ও অষ্টম শ্রেণির পাবলিক পরীক্ষা বাতিল করতে হবে। স্কুল থেকে প্রাথমিক পিএসসি ও নিম্ন মাধ্যমিক জেএসসি শিক্ষা সমাপনের সার্টিফিকেট দেওয়া হবে এবং এগুলোর প্রতি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি থাকবে।

পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে পাবলিক পরীক্ষা প্রবর্তনের ফলে শিক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, এবং কোচিং সেন্টার, গাইড বুক ইত্যাদির ব্যবসাতে স্বর্ণযুগ দেখা দিয়েছে। এগুলো বাতিল করা হলে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা এবং দেশি বিদেশি যেসব শক্তি এ ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে তারা পরিবর্তনে বাধা দেবে। জনমত প্রবল হলে পরিবর্তনে সরকার রাজি হবে।

২. কথিত সৃজনশীল পরীক্ষা পদ্বতি পরিবর্তন করে এমন পদ্বতি প্রবর্তন করতে হবে যা শিক্ষার্থীদের মনে পাঠানুরাগ, অনুসন্ধিৎসা, জ্ঞানস্পৃহা,স্বাজাত্যবোধ, সামাজিক সম্প্রতি দেশপ্রেম, সুনাগরিকত্ববোধ ও উন্নত জীবনের আকাঙ্ক্ষা জাগাবে। পরীক্ষার জনন্য মূলত বর্ণানামূলক উত্তরের পদ্ধতিকে নবায়িত ও বিকশিত করে কার্যকর করতে হবে। শিক্ষার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের আনন্দের যোগ ঘটাতে হবে। বর্তমানে শিশু কিশোররা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করে শিক্ষার্থী হিসেবে, কিন্তু তার পরেই তারা বইয়ের বোঝা পিঠে নিয়ে পরীক্ষার্থী হয়ে যায়, শিক্ষার্থী আর থাকতে পারে না। এই অবস্থা পরিবর্তন করতে হবে। সারা দেশের পাবলিক পরীক্ষার ফল এক কেন্দ্র থেকে প্রকাশ করা এবং ফল প্রকাশের সময় শিক্ষার পরীক্ষা সর্বস্ব ধারণা প্রচার করা বন্ধ করতে হবে।

রাষ্ট্রীয় সংবিধান ও জাতীয় শিক্ষা নীতির আওতায় শিক্ষা বোর্ডগুলোকে স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে। বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল, ইউনেস্কো ও ইউনিসেফের অন্ধ অনুসারীরা পরীক্ষা পদ্ধতির অভিপ্রেত পরিবর্তন সাধনে বাধা দেব।

সাম্রাজ্যবাদীরা ও তাদের অনুসারীরা দুর্বল জাতিগুলোতে শিক্ষার উন্নতি চায় না- তারা কেবল ভালো সার্টিফিকেট দিয়ে শিক্ষার্থীদের ও অভিভাবকদের সন্তুষ্ট রাখার ব্যবস্থা চায়। জ্ঞানেই শক্তি, জ্ঞানেই কল্যাণ বৃহৎ শক্তিবর্গ এটা বোঝে, এবং জ্ঞানকে তারা কেবল নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চায়। বাংলাদেশকে চলতে হবে জাতীয় ঐক্য অবলম্বন করে, জাতীয়তাবাদ ও তার সম্পূরক আন্তর্জাতিকতাবাদের চেতনা নিয়ে,সাম্রাজ্যবাদী নীতি পরিহার করে।

৩. ইংলিশ ভার্সন বিলুপ্ত করতে হবে। যারা সন্তানদের যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি রাষ্ট্রে নাগরিক করার জন্য, কিংবা বড় চাকুরি পাওয়ার জন্য ইংরেজি মাধ্যমে পড়াতে চান, তাঁদের জন্য ব্রিটিশ কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ও স্থানীয় ব্রিটিশ কাউন্সিলের মাধ্যমে ও-লেভেল, এ-লেভেল চালাচ্ছে। তা ছাড়াও আছে বিদেশী সরকার দ্বারা পরিচালিত ইংরেজি মাধ্যমের আরো কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সেসবের পাশে ইংলিশ ভার্সনের দরকার নেই। ইংলিশ ভার্সনের জন্য যে অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে তার দ্বারা রাষ্ট্র, জাতি ও জনগণের কোনো কল্যাণ হচ্ছে না।

বাংলাদেশে যাঁরা আজকাল কেবল বিশ্বমান অর্জনের কথা বলেন তাঁরা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় অস্তিত্ব ও জনজীবনের অবস্থার কথা একটুও ভাবেন না। যাঁরা দ্বৈত নাগরিক, যাঁদের স্ত্রী অথবা স্বামী অথবা সন্তান দ্বৈত নাগরিক কিংবা বিদেশী নাগরিক, তাঁরা যাতে বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপসচিব, থেকে সচিব, জর্জকোর্ট, থেকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ইত্যাদি রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হতে না পারেন, সংবিধানে তার বিধান রাখতে হবে। শিক্ষানীতির উদ্দেশ্য হবে বাংলাদেশের ভূভাগে উন্নত জনজীবন, উন্নত জাতি ও শক্তিশালী রাষ্ট্র গড়ে তোলা। জাতি ও রাষ্ট্র গঠনের মূলনীতি হবে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য ও সর্বজনীন কল্যাণ।

৪.প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে বাংলা ভাষা শেখার ব্যবস্থাকে যথাসম্ভব উন্নত করতে হবে।সারা দেশে সকল শিশুকে বিদেশি ভাষা শেখানোর দরকার নেই।জাতীয় চাহিদা অনুযায়ী সংখ্যা নির্ধারণ করে নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রতিষ্ঠানে ইংরেজি ও আরো কয়েকটি বিদেশি ভাষা ভালো করে শেখানোর ব্যবস্থা করতে হবে। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া,পৃথিবীর উন্নত ও অনুন্নত কোনো রাষ্ট্রেই,সব শিশুকে বিদেশি ভাষা শেখানো হয় না। বর্তমানে মূলধারার (এনসিটিবি যে ধারার পাঠ্যপুস্তক জোগান দেয়) বাংলা মাধ্যমে ইংরেজি শেখানোর যে ব্যবস্থা আছে,তার পুনর্গঠন দরকার। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অন্তত একটি বিদেশি ভাষা সকল শিক্ষার্থীকে ভালো করে শিখতে হবে।বিদেশি ভাষার জ্ঞান দিয়ে বাংলা ভাষাকে ও বাংলা ভাষার জ্ঞানভান্ডারকে সমৃদ্ব করতে হবে।

৫. প্রাথমিক শিক্ষা সকলকেই গ্রহণ করতে হবে।বাস্তব অবস্থা অনুযায়ী সারাদেশে

ক) প্রাথমিক পর্যায়ের (পঞ্চম শ্রেণি) পরে একটি শাখায়,এবং

খ) নিম্ন মাধ্যমিক পর্যায়ের (অষ্টম শ্রেণি) পরে অন্য একটি শাখায়

পেশামূলক শিক্ষা প্রবর্তন করতে হবে।এটা করা গেলে ঝরে পড়ার সমস্যার সমাধান হবে।পেশাগত শিক্ষার এই দুই ধারার পাঠ্যসূচিতেই পেশামূলক বিষয়গুলোর সঙ্গে বাংলা ভাষা, জাতীয় ইতিহাস,পৌরনীতি ও নীতিশিক্ষাকে আবশ্যিক বিষয় রুপে স্থান দিতে হবে। পেশামূলক শিক্ষার এই দুই ধারার বাইরে মূলধারার বাংলা মাধ্যমে নবম ও দশম শ্রণিতে বিজ্ঞান,বাণিজ্য ও মানবিক শাখাকে একীভূত করে এক ধারায় পরিণত করতে হবে।উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে মানববিদ্যা,বিজ্ঞান ও বাণিজ্য এই তিন শাখা থাকবে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে জাতীয় ইতিহাস, পৌরনীতি ও নীতিশিক্ষাকে বাধ্যতামূলক বিষয়রুপে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। মূলধারার বাংলা মাধ্যমের প্রাথমিক,মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যসূচি, পাঠক্রম ও পাঠ্যপুস্তক উন্নত করতে হবে।

মানববিদ্যা,বিজ্ঞান,বাণিজ্য, চিকিৎসা বিজ্ঞান, কৃষিবিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি ইত্যাদি সকল ধারার উচ্চশিক্ষার ভিত্তি রুপে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার তিন শাখার পাঠ্যসূচিকে পুনর্গঠিত করতে হবে।

সারা দেশে গরিবদের শিক্ষার জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে পর্যাপ্ত সংখ্যক বৃত্তির ব্যবস্থা করতে হবে।পরীক্ষার ফল ও অন্যান্য দিক বিচারে মেধাবি শিক্ষার্থীদের পুরস্কৃত করতে হবে।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে বর্তমানে বাংলা মাধ্যমের মূলধারা খুব বেশি এুটিপূর্ণ ও অবহেলিত। মূলধারার বাংলা মাধ্যমের শিক্ষাকে উন্নত করা হলে তার পাশে মাদ্রাসা ধারাও উন্নতিতে আগ্রহী হবে।মূলধারার বাংলা মাধ্যমকে উন্নত করা হচ্ছে না বলেই গোটা শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে সমস্যা ক্রমাগত বাড়ছে।

৬. মাদ্রাসার বেলায় মাদ্রাসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মহল সমূহের মতামতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।যে অবস্থা চলছে তাতে বিরোধমূলক নীতি পরিহার করে, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানকে অগ্রাধিকার দিয়ে উন্নতির নীতি গ্রহণ করতে হবে। সব কিছু করতে হবে রাষ্ট্রের সংবিধানের আওতায় থেকে।

৭.বিশ্ববিদ্যালয়ে ও কলেজে সেমিস্টারের মেয়াদ চার মাস কিংবা ছয় মাসের পরিবর্তে এক বছর করতে হবে।পরীক্ষার ফল গ্রেড পয়েন্টে প্রকাশ করা অব্যাহত রাখতে হবে,এবং এই পদ্বতিকে উন্নত করতে হবে। গবেষণায় গবেষকের স্বাধীনতা যতটা সম্ভব বাড়াতে হবে। উচ্চ শিক্ষার বিশ বছর মেয়াদি কৌশলপএের স্থলে রাষ্ট্রীয় অর্থে, জাতীয়তাবাদ ও তার সম্পূরক আন্তর্জাতিকতাবাদ অবলম্বন করে, নতুন উচ্চশিক্ষানীতি প্রবর্তন করতে হবে। গোটা শিক্ষাব্যবস্থার জন্য বাজেটে অর্থ বরাদ্দ বাড়াতে হবে।

৮.জাতীয়তাবাদ ও তার সম্পূরক আন্তর্জাতিকতাবাদ ভিত্তিক কর্মনীতি নিয়ে গ্রেকো- রোমান -ইউরো-আমেরিকান সভ্যতার প্রগতিশীল মহান বিষয়াদিকে -দর্শন, বিজ্ঞান ,ইতিহাস,শিল্প-সাহিত্য,প্রযুক্তি,গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও তার সম্পূরক আন্তর্জাতিকতাবাদ ইত্যাদিকে- আমাদের প্রয়োজন ও সামর্থ্য অনুযায়ী যথাসম্ভব গ্রহণ করতে হবে,আর তাদের উপনিবেশবাদী, সাম্রাজ্যবাদী ও ফ্যাসিবাদী বিষয়াদিককে যথাসম্ভব পরিহার করে চলতে হবে। বিশ্বায়নের কর্তৃপক্ষ ( যুক্তরাষ্টের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়, বিশ্বব্যাংক,আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল,ন্যাটো,জি- সেভেন, বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা,জাতিসংঘ) ও তার সাম্রাজ্যবাদী চরিএ সম্পর্কে সচেতন থেকে কাজ করতে হবে। বাইর থেকে আমাদের গ্রহণ করতে হবে নিজেদের বিবেচনায়,নিজেদের সত্তায় থেকে - নিজেদের সত্তাকে সমৃদ্ব করার জন্য।শিক্ষাক্ষেএে এসব বিষয়ে পরিপূর্ণ সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে।

৯. বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ব্যবস্থার সম্ভবপর সকল পর্যায়ে রাষ্ট্রভাষা রুপে প্রতিষ্ঠা করার, উচ্চশিক্ষা,গবেষণা, বিচারব্যবস্থা ও ব্যাংকিং এ বাংলা প্রচলনের, বাংলা ভাষায় জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার এবং বাংলা ভাষার সর্বাঙ্গীণ উন্নিতির লক্ষ্যে দূরদর্শী জাতীয় পরিকল্পনা ঘোষণা করে কাজ করতে হবে।উচ্চশিক্ষায়,গবেষণায়,বিচারব্যবস্থায়,ব্যাংকিং ও জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় বাংলা ভাষা অবহেলিত বলেই বর্তমান পর্যায়ে বাংলা ভাষা গুরুত্ব বেশি দিতে হবে।বাংলা ভাষা, ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীসমূহের ভাষা, ধর্মীয় ভাষায় ও বিদেশি ভাষা ইত্যাদি বিবেচনা করে সুষ্ঠু জাতীয় ভাষানীতি অবলম্বন করতে হবে।জাতীয় পর্যায়ে জনজীবনের বৈচিত্র্য ও ঐক্য দুটোতেই যথোচিত গুরুত্ব দিয়ে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের ও সকলের উন্নতির নীতি অবলম্বন করতে হবে।এসব নিয়ে চিন্তায় ও মতপ্রকাশে বিবেকবান চিন্তাশীল ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।

১০.শিক্ষানীতি ও শিক্ষাব্যবস্থাকে এমনভাবে পুনর্গঠিত করতে হবে যাতে

ক)  সারা দেশে বিভিন্ন ধারার পেশামূলক শিক্ষার মাধ্যমে বৃহত্তম- সংখ্যক যোগ্য,দক্ষ,উৎপাদনক্ষম,উন্নত- চরিএ বল সম্পন্ন কর্মী সৃষ্টি হয়,

খ) শিক্ষানীতি ও শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে শক্তিমান রাষ্ট্ররুপে বাংলাদেশকে গড়ে তোলার ও ভালোভাবে পরিচালনা করার উপযোগী শিক্ষিত লোক তৈরি হয়,অধিকন্তু,

গ) দর্শন,বিজ্ঞান,ইতিহাস,শিল্প- সাহিত্য, প্রযুক্তি ইত্যাদি ক্ষেএে প্রকৃত জ্ঞানী  ও সৃষ্টিশীল ব্যক্তিদের আত্নপ্রকাশের সুযোগ সৃষ্টি হয়।

আরো অনেক গুরুতর বিষয় আছে যেগুলোকে পর্যায়ক্রমে কর্মসূচিভুক্ত করে নিয়ে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশের সামনে আছে অজস্র সমস্যার মধ্যেও মহান সব সম্ভাবনা।পর্যায়ক্রমে প্রতিটি সম্ভাবনার বাস্তবায়ন সম্ভব। জনসাধারণকে জাগতে হবে,ঘুমিয়ে থাকলে কোনো সম্ভাবনাই বাস্তবায়িত হবে না।কর্মসূচি গ্রহণ করে তার বাস্তবায়নের জন্য পর্যায়ক্রমে সুস্পষ্ট লক্ষ্য ও পরিচ্ছন্ন কর্মসূচি নিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে।আন্দোলন গড়ে ওঠার আগেই সরকার যদি সংস্কার পরিকল্পনা গ্রহণ করে এবং তার বাস্তবায়ন আরম্ভ করে,তাহলে তা সরকার ও জনগণের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র রুপে গড়ে তুলতে হবে। তার জন্য শিক্ষানীতি ও শিক্ষাব্যবস্থাকে উন্নতিশীল রাখতে হবে।গোটা শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ দরকার।

যদি কোনো বিশ্বসরকার গঠিত হয় তাহলে তার রুপ ও প্রকৃতি হওয়া উচিত আন্তরাষ্টিক - ফেডারেল, এবং তাতে জাতিরাষ্ট্র, জাতি,জাতীয় সংস্কৃতি ও জাতীয় ভাষাকে বিকাশশীল রাখতে হবে। বিশ্বসরকারের কাছে খুব কম বিষয়েরই ক্ষমতা থাকবে,জাতীয় সরকারের কাছেই থাকবে অভ্যন্তরীণ সব ক্ষমতা। বিশ্বসরকার হবে জাতীয় সরকার সমূহের ঊর্ধ্বতম  এক সরকার। বিশ্বসরকারের কাছে একটি সেনাবাহিনী রেখে সকল রাষ্ট্রের সেনাবাহিনী বিলুপ্ত করা যাবে।এ অবস্থায় বাংলাদেশকে সর্বজনীন গণতন্ত্র অবলম্বন করে জনগণের স্বাধীন প্রগতিশীল গণরাষ্ট্র রুপে গড়ে তোলা আমাদের কেন্দ্রীয় কর্তব্য। জাতীয়তাবাদ ও তা সম্পূরক আন্তর্জাতিকতাবাদ অবলম্বন করে বিশ্বব্যবস্থাকে পুনর্গঠিত করতে হবে।সেই লক্ষ্যে পৃথিবীর সকল রাষ্ট্রে, জনজীবনের প্রগতিশীল সমৃদ্বিমান ভবিষ্যত সম্পর্কে পরিচ্ছন্ন ধারণা নিয়ে নতুন কার্যক্রম আরম্ভ করা দরকার।সকল রাষ্ট্রেই শিক্ষানীতি ও শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার দরকার।

লেখক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক।

/ এআর /