ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

শিশুদের কলরবে মুখরিত বইমেলা

প্রকাশিত : ০৫:৫৪ পিএম, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ শুক্রবার

শিশুদের কলরবে মুখরিত বইমেলার শেষ ছুটির দিনের শিশুপ্রহর। অমর একুশে গ্রন্থমেলার আজ ছিলো ২৩তম দিন এবং ৬ষ্ঠ শিশুপ্রহর। মাসব্যাপী মেলার প্রতি শুক্র ও শনিবার থাকে শিশু প্রহর। আজ শুক্রবার সকালে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, শিশুপ্রহরে বাংলা একাডেমির চত্বরজুড়ে ছোটাছুটি, মা-বাবার হাত ধরে স্টলে স্টলে বই দেখে, বই কিনে, নতুন বই বুকে জড়িয়ে বাড়ি ফিরেছে তারা। মেলাই এই খুদে পাঠকরা খুঁজতে এসেছিল তাদের পছন্দের নতুন বই।

বইমেলা পরিণত হয়েছিল শিশুদের আনন্দ মেলায়। সকাল ১১ টা থেকেই শিশুরা ভিড় করে নির্ধারিত শিশু কর্নারে। সকালেই মেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় শিশু-কিশোরদের চূড়ান্ত সঙ্গীত প্রতিযোগিতা। কোলের ছোট্ট শিশু আর স্কুল পড়ুয়া সন্তানসহ একুশের চেতনাদীপ্ত বাবা-মা সমবেত হয়েছিল এখানে। বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত চলে শিশু প্রহর।

সকালের স্নিগ্ধ রোদে নানা বয়সের ছেলে-মেয়ে এসে ভিড় করেছিল বটতলার নজরুল মঞ্চের সামনে। বই কেনার পাশাপাশি তারা ঘুরে বেড়িয়েছে পুরো চত্বর। দল বেঁধে এসেছিল সাদা টি শার্ট পরা বেশ কয়েকজন শিশু-কিশোর। সঙ্গে ছিলেন তাদের শিক্ষক। তিনি বলেন, “আমি `স্পর্শ` নামে একটি বেসরকারি সংস্থার হয়ে কাজ করি। এখানে যাদের দেখছেন তারা দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত শিশু। আমরা তাদের পছন্দ অনুযায়ী প্রত্যেককে দু’শ টাকার করে বই কিনে দেব।“

৮ থেকে ১২ বছরের এই ছেলে-মেয়েদের দলের কাছে মেলায় ঘুরে বেড়ানোর অনুভূতির কথা জানতে চাইলে সবাইকে খুব উল্লসিত দেখা যায়। অনেক দিন থেকে ঠিক করে রাখা বইগুলো কিনতে পেরে ওদের আনন্দ চোখে-মুখে ঠিকরে পড়ছিল। ওরা এসেছে মিরপুর পল্লবীর কসমস স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে। তাদের শিক্ষক জানালেন, চতুর্থ থেকে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের মেলায় আসতে উদ্বুদ্ধ করেছেন তারা। বই কিনে এদের অনেকেই প্রাঙ্গণে ঘুরে বেড়াচ্ছিল, ছুটাছুটি করছিল নির্ভাবনায়। আর ভিড় করছিল আইসক্রিমের দোকানে। মেলার প্রকৃত আকর্ষণই ছিল শিশু-কিশোরদের বাঁধভাঙ্গা আনন্দের হিল্লোল।

স্কুলের নানা বয়সী ছেলে-মেয়েরা নানা রঙের ইউনিফর্ম পরে হেঁটে বেড়াচ্ছিল, বই কিনছিল তাদের আপন খেয়ালে। স্টলেই ছিল বাংলা বইয়ের সমাহার। স্টলে স্টলে ছিল শিশুদের বই, কিশোরদের বই। সর্বোপরি চিরায়ত সুকুমার, শিবরাম। তবে দুই-একটি স্টলে বিক্রি হচ্ছিল শিশুদের জন্য ইংরেজি বইও। ওয়ার্ল্ড অব চিলড্রেন`স বুকস ও বেবি টিচার নামের স্টলে গ্রন্থমেলার নীতিমালা লঙ্ঘন করে বিক্রি হচ্ছে ইংরেজি বই।

শিশু কর্নারে শুধু বাংলাভাষার বই বিক্রেতা `আরো প্রকাশনী`র ম্যানেজার জাভেদ শেখ বলেন, “একুশে বই মেলা বাংলা ভাষার মেলা। অনেক বাবা-মা তাদের ইংরেজি মাধ্যমে পড়া সন্তানদের চাহিদা অনুযায়ী যখন ওইসব বিদেশি ভাষা-সংস্কৃতির বই আমাদের কাছে চান, আমি তাদের বলি এই মেলা আপনার জন্য নয়। আমাদের এখানকার বইগুলোকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা প্রয়োজন। পশ্চিমা বিশ্বের বইয়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে আমাদের বইয়ের আকার ও রঙ্গে নতুনত্ব আনতে হবে। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির এই মেলায় নীতিমালা বাহির্ভূত বিদেশি ভাষা-সংস্কৃতির বইয়ের বিক্রি ভালো হলেও, বিষয়টি নিঃসন্দেহে একুশের চেতনাপরিপন্থী।”

মেলাতে ঘুরতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী আনোয়ার বলেন, ঢাকাতে শিশুর মানসিক বিকাশে তেমন জায়গা নেই। যে কারণে যতটুকু সু্যোগ পেয়েছি সেটি হাত ছাড়া করতে চাই না। সে কারণে সন্তানের আনন্দ দিতে মেলাতে নিয়ে আসছি।

বিকাল ঠিক চারটায় মূল মঞ্চে আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি` অমর একুশের গান বাজতে বাজতে শুরু হয় আলোচনা অনুষ্ঠান।

টিকে