ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

বুলডোজার দিয়ে নির্যাতনের প্রমাণ লুকাচ্ছে মিয়ানমার

প্রকাশিত : ০৬:০৫ পিএম, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ শুক্রবার | আপডেট: ০৭:৪২ পিএম, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ শুক্রবার

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর হওয়া নির্যাতনের প্রমাণ লুকাতে বুলডোজার ব্যবহার করছে দেশটির সরকার। বুলডোজার ব্যবহার করে রোহিঙ্গা গ্রামগুলোকে গুড়িয়ে দিচ্ছে তারা। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) এর বরাত দিয়ে বার্তাসংস্থা এপি এবং রয়টার্সের  এমন খবর প্রকাশ করেছে।

সংবাদ সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর থেকে রোহিঙ্গাদের ওপর সরকারি নিরাপত্তাবাহিনীগুলো নির্যাতন চালিয়ে আসছে। এসময় খুন, ধর্ষণের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়। সম্প্রতি সেসব আলামত নষ্ট করতেই এসব এলাকায় বুলডোজার ব্যবহার করছে দেশটির সরকার।

যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো ভিত্তিক ডিজিটাল গ্লোবের তোলা স্যাটেলাইট চিত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এপি (অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস) আজ শুক্রবার জানায়, স্যাটেলাইট চিত্র থেকে দেখা যাচ্ছে যে, প্রায় ডজনখানেক গ্রামের ওপর দিয়ে বুলডোজার চালাচ্ছে মিয়ানমার। প্রায় ৫০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধ বিশিষ্ট অঞ্চলের স্থাপনা বুলডোজার দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এপি এবং রয়টার্সকে তদন্তে সাহায্য করা আরাকান প্রজেক্ট নামক একটি সংগঠন জানায় যে, এসব গ্রামে থাকা গণকবরগুলোই মূলত মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হচ্ছে। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ফুটেজও তারা রয়টার্সকে দিয়েছে বলেও দাবি করে।

সংগঠানটির পরিচালক ক্রিস লেওয়া গার্ডিয়ানকে বলেন, “এখন পর্যন্ত আমরা বড় ধরনের দুইটি গণকবরের সন্ধান গণমাধ্যমে আসতে দেখেছি। তবে গত বৃহস্পতিবার যে গণকবরের ওপর বুলডোজার চালানো হয়, যার ভিডিও আমরা পেয়েছি, সেটি ঐ দুইটি গণকবরের কোনটির নয়। তার মানে মিয়ানমারে হয়তো এমন আরও গণকবর আছে। আর মানবতা বিরোধী এসব অপরাধের তথ্য প্রমাণ লুকাতেই এসব করছে মিয়ানমার”।

তবে এসব বুলডোজার ব্যবহার সরাসরিভাবে সরকার পরিচালনা করছে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, “একটি ব্যক্তি মালিকানার প্রতিষ্ঠান এসব কাজ দেখভাল করছে। তবে তারা এই রাখাইন অঞ্চলের নয়। তারা কেন্দ্রীয় মিয়ানমারের একটি প্রতিষ্ঠান। আর এতে বিষয়টি স্পষ্ট যে, মিয়ানমার সরকারের আদেশেই তারা এসব করছে”।

সম্প্রতি বাংলাদেশে শরণার্থী শিবিরে থাকা এক রোহিঙ্গা নারী জুবাইরা এপি’কে জানান যে, তিনি রাখাইন রাজ্যের বনে জঙ্গলে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে আগুন দেওয়া নিজের বাড়িতে ফিরে যান তিনি। কিন্তু তিনি সেখানে পোড়া বাড়িটাও দেখতে পান না। তার জবানিতে, “কিছুই নেই সেখানে। এমনকি একটা গাছও না। তারা বুলডোজার দিয়ে সব নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। আমি আমার এলাকাই চিনতে পারতেছিলাম না”।

তবে বরাবরের মতই নিজেদের দিকে আসা সকল অভিযোগের মতই এই অভিযোগটিও অস্বীকার করেছে দেশটির সরকার। সরকারের একটি সূত্রের দাবি এই যে, সেসব অঞ্চলকে নতুন করে গড়ে তুলতেই কাজ করছে মিয়ানমার।

সূত্র: এপি/বিজনেস ইনসাইডার

এসএইচএস/টিকে