ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৮ ১৪৩১

ঢাবিতে বৈদেশিক স্মৃতিস্তম্ভ ও স্থাপনা

প্রকাশিত : ১২:৫৩ পিএম, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ শনিবার | আপডেট: ১২:১১ পিএম, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ বুধবার

আধুনিক বাংলাদেশের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। ১৯২১ সালে ইংরেজ শাসনামলে স্হাপিত এ বিশ্ববিদ্যালয়টি বঙ্গভঙ্গের সময় থেকে পূর্ববঙ্গে মুসলিম সমাজে শুরু হওয়া নবজাগরণের ফল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ব্রিটিশদের বিদায়সহ ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ এই তিন দেশ সৃষ্টির ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে আছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। ৬০০ একর জমিতে গড়ে ওঠা সবুজে ঘেরা বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিভিন্ন ভাস্কর্য, সমাধিসৌধ আর নানা রকম ঐতিহাসিক নিদর্শন।

টিএসসি-এর গ্রীক সমাধি!

টিএসসি ভিতরে সবুজ মাঠের দক্ষিণ কোণায় অবস্থিত এ সমাধিটি। হলুদ রঙের এ সমাধি সৌধটি দেখতে চতুষ্কোণ আকৃতির কুটিরের মতো। ভিতরে প্রবেশের পথ রয়েছে পূর্ব দিকে। চারদিকে লোহার গ্রিল দিয়ে আটকানো এটি। ভিতরে প্রবেশের দরজার ওপর গ্রিক ভাষায় লেখা রয়েছে যার বাংলা অনুবাদ- `তারাই আশীর্বাদপ্রাপ্ত যারা সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক নির্বাচিত হয়েছে মৃত্যুর জন্য।` ভিতরের দেওয়ালে রয়েছে কালো রঙের ৯টি পাথর বা শিলালিপি। এর পাঁচটি গ্রিক এবং চারটিতে ইংরেজি ভাষায় লেখা। অযত্ন-অবহেলায় অনেকটা বিবর্ণ আকার ধারণ করেছে এ সৌধটি। দেওয়ালের কোথাও কোথাও প্লাস্টার খসে পড়েছে। সর্বশেষ ১৯৯৭ সালে গ্রিক হাইকমিশনের অর্থায়নে সংস্কার করা হয়েছিল এটি। টিএসসি চত্বরে অবস্থিত এই গ্রীক স্মৃতিসৌধটি সেইন্ট টমাস গির্জার যাজক জে এম ম্যাকডোনাল্ডের উদ্যোগে নির্মিত হয়েছিল।

এই সমাধিসৌধকে ইতিহাসবিদরা বাংলাদেশে গ্রিকদের শেষ স্মৃতিচিহ্ন বলে মনে করেন। সমাধিসৌধের সামনে কোন লিখিত বিবরণী না থাকায় এর ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা নেই তেমন কারোর। কারো মতে এটি গ্রিকদের তৈরি মন্দির, কারো মতে এটি কারো কবর কেউবা মনে করে এটি কোন পুরাতন উপাসনালয়।

ঢাকায় ইউরোপীয়দের আগমন ঘটে সতেরো শতকের প্রথমভাগে। ব্যবসার উদ্দেশ্যে পর্তুগিজ, ওলন্দাজ, ফরাসি, ইংরেজদের সঙ্গে গ্রিকরাও ঢাকায় আসেন। ভারতে গ্রিকদের আগমন ঘটে ষোড়শ শতকের শুরুর দিকে। উপমহাদেশে যে সব গ্রিক এসেছিলেন তাদের বেশির ভাগই ছিলেন ব্যবসায়ী। অধিকাংশ গ্রিকের ঠাঁই হয়েছিল ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে। ১৭৭০ থেকে ১৮০০ সালের মধ্যে ঢাকায় দুই শতাধিক গ্রিক বসবাস করতেন। তারা বিশেষত কাপড়, পাট, লবণ ও চুনের ব্যবসা করতেন। এখান থেকে পাট ও কাপড় ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশে রফতানি করতেন। ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি তারা এদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। বংশ পরম্পরায় থেকে যান দীর্ঘ দিন। তাদের অনেকেই এদেশে মৃত্যুবরণ করেন এবং এখানেই সমাহিত করা হয়। বহু সময় ধরে গ্রিকরা এখানে বসবাস করলেও বর্তমানে দেশে তাদের কোনো স্থাপত্যনেই বললেই চলে। ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে গ্রিক কবরস্থানসহ বিভিন্ন জায়গায় যেসব গ্রিক স্মৃতিচিহ্ন ছিল তা সব বিলীন হয়ে গেছে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক টিএসসিতে রয়েছে এদেশে গ্রিকদের সর্বশেষ সমাধি সৌধটি।

গুরুদুয়ারা নানক শাহী-

গুরুদুয়ারা নানক শাহী বাংলাদেশের প্রাচীনতম ও প্রধান শিখ ধর্মীয় উপাসনালয়। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে, টিএসসির অদূরে আধুনিক ভাষা শিক্ষা ইন্সটিটিউট এরপাশে অবস্থিত। এটির তুষার শুভ্র বর্ণ, একই সঙ্গে ইয়োরোপীয় এবং শিখ স্থাপত্যশৈলীর মিশ্রণ ও নিসর্গীক অবস্থান একে করে তুলেছে উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশে আরও আট থেকে ৯টি শিখ গুরু দুয়ারা থাকার ঐতিহাসিক প্রমাণ থাকলেও বর্তমানে এই একটি ছাড়া বাকিগুলোর অস্তিত্ব সম্পর্কে জানা যায় না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকে অদ্যাবধি অনেক ঘটনার সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই উপাসনালয়টি। এটি কবে নির্মাণ করা হয়েছে তা সঠিকভাবে জানা না গেলেও ইতিহাসবিদদের ধারণা, ১৬০৬-১৬২৮ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ করা হয়েছে। এ সময় উপমহাদেশের শাসনভারের দায়িত্বে ছিলেন সম্রাট জাহাঙ্গীর। তিনি তখন পূর্ব বাংলা শাসনভারের দায়িত্ব দেন ষষ্ঠ শিখ গুরু হরগোবিন্দ সিংকে। তার প্রচেষ্টায় বর্তমান `গুরুদুয়ারা নানক শাহী` নামের শিখ সম্প্রদায়ের উপাসনালয়টি গড়ে ওঠে। দীর্ঘ দিন গুরুদুয়ারা পরিত্যক্ত থাকার পর ১৮৩৩ সালের দিকে সংস্কার করা হয়। বেশ মনোরম স্থাপনা এটি। পূর্বমুখী করে বর্গাকার ড্রামের ওপর স্থাপিত গম্বুজ বিশিষ্ট। উত্তর, পশ্চিম ও
পূর্ব দিকের দেওয়ালে পাঁচটি করে প্রবেশ পথ রয়েছে। রয়েছে কেন্দ্রীয় কক্ষের চারদিকে পাঁচ ফুট প্রশস্ত বারান্দাও। বারান্দার প্রতিটি কোনায় রয়েছে একটি করে মোট চারটি কক্ষ। উল্লেখ্য গুরু দুয়ারার প্রতিটি বাহুর দৈর্ঘ্য বাইরের দিকে ৩০ ফুট। শিখ সম্প্রদায়ের লোকজন প্রতি শুক্রবার এখানে জমায়েত হয়ে বিশেষ প্রার্থনায় রত হন। এ ছাড়া প্রতিদিন তারা পবিত্র গ্রন্থ পাঠের মাধ্যমে পূজা-অর্চনাও করে থাকেন। তাদের পূজা-অর্চনার মূল কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে ওই গ্রন্থখানি।
এই পবিত্র গ্রন্থখানির নাম `গ্রন্থসাহেব`। অপরদিকে গুরু দুয়ারার প্রার্থনার কক্ষকে বলা হয়
`দরবার সাহেব`। এখানে বসে নারী-পুরুষ উভয়ে প্রার্থনাদি সেরে নেন। প্রার্থনার পাশাপাশি তারা নানা ধরনের বাদ্য-বাজনাও বাজিয়ে থাকেন। তার পর `গুরুকা লঙ্গর` নামের ভোজনালয়ে পূজারিরা সবাই মিলে পেটপুরে খেয়ে নেন। সবাই মিলে একত্রে খেলে সৌহার্দ্য বৃদ্ধি পায়বলে তারা মনে করেন। উল্লেখ্য, দেশ-বিদেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও এখানে এসে প্রার্থনায় সমবেত হন। শিখ ধর্মের প্রবর্তক গুরু নানক ঢাকা সফরকালে এখানে একটি শিখ গুরুদুয়ারার প্রতিষ্ঠা করেন বলে জনশ্রুতি আছে। পরবর্তীতে ষষ্ঠ শিখ গুরু হরগোবিন্দ সিং প্রতিনিধি পাঠিয়ে এখানে স্থায়ী একটি গুরুদুয়ারার প্রতিষ্ঠা করেন। নারী পুরুষ ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই গুরু দুয়ারায় প্রবেশ করতে পারেন। বিভিন্ন সময়ে দেশ বিদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব গুরুদুয়ারাটি পরিদর্শন করেছেন। দর্শনার্থীদের জন্যে শুক্রবার দুপুর ১২টার পর গুরুদুয়ারাটি পরিদর্শনের জন্যে উন্মুক্ত থাকে।

আঁদ্রে মারলো (মালরো বাগান)-

মুক্তিযুদ্ধের সময় ইউরোপে বাংলাদেশের বড় শুভাকাঙ্খি ফরাসি দার্শনিক আঁদ্রে মালরো ১৯৭৩ সালের ২০ এপ্রিল বাংলাদেশে আসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রে তাকে উষ্ণ সংবর্ধনা জানানো হয়। শিল্প হচ্ছে ভাগ্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ- অত্যন্ত গভীর তাৎপর্যপূর্ণ এই কথাটি বলেছিলেন ফরাসি লেখক Andre Malraux ( ১৯০১ -১৯৭৬) এবং আন্দ্রেমারলোর সঙ্গে আমাদের অর্থাৎ বাঙালিদের নিবিড় একটা সম্পর্ক রয়েছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আন্দ্রে মারলো গণহত্যার বিরুদ্ধে বিশ্ব বিবেককে জাগিয়ে তুলতে ভূমিকা রাখেন। এমনকি তিনি মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ে শরিক হতে ১৫০ জনের একটি স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করেন। তবে ’৭১-এ তার বাংলাদেশে আসা হয়নি। পরে ১৯৭৩ সালে তাকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বীরোচিত সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এই মহান ব্যক্তির স্মরণে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ চত্বরে মালরো বাগান নামে একটি বাগানের নামকরণ করা হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়ে প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধে অংশ গ্রহণের ব্যক্তিগত ইচ্ছা ব্যক্ত করে এবং পাকিস্তানি হানাদারবাহিনীর জঘন্য গণহত্যার প্রতিবাদে বিভিন্ন প্রবন্ধ লিখে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি বাংলাদেশের পক্ষে আনতে সহায়তা করেছিলেন। মুক্তিবাহিনীর সমর্থনে যুদ্ধে যোগ দিতে তিনি প্রস্তুতির ঘোষণা দেন। যদিও শেষ পর্যন্ত এদেশে তার আসা হয়নি, কারণ এর মধ্যেই ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে মুক্তিযোদ্ধারা সামরিক অভিযান শুরু করে এবং দেশ স্বাধীন হয়। এর পর ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমন্ত্রণে বাংলাদেশ সফরে আসলে তাকে বীরোচিত সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
বাংলাদেশের সেই পরমবন্ধু ফরাসী লেখক-দার্শনিক এবং দ্য গল সরকারের মন্ত্রী ‘আঁদ্রে মারলো’র স্মৃতির প্রতিশ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বাগানের নামকরণ করা হয়েছে ‘মারলো বাগান।’ “

আন্দ্রে মালরো সারা জীবন সাম্য ও মুক্তির পক্ষে ছিলেন তা নয়, সরাসরি যুদ্ধও করেছিলেন মুক্তির পক্ষে।
৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের সময় মালরো একাই সারা ফ্রান্সে সাংস্কৃতি আন্দোলন গড়ে বিশ্বে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গড়ে তুলেছিলেন। তিনি বাংলাদেশের যোদ্ধাদের গেরিলা পদ্ধতিতে যুদ্ধ করার উপদেশ দিয়েছিলেন।"

রুশ কবি পুশকিনের আবক্ষ মূর্তি-

পুশকিন রাশিয়ার জাতীয় কবি। তিনি ১৭৯৯ সালে মস্কোয় জন্মগ্রহণ করেন, ১৮৩৭ সালে মারা যান।
আধুনিক রুশ সাহিত্যের স্থপতি কবি আলেকজান্ডার পুশকিন। পুরো নাম আলেক্সজান্ডার সের্গেয়েভিচ পুশকিন। যিনি রাশিয়ার শেক্সপিয়ার নামেখ্যাত। ভাষার ওপর আশ্চর্য দক্ষতা, প্রাঞ্জলতা ও গভীরতা ছিল তার সাহিত্যের মূল বৈশিষ্ট্য। পুশকিন রাশিয়ান রোমান্টিজম এর প্রদর্শক হিসাবে স্বীকৃত এবং প্রেমবিষয়ক কবি হিসেবে জগদ্বিখ্যাত। সমসাময়িক কালে তিনি শুধু রাশিয়ান হিসেবেই নয়, বরং সমগ্র পৃথিবীতে অত্যন্ত শক্তিমান কবি হিসেবে স্বীকৃত।

 মূলত. কবি হলেও তিনি নাটক, গল্প, মহাকাব্য, উপন্যাসও লিখেছেন। তার বিখ্যাত উপন্যাসের নামইয়েভেজেনি ওনেজিন`। পুশকিনের ‘ম্যাসেজ অব ইউরোপ’,‘রুসলাম অ্যান্ড লুদমান’ উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। আলেকজান্ডার পুশকিনের বড় বৈশিষ্ট্য ছিল বিশ্ব সাহিত্যের ওপর ছিল তার দখল। ১৮৩৭ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরন করেন কবি আলেকজান্ডার পুশকিন। মাত্র ৩৮ বছর বয়সে পুশকিনের মৃত্যুকে রুশ সাহিত্যের বিপর্যয় হিসেবে দেখা হয়। তিনি অকালে মারা গেলেও আজো আধুনিক রুশ পুশকিন এর সময়কে রাশিয়ান কবিতার স্বর্ণসময় বলা হয়। ১৮২৯ থেকে ১৮৩৬ সালের মধ্যে রুশ সাহিত্যে তার অনেকগুলো রচনার কারণে নব দিগন্তের উন্মেষ ঘটে।

রাশিয়ার তখন ছিল রাজতন্ত্র। পুশকিন ছিলেন রাজতন্ত্র বিরোধী। রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে লেখালেখির কারণে পুশকিনকে সেন্টপিটার্সবুর্গ থেকে বন্দী করে নির্বাসনে পাঠানো হয় দক্ষিণ রাশিয়ার একটি দুর্গম অঞ্চলে তবু তার লেখনী থেমে থামেনি। তিনি রাশিয়ান কবিতা বিশ্ব দরবারে যথার্থ রূপে হাজির করেছেন। তিনি সাংবাদিকতাও করেছেন এবং তার সাংবাদিকতার বিষয় ছিল সাহিত্য।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রুশ কবি ও সাহিত্যিক আলেক্সান্দর পুশকিনের একটি আবক্ষমূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘রাশিয়ার নাগরিকদের উপহার’ হিসেবে নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এই মূর্তিস্থাপন করা হয়। মূর্তিটি নির্মাণ করেছেন কুজনিৎসোভ মুরোমস্কি।

ঢাকা গেট-

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থিত ঐতিহাসিক মোগল স্থাপনাগুলোর মধ্যে অন্যতম ঢাকা গেট। ব্রিটিশ শাসনামলে ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট চার্লস ডয়’স মূল শহরের সঙ্গে তৎকালীন রেসকোর্সকে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) সংযুক্ত করতে ময়দানের উত্তর-পূর্ব দিকে একটি সড়কের প্রবেশপথে দুটি স্তম্ভ নির্মাণ করেন। আর এটিই ঢাকা গেট নামে পরিচিত।

রাজধানীর দোয়েল চত্বর হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে হলদে রঙের বিশালাকার কয়েকটি স্তম্ভ। এ গেটের তিনটি অংশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবায়নযোগ্য শক্তিগবেষণা কেন্দ্রের দিকে, মাঝখানের অংশ পড়েছে সড়ক বিভাজকের দিকে এবং অপর অংশটি রয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের তিন নেতার মাজারের পাশে।

ঢাকা গেট নামকরণে বিভিন্ন তথ্যভেদ রয়েছে। মোগল আমলে বুড়িগঙ্গা নদী হয়ে ঢাকায় প্রবেশ করতে ব্যবহার করা হতো এ তোরণ। সে সময় এর নাম ছিল ‘মীর জুমলারগেট’। পরে কখনও ‘ময়মনসিংহ গেট’, কখনও ‘ঢাকা গেট’ এবং অনেক পরে নামকরণ করা হয় ‘রমনা গেট’। এ গেট রমনায় প্রবেশ করতে ব্যবহার করা হতো বলে পরে সাধারণ মানুষের কাছে এটি রমনা গেট নামেই পরিচিতি পায়। তবে বাংলাদেশ সরকারের গেজেট অনুসারে এ তোরণ এবং আশপাশের জায়গার নাম দেওয়া হয়েছে ‘মীর জুমলারগেট’

 

দীর্ঘদিন ধরে কোনো ধরনের সংস্কার বা যত্ন ছাড়াই অবহেলিত ঢাকা গেট। যত্নের অভাবে খসে পড়েছে এর দেয়ালের ইট-চুন-সুরকি। স্থাপনার সৌন্দর্যও ইতোমধ্যে ধ্বংসের পথে। ঢাকা গেটের বর্তমান স্থাপনা দেখে কেউ বুঝতেই পারবে না এটি একটি ঐতিহ্যবাহী গেট। চোখের আড়ালে, গাছও লতাপাতায় মোড়ানো এ গেট এখন আর কারো নজর কাড়ে না। অনেকে আবার নাম শুনেছেন অথচ কখনো খুঁজে পাননি ঐতিহাসিক এ স্থাপনা। ২০০ বছরের

ফুলাররোড-

বঙ্গভঙ্গের প্রবক্তা লর্ড কার্জন নতুন প্রদেশে পূর্ব বঙ্গের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেন স্যার জোসেফ বি ফুলারকে। এদিকে লর্ড কার্জনের সঙ্গে প্রধান সেনাপতি লর্ড কিচেনারের মতোবিরোধের কারণে কার্জন পদত্যাগ করে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন।

তখন বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন চরমে পৌঁছেছিল। প্রথমত আন্দোলনটি অহিংস থাকলেও পরবর্তীতে তা সহিংস আন্দোলনে পরিণত হয়। আন্দোলনের মাঝ পথে শতাধিক হিন্দু জমিদার ইংরেজদের আনুগত্য অর্থাৎ বঙ্গভঙ্গের বিপক্ষে আন্দোলন থেকে সরে দাড়ায় এক স্মারকলিপি প্রদানের মাধ্যমে। বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে যেসব ছাত্র জড়িত ছিল তাদের বহিস্কার করা হয় এবং জড়িতরা কোন সরকারি চাকরি করতে পারবে না এলান জারি করা হয়। বেশ কয়েকজন চরমপন্থি কংগ্রেস নেতাকেও এই বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে জড়িত থাকার কারণে বাংলা থেকে বহিস্কার হয়।

লর্ড কার্জন পদত্যাগ করার পর নতুন বড়লাট নির্বাচিত হন লর্ড মিন্টো। ইংরেজরা যে মুহুর্তে বঙ্গভঙ্গ বিরোধীআন্দোলনে কঠোরতা প্রদর্শন করছে তখনই বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে তত্‍কালীন সিরাজগঞ্জের ভিক্টোরিয়া এবং বানোয়ারীলাল নামক দুটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা জড়িত মর্মে পূর্ববঙ্গ ও আসামের সব প্রতিষ্ঠানের কেন্দ্রীয় কার্যালয় কোলকাতায় লর্ড মিন্টোকে এক চিঠি মারফত উক্ত বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ স্বরুপ সব অনুদান বন্ধের অনুরোধ জানান লর্ড স্যার জোসেফ বি ফুলার। কিন্তু বড় লাট মিন্টো এ সুপারিশ অগ্রাহ্য করলে ফুলার পূর্ববঙ্গ প্রদেশের গভর্নর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। পরবর্তীতে তার এই অবদানের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সড়কের নামকরণ তার নামে করা হয় ফুলার রোড।

 

এসএইচ/