ঢাকা, শুক্রবার   ০৮ নভেম্বর ২০২৪,   কার্তিক ২৪ ১৪৩১

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের ৮২তম জন্মবার্ষিক কাল

প্রকাশিত : ১১:০৪ পিএম, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ রবিবার

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের ৮২তম জন্মবার্ষিক আগামীকাল সোমবার। দিবসটি পালন উপলক্ষে নূর মোহাম্মদ নগরে স্মৃতিস্তম্ভে পুস্পস্তবক অর্পণ, র‌্যালি, গার্ড অব অর্নার প্রদান, আলোচনাসভা, বিভিন্ন প্রতিযোগিতা ও বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক ও নূর মোহাম্মদ ট্রাস্টের সভাপতি মো. এমদাদুল হক চৌধুরী।

বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক শেখ নূর মোহাম্মদ ১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নড়াইল জেলার সদর উপজেলার (মহিখোলা) বর্তমান নূর মোহাম্মদ নগরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মোহাম্মদ আমানত শেখ ও মাতা  জেন্নাতা খানম। শেখ নূর মোহাম্মদ এর পিতা মাতার স্বপ্ন ছিল ছেলে বড় হয়ে লেখাপড়া শিখে মানুষের মত মানুষ হবে,  দেশ ও দশের মুখ উজ্জ্বল করবে। ডানপিঠে নূর মোহাম্মদ লেখাপড়ায় বেশিদূর এগোতে পারেননি। স্থানীয় বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণীতে অধ্যায়নরত অবস্থায় তাঁর শিক্ষা জীবনের অবসান ঘটে।

এরপর ১৯৫৯ সালের ১৪ মার্চ নূর মোহাম্মদ তৎকালীন ইস্ট পাকিস্তান রেজিমেন্টে যোগদান করেন এবং কৃতিত্বের সঙ্গে প্রশিক্ষণ শেষে একই বছরের ৩ ডিসেম্বর দিনাজপুর সেক্টরে যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর ১৯৭০ সালের ১ জুলাই যশোর সেক্টর হেড কোয়ার্টারে বদলি হয়ে আসেন। ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধকালে ল্যান্সনায়েক নূর মোহাম্মদ ৮ নং সেক্টরে সাবেক ইপিআর ও বাঙালি সেনাদের নিয়ে গঠিত একটি কোম্পানিতে যোগদান করেন। একাত্তরের ৫ সেপ্টেম্বর নূর মোহাম্মদ যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গোয়ালহাটি গ্রামের সম্মুখ যুদ্ধে একটি টহলের নেতৃত্ব দিচ্ছেলেন তিনি। তারা পার্শ্ববর্তী ছুটিপুর পাক হানাদার বাহিনীর ঘাঁটির ওপর নজর রাখছিলেন। তাঁর সঙ্গী ছিল আরও ৪ জন সৈন্য। পাকবাহিনী টের পেয়ে বিপদজনক অবস্থার মুখে টহলদারী মুক্তিযোদ্ধাদের ফাঁদে ফেলার পরিকল্পনা করে। হানাদারদের এ পরিকল্পনা বুঝে উঠতেই নূর মোহাম্মদ সঙ্গীদের নিয়ে হানাদার বাহিনীর ঘাঁটি আক্রমণ করেন। তখন শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ। তাঁর সহযোদ্ধা নান্নু মিয়া মারাত্মকভাবে আহত হলেন। তাকে বাঁচাতে তিনি এগিয়ে আসলে হানাদারদের ছোড়া মর্টার শেল মারাত্মকভাবে জখম করে নূর মোহাম্মাদকে।

মৃত্যু আসন্ন বুঝে তিনি সিপাহী মোস্তফা কামালের হাতে নেতৃত্ব ভার তুলে দিয়ে আহত নান্নু মিয়াসহ সবাইকে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে বলেন। উপায়োন্তর না পেয়ে তারাও তাই করলেন, কিন্তু তারা একটি এসএলআর রেখে যান আহত কমান্ডারের কাছে। নূর মোহাম্মদ মৃত্যুপথযাত্রী হয়েও এসএলআর নিয়ে শেষবারের মত ঝাঁপিয়ে পড়েন হানাদারদের উপর। সেখানেই তিনি যুদ্ধ করতে করতে শহীদ হন। পরবর্তীতে নিকটবর্তী একটি ঝোঁপের মধ্যে তাঁর  মৃতদেহ পাওয়া যায়।

ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ সঙ্গী সৈনিকদের প্রতি যে ভালোবাসা প্রদর্শন করেন তা অতুলনীয়। একই সাথে মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও দেশের জন্য আমৃত্যু লড়ে গেছেন। শত্রুর উপর একা ঝাঁপিয়ে পড়ে  দেশপ্রেমের যে নজির  রেখে গেছেন তা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে দেশ প্রেমের বড় উদাহরণ হয়ে থাকবে। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন এদেশের মাটিতে নূর মোহাম্মদের রক্তের গন্ধ পাওয়া যাবে। যতদিন এ জাতি থাকবে ততদিন নূর মোহাম্মাদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

কেআই/টিকে