ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৮ ১৪৩১

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেডিটেশন

আত্মপ্রত্যয়ী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা  

প্রকাশিত : ০৪:২৩ পিএম, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সোমবার | আপডেট: ১০:৩৩ এএম, ২৯ মার্চ ২০১৮ বৃহস্পতিবার

শিক্ষা জীবনসহ মানুষের পুরো জীবনে উন্নতি সাধনের জন্য শরীরের পাশাপাশি মনকেও সুস্থ রাখা প্রয়োজন। আর এ  কাজটা আমরা খুব সহজেই মেডিটেশনের মাধ্যমে করতে পারি। মন ঠিক থাকলে আমাদের কাজগুলো সুন্দর হবে। আর  এ সব কিছুর মাধ্যমে নিজেদের জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তোলাসহ বাসযোগ্য সুন্দর এক পৃথিবী গড়ে তোলতে পারব।

এ কথাগুলো বলছিলেন, বরিশাল জেলার বানারীপাড়া উপজেলার সৈয়দ বজলুল হক বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ কাজী মিজানুল ইসলাম।

কাজী মিজানুল ইসলামসহ অন্যান্য  শিক্ষক ও কর্মকর্তা কর্মচারী মিলে কলেজের উদ্যোগে মিডিটেশনের কোর্স করেন।

মেডিটেশন কোর্স করার পর এর থেকে সুফল পাওয়ায় শিক্ষকরা কলেজে শিক্ষার্থীদের জন্যও মেডিটেশনের ব্যবস্থা করেন। বর্তমানে এ কলেজটি মেডিটেশন কলেজ নামেও পরিচিত।

বর্তমানে শিক্ষকসহ শিক্ষার্থীরাও এর সুফল ভোগ করছেন। মেডিটেশন কিভাবে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জীবনে সুফল বয়ে এনেছে এ  বিষয় নিয়ে কথা  হয় বজলুল হক বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ কাজী মিজানুল ইসলামের সঙ্গে।   

তিনি বলেন, আমরা প্রথমে কলেজের উদ্যোগে  ৭১ জন শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী ২০১৬ সালের মার্চ মাসে কোয়ান্টাম থেকে  মেডিটেশন কোর্স করি। কোর্স করার পর আমরা শিক্ষকরা মিলে শিক্ষার্থীদের জন্য মেডিটেশনের ব্যবস্থা করেছি। এর অংশ হিসেবে সকাল ৯টা থেকে  ৯টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য এবং  ১০টা ৩০ মিনিট থেকে ১১টা পর্যন্ত শিক্ষকদের জন্য মেডিটেশনের ব্যবস্থা রেখেছি।

তিনি বলেন, মেডিটেশনের কারণে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনোযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। পরীক্ষার হলে শান্তভাবে অবস্থান করাসহ তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসও বৃদ্ধি পেয়েছে।

তিনি আরও বলেন, পূর্বে শিক্ষার্থীরা লক্ষ নির্ধারণে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগত। কিন্তু মেডিটেশন করার মাধ্যমে তারা তাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে সক্ষম হয়েছে। পরিবারের প্রতি তাদের মনোযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কেও তারা সচেতন হয়েছেন।

তিনি বলেন, আগের চেয়ে ক্লাসের প্রতি এবং পাঠ তৈরির ব্যাপারে  শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের  পরস্পরের মধ্যে রাগ, ক্ষোভ, হিংসা-বিদ্ধেষ ও ঘৃণা  দূর  হয়েছে।

২০১৭ সালে বরিশাল জেলার মধ্যে সৈয়দ বজলুল হক বিশ্ববিদ্যালয়  কলেজটি শ্রেষ্ঠ কলেজ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। এছাড়াও অধ্যক্ষদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষ নির্বাচিত হয়েছেন কাজী মিজানুল ইসলাম।

কলেজের এই সফলতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি মনে করি আমাদের এই সফলতার পেছনে শিক্ষক ও কর্মকর্তা কর্মচারীদের পরিশ্রমের পাশাপাশি মেডিটেশন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।

শিক্ষকদের ‍ওপর কি ধরণের প্রভাব ফেলেছে এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন,  মেডিটেশন কোর্স করার পর শিক্ষকদের পড়ানোর মান বৃদ্ধি পেয়েছে। স্কুল নিয়ে তাদের মধ্যে সচেতনতান বৃদ্ধি পেয়েছে। আগের চেয়ে শিক্ষকদের মধ্যে পরস্পর সম্পর্ক বৃদ্ধি পেয়েছে। পারিবারিক জীবনেও শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

তিনি মনে করেন, যে কোন বয়সেই একজন মানুষ মেডিটেশন থেকে উপকৃত হতে পারেন। কিন্তু কেউ যদি তরুণ বয়সে মেডিটেশনের চর্চা শুরু করতে পারেন বা মেডিটেশন যদি হয় তার দৈনন্দিন জীবনের অংশ তাহলে সত্যিকার অর্থেই তিনি হয়ে উঠবেন দেশের একজন অমূল্য সম্পদ। আমরা ঠিক এ কাজটিই করছি সৈয়দ বজলুল হক বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের মাধ্যমে।

মেডিটেশন সম্পর্কে ওই কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আফরিনা রওশন মীম বলেন, মেডিটেশন করার ফলে দেখা যায় শেষ ক্লাস পর্যন্ত আমি সমানভাবে মনোযোগী হতে পারি। আগে দীর্ঘ সময় ধরে পড়াশোনা করলে মাথা ব্যাথা করত। কিন্তু এখন মাথা ব্যাথা অনেকটা কমে গেছে। মেডিটেশন করার মাধ্যমে আমি আমার লক্ষ নির্ধারণ করতে সক্ষম হয়েছি।

ওই কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী নাফিজ ইমতিয়াজ হৃদয় বলেন, মেডিটেশন করার মাধ্যমে মন ও ব্রেণ দুটই শান্ত থাকে। আর ফলে  খুব সহজেই যে কোন ভালো কাজ করা যায়। ক্লাসের শুরুতে কলেজে মেডিটেশন করানোর কারণে আমরা সহজেই যে কোন বিষয় বুঝতে পারি।

কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের প্রভাষক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করার পর মেডিটেশনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শান্ত মনে ক্লাস করতে পারেন। এতে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আরও বেশি বৃদ্ধি পায়।

কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো. আবদুল লতিফ বলেন, আমরা যখন ১টা ১০ বা ২টা ১০ মিনিটে ক্লাস নেওয়ার জন্য যখন যেতাম, তখন ছাত্র-ছাত্রীরা বিরক্তবোধ করত এবং কেউ কেউ বলত স্যার ক্ষুদা লেগে গেছে আমাদের ছেড়ে দেন। কিন্তু মেডিটেশন করার পর থেকে শিক্ষার্থীরা এরকম অযুহাত দেখায় না এবং শান্তভাবে ক্লাস করে।

কলেজের ইতহাস বিভাগের প্রভাষক ফাতেমা বেগম বলেন, ছেলেমেয়েদের আগে যে রকম দেখতাম তারা কথা শুনত না,  ঠিকমতো কলেজে আসত না।  কিন্তু মেডিটেশন করার পর এখন শিক্ষার্থীরা ঠিক মতো ক্লাসে আসে, আমাদের কথা শুনে।

মেডিটেশনের মাধ্যমে শিক্ষকদের  পারিবারিক জীবনেও শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তারা এখন পারিবারিকভাবে মেডিটেশনের চর্চা করে থাকেন।

এ সম্পর্কে  কলেজের  ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক খাঁন মো. আল আমীন বলেন, আমার মা, আমার স্ত্রী এবং পরিবারের অন্য সদস্যরা মিলে বাসায় মেডিটেশন করি। আমাদের পরিবারে সুখ-শান্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। আমি মনে করি প্রত্যেক পরিবারে মেডিটেশন চালু করা উচিৎ।

মেডিটেশনের মাধ্যমে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সুফল পাওয়ায় কলেজের উপাধ্যক্ষ মো. মাহজান আলী মনে করেন, সব কলেজেই মেডিটেশনের ব্যবস্থা চালু করা উচিৎ। এর মাধ্যমে লেখাপড়ার মান বৃদ্ধিসহ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক বন্ধন সৃষ্টি হবে। কেননা এই মেডিটেশনের মাধ্যমে  শরীর-মন সতেজ হয়, প্রফুল্ল হয়, মেধাবিকাশের পথ খুলে যায়, আকাঙ্খা বৃদ্ধি পায়, মানুষ সাহসী হয়, মানুষের মধ্যে হিংসা বিদ্ধেষ দূর হয়, মানুষে মানুষে প্রেম ও ভালোবাসা এবং কল্যাণ করার স্পৃহা জাগ্রত হয়। 

 

এমএইচ/এসএইচ/