উত্তর কোরিয়ার ২০টি দূর্লভ ছবি
প্রকাশিত : ০৮:০০ পিএম, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ বুধবার
পারমাণবিক বোমা ইস্যুতে পশ্চিমা দেশগুলোর চক্ষুশূলে পরিণত হওয়া দেশ উত্তর কোরিয়া। বিশ্ব দৃষ্টির নজর থেকে বরাবরই নিজেদের আড়াল করে রাখা দেশটির দূর্লভ কিছু সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে ইন্টারনেটে।
ফরাসি আলোকচিত্রী এরিক ল্যাফর্গের সুযোগ হয়েছিল ছয় বার উত্তর কোরিয়া ভ্রমণ করার। সেসময় তোলা কিছু ছবি দেশটির নিরাপত্তারক্ষীদের চোখ এড়িয়ে নিয়ে এসেছেন উত্তর কোরিয়ার বাইরে।
তার ভাষাতেই নিচে তুলে ধরা হল উত্তর কোরিয়ার এমন ২০টি দুর্লভ ছবি। অনুবাদ করেছেন ইটিভি অনলাইনের সহ-সম্পাদক শাওন সোলায়মান।
১) একজন সৈনিক একটি মাঠে শুয়ে আছেন। এই ছবিটির কারণে আমার ওপর উত্তর কোরিয়া প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
২) উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনীকে বিভিন্ন দেশ বেশ সমীহের চোখেই দেখে। কিন্তু সেখানে যদি আপনি যেতে পারেন তাহলে দেখবেন সৈনিকেরা কিছু কাজ করছেন যা সাধারণত নিচু নিম্ন আয়ের শ্রেণীর লোকেরা করে থাকে। এই যেমন- মাঠে কৃষকদের সাহায্য করা।
৩) দেশটির রাজধানী পিয়ং ইয়ং এ যে পাতাল রেল আছে তা পৃথিবীর সবথেকে গভীর পাতাল রেল। এর কারণ হল বোমা বর্ষনের সময় ‘বম্ব শেলটার’ হিসেবেও ব্যবহার উপযোগ্য করে বানানো হয়েছে এটিকে।একজন দেখলেন আমি ছবিটি তুলেছি। এটিকে তাড়াতাড়ি মুছে ফেলতে বলেন তিনি আমাকে। সাবওয়ে স্টেশনটি ছবিতে চলে আসায় তিনি এমনটা বলেন।
৪) এই ধরনের ছবিতে উত্তর কোরিয়া সরকার ঘোর আপত্তি করে। যদিও আমি ব্যাখ্যা করে বলি যে, দারিদ্রতা পৃথিবীর সব দেশেই আছে। এমনকি আমার দেশেও। কিন্তু তবুও এই ধরনের ছবি তুলতে নিষেধ করেন তারা।
৫) উত্তর কোরিয়ায় শিশু শ্রম খুব একটা দেখা যায় না। তবুও সময় তো সবসময় একরকম যায় না!
৬) কালো বাজারির বিরুদ্ধে দেশটিতে আছে কঠোর নিষেধাজ্ঞা। তারপরেও সিগারেট বা মিষ্টি জাতীয় কিছু পণ্য কালো বাজারে বিক্রি করে অল্প কিছু আয় করতে দেখা যায় স্থানীয়দের।
৭) কিমজনজিলা উৎসবের দিন হাজার হাজার উত্তর কোরিয় বাসীকে অবশ্যই বিভিন্ন জাদুঘর পরিদর্শন করতে হয়। এসময় দীর্ঘ লাইনে দাড়াতে দেখা যায় তাদের।
৮) উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ং ইয়ং-কেই দেশটির প্রতিচ্ছবি মনে করা হয়। তাই শহরটিতে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে মানা হয় কঠিন নিয়ম। বাইরে থেকে যেন ভবনের ভেতরে দেখা যায় সে বিষয়ে খেয়াল করে ভবন বানানো হয়। আর যদি ভেতরে যাওয়ার সুযোগ হয় আপনার তাহলে দেখবেন অন্ধকার সত্য ফুটে উঠবে আপনার সামনে।
৯) দিন দিন পিয়ং ইয়ং-এ গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও এখনও অনেকেই তাতে অভ্যস্ত না। এমনকি প্রধান সড়কগুলো জুড়ে এখনও শিশুদের খেলতে দেখা যায়। গাড়ি চলুক আর নাই বা চলুক।
১০) দেশটির প্রধান শহরগুলোর মধ্যে যাতায়াতের জন্য গণপরিবহন নেই বললেই চলে। এমনকি এক শহর থেকে আরেক শহরে যেতে নাগরিকদের অনুমতির প্রয়োজন হয়। মহাসড়কে কিছুদূর পরপরই নিরাপত্তা বাহিনীর এমন তল্লাশী হতে দেখা যায়।
১১) দারিদ্রতা প্রদর্শন করা দেশটিতে নিষিদ্ধ। কিন্তু তার থেকেও নিষিদ্ধ হচ্ছে প্রাচুর্য্য প্রদর্শন করা। এক দিন বিকেলে এক পার্কের বাইরে এই গাড়িটি দেখতে পাই আমি। এক ধনকুবের এই গাড়ির মালিক। আমি যখন এই ছবিটি তুলি তখন গাড়ির মালিক বারবিকিউ চিকেন খাচ্ছিলেন!
১২) সৈনিকেরা আরাম করছেন অথবা কাজের বাইরে আছেন; এমন ছবি তোলা নিষিদ্ধ।
১৩)পিয়ং ইয়ং এ দুইটি সুপার স্টোর আছে। এখানে সব ধরনের খাবার ও পানীয় পাওয়া যায়। এমননি ইভিয়ান পানীয়ও আছে এখানে। কেনাকাটা করা যায় ইউরো আর উইনে। তবে এখানে কেনাকাটা করার অনুমতি আছে শুধুমাত্র ধনাঢ্য ব্যক্তিবর্গের।
১৪) এটা সার্কাসের কোন খেলা না। দেশটিতে শ্রমিকদের এমনই ঝুঁকি নিয়েই কাজ করতে হয়।
১৫) ডলফিনের খেলা দেখার একটি সুযোগ আছে পিয়ং ইয়ং-এ। এখানে ডলফিনের ছবি তোলায় কোন বাঁধা নেই। কিন্তু সৈন্যদের ছবি তোলা যাবে না। বিষয় হচ্ছে, যেদিক থেকেই ছবি তুলুন না কেন ফ্রেমের ৯০ শতাংশ জায়গায়ই সৈন্যদের দেখা যাবে।
১৬) এমনটি কখনোই হওয়ার কথা না। কিম দ্বিতীয় সুং এর মূর্তির কাছে এমন ঝাড়ু থাকতে পারে না।
১৭) যখন আপনি স্থানীয়দের বাড়িঘর ঘুরে দেখতে যাবেন তখন সাথে থাকা গাইড আপনাকে শিশুদের ছবি তুলতে বলবে যারা কম্পিউটার ব্যবহার করছে। কিন্তু যখনই আপনি আবিষ্কার করবেন যে, সেসব কম্পিউটারে বৈদ্যুতিক সংযোগই নেই তখন তারা আপনাকে ছবিটি মুছে ফেলতে বলবে!
১৮) কিমের মূর্তির পিছন দিক থেকে ছবি তোলা একেবারেই নিষিদ্ধ উত্তর কোরিয়ায়। পিছন থেকে ছবি তোলাকে কিমের প্রতি ব্যাপক অসম্মান করা হয় দেশটিতে।
১৯) লাইন ধরে দাড়ানোটা যেন উত্তর কোরিয় বাসীর জন্য এক ধরনের জাতীয় খেলা। বাসের জন্য এমনই লাইন হতে দেখা যায়।
২০) পিয়ং ইয়ং এর একটি আর্ট গ্যালারিতে গিয়েছিলাম। সেখানে অবস্থান করার এক সময়ে বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সেখানে। উত্তর কোরিয়ার জন্য এটা খুবই নিয়মিত এক চিত্র। তবে তারা বিষয়টি প্রচার করতে চায় না। বরং উলটো এর জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেন তারা।
সূত্রঃ লাইফবাজ এবং আলোকচিত্রীর নিজস্ব ওয়েবসাইট