বিএনপি দুর্নীতিবাজকে নেতা বানিয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশিত : ০৯:২২ পিএম, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ বুধবার | আপডেট: ১২:১০ এএম, ১ মার্চ ২০১৮ বৃহস্পতিবার
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি গঠনতন্ত্র সংশোধন করে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে দলীয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছে। বিএনপির কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, যে দল দুর্নীতিকে নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছে, সে দল জনগণের কল্যাণে কি কাজ করতে পারবে? সে দল লুটপাট করতে পারবে, মানুষ খুন করতে পারবে। কিন্তু মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারবে না। এটা হলো বাস্তবতা।
বুধবার দশম জাতীয় সংসদের ১৯তম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একজন যখন জেলে গেল (খালেদা জিয়া) সাজাপ্রাপ্ত হয়ে সাথে সাথে আরেকজন সাজাপ্রাপ্তকে দায়িত্ব দিল (তারেক রহমান)। তিনি আবার দেশেও থাকে না, পলাতক। পলাতক এবং সাজাপ্রাপ্ত আসামী বিদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে, তাকে দিল চেয়ারম্যানের দায়িত্ব।
বাংলাদেশে বিএনপি’র নেতৃত্বে এমন একজনও ছিল না নেতা হবার মতো, এমন প্রশ্ন উত্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবশ্য যারা নেতৃত্ব পাবার মত তাদের প্রত্যেক নেতার বিরুদ্ধেই দুর্নীতির মামলা রয়েছে। বিএনপি’র দুর্নীতির সমালোচনা করে সংসদ নেতা বলেন, তারা যে কান্ড করেছে তার আঁচড় এদেশের প্রত্যেকটি মানুষের গায়েই লেগে আছে।
প্রধানমন্ত্রী বিএনপি’র গঠনতন্ত্রের ৭ ধারাটির পরিবর্তন প্রসঙ্গে বলেন, বিএনপি নেত্রীর যে সাজা হবে সেটা বিএনপি আগেই টের পেয়েছে কি-না জানি না। না হলে কোন ফৌজদারী দন্ডবিধিতে অভিযুক্ত আসামী দলের কোন পদে থাকতে পারবেন না সংক্রান্ত ৭ ধারাটি তারা খালেদা জিয়ার রায় ঘোষণার পূর্বেই সংশোধন করে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়। সেই মোতাবেক তাদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাজাপ্রাপ্ত হলেও যে কেউ দলের পদে থাকতে পারবে। অর্থাৎ দুর্নীতিকেই তারা গ্রহণ করে নিল। তিনি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি’র নীতি ও আদর্শ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আজকে বিএনপি নেত্রীর বিরুদ্ধে তত্ত্বাবধায়ক সরকার যেসব মামলা দিয়েছে সেই একই মামলা তাঁর বিরুদ্ধেও দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সমস্ত একাউন্ট ফ্রিজ করে দিয়েছিল এবং কাগজপত্র নিয়ে পরীক্ষা করেছে।
সরকার প্রধান বলেন, তারা এই ট্রাস্ট থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য যে বৃত্তি দেন সে সমস্ত শিক্ষার্থীদের প্রত্যেকের বাড়িতে গিয়ে খোঁজ-খবর নিয়েছে। সত্যিই বৃত্তির টাকা প্রদান করা হয় কি না, সকল কাগজপত্র পরীক্ষা করেছে। তারা চেষ্টা করেছে এখানে এতটুকু ফাঁক পায় কি না।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আল্লাহর রহমতে কিছুই তারা পায়নি। কিন্তু তারা সর্বনাশ করেছিল বরাদ্দ বন্ধ করে রাখায় বৃত্তির টাকা প্রদান করা যায়নি। বর্তমানে এই ট্রাস্ট থেকে ১৮শ’ জনকে বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। সেই সময় প্রায় ১২শ’ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি এবং ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় আহতদের সাহায্য করা হচ্ছিল। এই অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে রাখাতে অনেক ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী একটি ঘটনার উল্লেখ করে বলেন, ঐ ট্রাস্ট ফান্ড থেকে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার শিকার একজন দুই পা পঙ্গু মহিলা সাহায্য পেতেন। ঐ টাকাটা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তার সংসারটা পর্যন্ত ভেঙ্গে যায়। এর ফলে তার স্বামী তাকে ত্যাগ করে আরেকটি বিয়ে করে। কত কষ্ট মানুষকে তারা দিয়েছে। যারা অনুদান দিয়েছিল তাদেরকেও হয়রানি করেছিল। কিন্তু কোন মামলা দেওয়ার মত কিছুই পায়নি।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, জিয়া চ্যারিটেবলের মামলায় টাকা এসেছিল এতিমদের জন্য। জিয়া অরফানেজের জন্য টাকা, সেই এতিম খানাটা কোথায়, তার ঠিকানা কি? ২৭ বছর আগে টাকা এসেছে, কোথায় করেছে এতিম খানা। সেই টাকাগুলো কত রকমের নয়ছয় করেছে তা মামলার প্রসিডিংস থেকেই পত্র-প্রত্রিকায় দেশবাসী দেখেছে।
অর্থ আত্মসাতের পরিমাণ দুই কোটি টাকারও বেশি। তখনকার দিনে এর একটা মূল্য ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, তখনকার দিনে দুই কোটি টাকা দিয়ে এই ধানমন্ডীতে অন্তত ১০/১২টা ফ্ল্যাট কেনা যেত। যা এখন পারা যায় না। এখন দুই কোটি টাকাই লাগে একটা ফ্ল্যাট কিনতে। তিনি (খালেদা জিয়া) সেই টাকার লোভটা সামলাতে পারেন নি। এতিমের হাতে একটা টাকাও তুলে না দিয়ে পুরো টাকাটাই আত্মসাৎ করেছিলেন।
অপরদিকে রাজধানীতে কিছু না থাকার পরেও নিজস্ব (তিনি এবং শেখ রেহানার) পৈত্রিক সম্পত্তি ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িটি জনগণের জন্য দান করে দেওয়া এবং সেখানে ট্রাষ্ট ফান্ড করে গরিব মেধাবীদের বৃত্তি দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
জিয়া চ্যারিটেবলের মামলা তার সরকার করেনি বা এ বিষয়ে তার সরকারের করণীয় কিছুই নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তথ্য দিয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর মামলা দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মামলা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১০ বছর ধরে মামলা চলেছে। মামলা চলেছে ২৬১ কার্যদিবস, সাফাই সাক্ষী তিন কর্মদিবস, ৩৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে ৪৮ কর্মদিবসে। তাছাড়া আসামী পক্ষ হাইকোর্টে রিটই করেছে ২২ থেকে ২৪ বার। বার বার রিটে হেরে গেছে। আদালত পরিবর্তন হয়েছে, জজের ওপর অনাস্থা দিয়েছে। তারপর শাস্তি হয়েছে।
তিনি বলেন, এই টাকা (আত্মসাতের অর্থ) শুরুতেই যদি এতিমদের দিয়ে দিত তাহলে মামলাটি কিন্তু চলতো না। সেই সাথে সাথে তাঁর পুত্রেরও একই অবস্থা। আমেরিকার কোর্টে তার দুর্নীতি ধরা পড়ছে। এফবিআই আমেরিকা থেকে এসে কোর্টে সাক্ষ্য দিয়েছে। সাজা হয়েছে ৭ বছরের আর ২০ কোটি টাকা জরিমানা।
দুর্নীতিকে তাঁর সরকার প্রশ্রয় দিতে চায় না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে। আওয়ামী লীগের কোন নেতা বা মন্ত্রী, এমপি কারো বিরুদ্ধে যদি তাদের (দুদক) সন্দেহ হয় তারা তাদের ডেকে নিয়ে প্রশ্ন করতে পারে এখানে কিন্তু আমরা কোন হস্তক্ষেপ করি না, হস্তক্ষেপ করবো না। আর কারো যদি দুর্নীতি প্রমাণ হলে সে সাজা পাবে। সূত্র: বাসস
আর/টিকে