ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

অপুর ধ্যানজ্ঞান সন্তান ও কাজ

প্রকাশিত : ০১:৪৭ পিএম, ১ মার্চ ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০১:৫৬ পিএম, ১ মার্চ ২০১৮ বৃহস্পতিবার

প্রেম, বিয়ে, সংসার এবং সবশেষ বিচ্ছেদ। অপুর সময়টা খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। তবে সব অন্ধকারকে মুছে দিয়ে আলোর পথে হাঁটছেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় ও আলোচিত নায়িকা অপু বিশ্বাস। তাই তো নিজেকে গুছিয়ে নিতে ব্যস্ত তিনি। যদিও মা হওয়ার পর ওজন বেড়ে বেশ মুটিয়ে গিয়েছিলেন অপু, তবে অাগের থেকে অনেকটা কমেছে। এ মুহুর্তে একমাত্র সন্তান জয় ও কাজ নিয়ে এগিয়ে যেতে চাইছেন এক সময়ের পর্দা কাপানো এই সুপারস্টার তারকা। তাকে নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন- সোহাগ আশরাফ

 

একটা সময় ছিল যখন অপু বিশ্বাস ছাড়া বাংলাদেশের সিনেমা কল্পনাই করা যেতো না। তখন তার বিপরিতে নায়ক ছিলেন সুপারস্টার শাকিব খান। এই সুপারস্টার খ্যাতিটা দুজনেরই ঝুলিতে এসেছিল একে অপরের হাত ধরে। জুটি বেধে রঙিন পর্দায় তাদের রসায়ন ঢাকাই সিনেমার দর্শকরা অনেক বেশি গ্রহণ করেছিল। দর্শকপ্রিয়তা তুঙ্গে থাকার কারণেই একটা সময় পর্দার জুটি হয়ে যান বাস্ত জীবনেরও জুটি। এরপরের ঘটনা সবার জানা। প্রেম, বিয়ে, সংসার, সন্তান, দ্বন্দ্ব ও বিচ্ছেদ নিয়ে কম জল ঘোলা হয়নি। শোবিজ পাতায় অসংখ্যবার প্রধান শিরোনামে এসেছেন এই জুটি। তবে কাগজে কলমে বিচ্ছেদ চূড়ান্ত না হলেও উভয় পক্ষ এখন সংসারকে অতীত হিসেবেই দেখছেন।

যদিও এতো কিছুর মধ্যেও শাকিব খান কাজ করে গেছেন সমান গতিতে। পিছিয়ে ছিলেন অপু। বিয়ের পর অনেক গোপনিয়তা অবলম্বন করতে হয়েছে বাংলা সিনেমার এই নায়িকাকে। সন্তান গর্ভে আসার পর বাধ্য হয়ে ক্যারিয়ারকে ছুটি দিতে হয়েছে। ক্যামেরার সামনে থেকে সরে যেতে হয়েছে অনেক দূরে। অবশ্য নিজের ও শাকিবের ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করেই ছিল এই গোপনিয়তা এবং দূরত্ব। সেই গোপনিয়তা ভেঙেছে। সংসার নামের সব বন্ধনও ছিন্ন হয়েছে। ক্যারিয়ারে দুজনার পথ এক হলেও এখন দুই রাস্তা দিয়ে হাটছেন দুজন। শাকিব একের পর এক দেশিয় ও যৌথ সিনেমায় কাজ করে যাচ্ছেন। অপরদিকে নিজেকে গুছিয়ে নিতে কঠর পরিশ্রম করছেন অপু। আবারও ফিরে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন রঙিন পর্দার এই নায়িকা।

ক্যারিয়ার নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে অপু বিশ্বাস বলেন, ‘এখন আমার একটাই মাত্র ধ্যানজ্ঞান, আর তা হচ্ছে- আমার সন্তান ও কাজ। সন্তানকে গড়ে তোলার পাশাপাশি কাজের মধ্যে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে চাই। বাকিটা পথ চলবো সন্তানকে নিয়ে। অনেকটা একলা চলার মত।

এদিকে ‘ওপারে চন্দ্রাবতী’, ‘কানাগলি’ ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ-২’ নামের তিনটি সিনেমাতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন অপু। শুটিং শুরুর আগে নিজেকে ভালো ভাবে প্রস্তুত করতে ব্যস্ত রয়েছেন নায়িকা।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘ওপারে চন্দ্রাবতী’, ‘কানাগলি’ ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ-২’ নামের তিনটি সিনেমাতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। এগুলোর মধ্যে কানাগলি সিনেমাতে আগে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। তাই এই সিনেমা দিয়েই কাজ শুরু করতে চাই। তবে তার আগে শারীরিকভাবে পুরোপুরি প্রস্তুত হতে চাই। নিয়ম মাফিক খাওয়া-দাওয়া, ব্যায়াম করছি। কাজের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হতে আরও মাস দেড়েক লাগবে। আশা করি আগামী মাসের শেষের দিকে শুটিং শুরু করতে পারব।’

এদিকে অপু বেশ কিছু টেলিভিশন ও মঞ্চে শো করেছেন এবং করে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে তিনটি কোম্পানির শুভেচ্ছাদূত হয়েছি। টেলিভিশনের কিছু অনুষ্ঠান, কিছু বড় মঞ্চ শো করছি। তবে এসব অনুষ্ঠান সিনেমাকেন্দ্রিক। ফলে কাজগুলো করতে সহজও হচ্ছে।’

উল্লেখ্য, অপু বিশ্বাস ২০০৫ সালে অবন্তি নামে আমজাদ হোসেন পরিচালিত কাল সকালে সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে পদার্পণ করেন। পরের বছর এফআই মানিক পরিচালিত কোটি টাকার কাবিন সিনেমাতে প্রধান অভিনেত্রী হয়ে শাকিব খানের বিপরীতে অভিনয় করেন। সিনেমাটি ব্যবসা সফল হয় এবং অপু বিশ্বাস রাতারাতি তারকায় রূপান্তরিত হন। শীর্ষ নায়ক শাকিব খানের সঙ্গে তার জুটি দর্শকদের গ্রহণযোগ্যতা পেলে এফআই মানিক এই জুটিকে নিয়ে একই বছরে ‘পিতার আসন’, ‘চাচ্চু’, ও ‘দাদীমা’ চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন।

২০০৭ সালে অপু মান্নার বিপরীতে মেশিনম্যান সিনেমাতে এবং পুনরায় শাকিব খানের বিপরীতে ‘কাবিননামা’ সিনেমাতে অভিনয় করেন।

পরের দুই বছরে শাকিব-অপু জুটির আমাদের ‘ছোট সাহেব’ (২০০৮), ‘আমার জান আমার প্রাণ’ (২০০৮), ‘তুমি স্বপ্ন তুমি সাধনা’ (২০০৮), ‘মনে প্রাণে আছ তুমি’ (২০০৮), ‘ভালোবাসার লাল গোলাপ’ (২০০৯), ‘মন যেখানে হৃদয় সেখানে’ (২০০৯), ‘জান আমার জান’ (২০০৯), ‘মনে বড় কষ্ট’ (২০০৯), ‘মায়ের হাতে বেহেশতের চাবি’ (২০০৯) এবং ‘ও সাথী রে’ (২০০৯) সহ বেশ কিছু ব্যবসা সফল সিনেমা উপহার দেন হয়।

২০১০ সালে জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত ‘ভালোবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না’ এবং বদিউল আলম খোকন পরিচালিত ‘নিঃশ্বাস আমার তুমি’ চলচ্চিত্র দুটি ব্লকবাস্টার হিট হয়। বদিউল আলম খোকন পরিচালিত ‘নাম্বার ওয়ান শাকিব খান’ ব্যবসা সফল হয় এবং ঢালিউডের সর্বকালের সবচেয়ে ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রের সেরা দশে অবস্থান করে।

এছাড়া ‘চাচ্চু আমার চাচ্চু’, ‘টপ হিরো’, ‘পরান যায় জ্বলিয়া রে’, ‘হায় প্রেম হায় ভালোবাসা’, ‘প্রেম মানেনা বাঁধা’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। সবকয়টি চলচ্চিত্রে তার বিপরীতে অভিনয় করেন শাকিব খান।

২০১১ সালে তিনি অমিত হাসান প্রযোজিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘কে আপন কে পর’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এছাড়া শাকিব খানের বিপরীতে তার অভিনীত ‘কোটি টাকার প্রেম’, ‘কিং খান’, ‘আদরের জামাই’, ‘প্রিয়া আমার জান’, ‘তোর কারণে বেঁচে আছি’, ‘একবার বলো ভালোবাসি’ এবং ‘মনের ঘরে বসত করে’ মুক্তি পায়। ২০১২ সালে শাকিব খানের বিপরীতে ‘এক টাকার দেনমোহর’, ‘এক মন এক প্রাণ’, ‘জিদ্দি মামা’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এই বছর ঈদুল ফিতরে তার অভিনীত একটি সিনেমা ‘ঢাকার কিং’ এবং ঈদুল আযহায় দুটি সিনেমা ‘বুক ফাটেতো মুখ ফোটেনা’ ও ‘দুর্দর্ষ প্রেমিক’ মুক্তি পায়।

২০১৩ সালে অপু শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দেবদাস উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত একই নামের চলচ্চিত্রে পার্বতী চরিত্রে অভিনয় করেন। চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত এই চলচ্চিত্রে তার সহ-অভিনয়শিল্পী ছিলেন শাকিব খান ও মৌসুমী। এছাড়া তিনি ‘মাই নেম ইজ খান’ ও ‘প্রেমিক নাম্বার ওয়ান’ সিনেমাতে অভিনয় করেন।

পরের বছর ‘ভালোবাসা এক্সপ্রেস’, ‘সেরা নায়ক’, ‘দুই পৃথিবী’, ‘ডেয়ারিং লাভার’, ‘হিটম্যান’, ‘হিরো : দ্যা সুপারস্টার’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ওই বছর ঈদুল ফিতরে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘হিরো : দ্যা সুপারস্টার’ ব্যবসাসফল হয় এবং ঢালিউডের সর্বকালের সবচেয়ে ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রের সেরা দশে স্থান করে নেয়।

২০১৫ সালে অপু শাকিব খানের বিপরীতে ‘রাজা বাবু’, ‘রাজা ৪২০’ ও ‘লাভ ম্যারেজ’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। পরের বছর ঈদুল ফিতরে মুক্তি পায় তার অভিনীত ‘সম্রাট’। মুহম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ পরিচালিত এই চলচ্চিত্রে তার বিপরীতে অভিনয় করেন শাকিব খান ও কলকাতার ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত। সর্বশেষ তার অভিনীত ‘রাজনীতি’ চলচ্চিত্রটি ২০১৭ সালের ঈদুল ফিতরে মুক্তি পায়।

এসএ/