ঢাকা, শুক্রবার   ০৮ নভেম্বর ২০২৪,   কার্তিক ২৪ ১৪৩১

বিবিসির প্রতিবেদন

জাতীয় পার্টির নিয়ন্ত্রণ কার হাতে?

প্রকাশিত : ০১:৪৮ পিএম, ১ মার্চ ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০১:৪৯ পিএম, ১ মার্চ ২০১৮ বৃহস্পতিবার

বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিস্ময়কর এক নাম জাতীয় পার্টি। স্বাধীনতার মাত্র ১০ বছরের মধ্যেই দলটি রাষ্ট্রক্ষমতায় সওয়ার হন। ক্যান্টনমেন্ট থেকে সরাসরি রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসা দলটির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ টানা সাড়ে আট বছর দেশ শাসন করেছেন। তবে সংসদীয় গণতন্ত্রের যাত্রা হওয়ার পর থেকেই দলটি একেবারে খাদের কিনারায় গিয়ে ঠেকেছেন। এমতাবস্থায় দলটির নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। দলের হাইকমান্ড কেউ কারও আদেশ না মানায় জনমানুষের প্রশ্ন, জাতীয় পার্টির ঘুড়ির নাটাই কার হাতে?

এদিকে এখনো দেশের তৃতীয় বৃহত্তম দল জাতীয় পার্টি। প্রায় সাড়ে আট বছর শাসন করা দলটি পুনরায় রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়া তো দূরে থাক, জেলের বাইরে থাকায় যেন মূখ্য হয়েছে দলটির চেয়ারম্যানের। এতে দলের মধ্যেও নানান সময়ে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের একক আধিপত্য মানতে পারছেন না তাঁর স্ত্রী রওশন এরশাদ। আবার দলের হাই কমান্ডের বেশ কয়েকজন নেতা বর্তমান সরকারের মন্ত্রীসভার সদস্য হওয়ায় তারা না মানছেন রওশান এরশাদকে আবার না মানছেন পার্টি প্রধান হুম এরশাদকে। দলীয় আদেশ না মানা এসব নেতাদের খুঁটির জোর কোথায় তা নিয়ে দলের মধ্যেই দেখা দিয়েছে সন্দেহ।

বিষয়টি সামনে এসেছে সংসদের বিরোধীদলীয় প্রধান রওশান এরশাদের সংসদে দেওয়া এক বক্তব্যকে কেন্দ্র করে। রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির মন্ত্রীদের মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাওয়ার পরই এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তাই জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের প্রশ্ন, সত্যিকার অর্থেই জাতীয় পার্টির নিয়ন্ত্রণ এখন কার হাতে?

জানা যায়, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রী এবং জাপার (জাতীয় পার্টি) সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ বলেন, "প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলাম, আমাদের মন্ত্রীগুলোকে উইথড্র করে নেন। আমাদের বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে দিন। কিন্তু আমি জানি না, কেন সেটা হয়নি। আর যদি সেটা না-ই হয়, তাহলে আমাদের ৪০ জনকে আপনাদের সরকারে নিয়ে নেন। তাহলে সংসদে বিরোধীদল দরকার নেই।

এদিকে পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান হিসেবে দলের মন্ত্রীদের পদত্যাগের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনার বিষয়ে অনেকেই প্রশ্ন তোলেছেন তাহলে জাতীয় পার্টির অবস্থানটা আসলে কী? আর ওইসব মন্ত্রীদের খুঁটির জোর কোথায়? তাঁরা কি নিজেদের সরকারি দলের সদস্য মনে করছেন? নাকি বিরোধী দলের পরিচয় দিয়ে সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন? তাঁরা কি দলের চেয়ারম্যান ও কো-চেয়ারম্যানকে পাত্তা দিচ্ছেন না? নাকি তাঁদের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে বলে মনে করছেন? এমন হাজারো প্রশ্ন দেখা দিয়েছে দলটির নেতাকর্মী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে।

এদিকে অনেকেই প্রশ্ন তোলেছেন, মন্ত্রীদের পদত্যাগ করার ব্যাপারে তিনি কোন কথা বলতে পারছেন না কেন? দলের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়ে রওশন এরশাদের এমন মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে দলের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোন প্রতিক্রিয়া জানাতে রাজি হননি।

২০১৪ সালের নির্বাচনের পর থেকেই বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টির অবস্থান নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। কিন্তু এবারে নির্বাচনের বছরে এসে রওশন এরশাদের বক্তব্যকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা নানাভাবে দেখছেন।

লেখক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমেদ বলছিলেন, "আমার কাছে পুরো বিষয়টাই হাস্যকর মনে হয়। জাতীয় পার্টি কি সিদ্ধান্ত নেবে, কিভাবে চলবে - এই সিদ্ধান্তটা জাতীয় পার্টি নিতে পারছে না। এটা সম্ভবত সরকারি দল আওয়ামী লীগের কাছ থেকেই আসছে"।

তিনি আরো বলেন, "প্রধানমন্ত্রী বা আওয়ামী লীগের ইচ্ছা এবং পছন্দ অনুযায়ী কিন্তু জাতীয় পার্টি চলছে, সুতরাং সে ছাঁচে পড়ে প্রধানমন্ত্রী বা আওয়ামী লীগ যেভাবে চাইবে সেভাবেই তারা চলবে"।

জাতীয় পার্টির তিনজন সদস্য এখন মন্ত্রিসভার সদস্য। গতকাল এই বক্তব্য দেয়ার সময় দুইজন সংসদে উপস্থিত ছিলেন। রওশন এরশাদ এই বক্তব্য যখন দিচ্ছিলেন তখন পাশ থেকে একজন এই আলোচনা বাদ দিতে বলেন। কিন্তু তিনি বলেন, "এটা তো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, বাদ দেব কেন?"

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বিরোধীদলীয় নেত্রী বলেন, "এটা যদি আপনি করতেন, জাতীয় পার্টি বেঁচে যেত। জাতীয় পার্টি সম্মানের সঙ্গে থাকতে পারত। আমরা এখন সম্মানের সঙ্গে নেই। এদিকে রওশন এরশাদ বক্তব্যে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, "আমরা যখন বাইরে যাই, তখন সবাই বলে, তুমি কোথায় আছ, সরকারে না বিরোধী দলে? আমরা তো বলতে পারি না"।

তবে ঘটনা যাই হোক জাতীয় পার্টির করণীয় মূলত ঠিক করে দিচ্ছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ, এমনটাই দাবি বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক বোদ্ধার। তারা আরও জানায়, জাতীয় পার্টির মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দলও এক্ষেত্রে রসদ যুগিয়েছে বেশ। আর তাই দলটির বড় একটি অংশ সরকারের সঙ্গে মিলেঝুলে সরকারে থাকতে চাইছে। আরেকটি অংশ স্বতন্ত্র অবস্থান নিয়ে রাজনীতির মাঠে নিজেদের অবস্থান জানান দেওয়ার পক্ষে। তবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ অথবা সংসদের বাইরের দল বিএনপির সঙ্গে দফরফা করে চলার পক্ষে আছেন অনেক নেতা।

সূত্র: বিবিসি   

এমজে/