ঢাকা, শুক্রবার   ০৮ নভেম্বর ২০২৪,   কার্তিক ২৩ ১৪৩১

পাঁচ ধরনের ডায়াবেটিস সনাক্ত করেছে গবেষকেরা

প্রকাশিত : ০৮:১৬ পিএম, ২ মার্চ ২০১৮ শুক্রবার | আপডেট: ০৭:৪৬ পিএম, ৩ মার্চ ২০১৮ শনিবার

নতুন এক গবেষণায় ডায়াবেটিসের পাঁচটি ধরণ আবিষ্কার করেছেন গবেষকেরা। আর এই পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন ধরণের ডায়াবেটিসের জন্য পাঁচটি আলাদা চিকিৎসা পদ্ধতি হতে পারে বলেও জানায় গবেষকরা। এ গবেষণার আগ পর্যন্ত ডায়াবেটিসের দুইটি ধরণ আছে বলে জানত চিকিৎসকেরা।

রক্তে অনিয়ন্ত্রিত গ্লুকোজ বা সুগারের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে ডায়াবেটিসকে এখন পর্যন্ত টাইপ-১ এবং টাইপ-২ এই দুই ভাগে বিভক্ত।

কিন্তু সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডের গবেষকরা মনে করছেন, তাঁরা ডায়াবেটিস সম্পর্কিত আরও জটিল একটি চিত্র খুঁজে পেয়েছেন। আর এর ফলে এই রোগের চিকিৎসায় এক এক রোগীকে আলাদা আলাদাভাবে চিকিৎসা দেওয়া যেতে পারে।

সুইডেনের লান্ড বিশ্ববিদ্যালয় ডায়াবেটিস কেন্দ্র এবং ফিনল্যান্ডের ইন্সটিটিউট ফর মলিক্যুলার মেডিসিন এর যৌথ এই গবেষণায় ১৪ হাজার ৭৭৫ জন রোগীর গবেষণা চালানো হয়। বিভিন্ন ধাপে তাদের রক্তের বিশ্লেষণও করেন তারা।

আর তা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী ডায়াবেটিস রোগীদের পাঁচটি নির্দিষ্ট ক্লাস্টারে ভাগ করা করেছেন তারা। এগুলো হল-

ক্লাস্টার ১ - এটা মোটা দাগে টাইপ ১ ধরনের তীব্র মাত্রার অটোইমিউন ডায়াবেটিস। এটি তখনই মানুষকে আক্রান্ত করে যখন সে বয়সে তরুণ এবং তাকে দেখতে স্বাস্থ্যবান মনে হয়। এই ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের শরীরে ইনসুলিন তৈরি হয় না।

ক্লাস্টার ২ - এরা ওই ধরণের ইনসুলিন-ঘাটতির ডায়াবেটিস রোগী যাদেরকে শুরুতে ক্লাস্টার ১ এর রোগীদের মতোই মনে হয়। এরা তরুণ, এদের ওজন নিয়ন্ত্রণে, কিন্তু ইনসুলিন উৎপাদনে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে-যদিও এদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় কোন গলদ নেই।

ক্লাস্টার ৩ - এরা তীব্র ইনসুলিন-প্রতিরোধী ডায়াবেটিস রোগী, যারা সাধারণত অতিরিক্ত মোটা। এরা শরীরে ইনসুলিন তৈরি করছে, কিন্তু এদের শরীর সেই ইনসুলিনে সাড়া দেয় না।

ক্লাস্টার ৪-এটি ওজনের সঙ্গে সম্পর্কিত হালকা-ধরণের ডায়াবেটিস, যা অসম্ভব স্থূলকায় মানুষের মধ্যে দেখা যায়। এ ধরণের মানুষ আবার মেটাবোলিজমের দিক থেকে ক্লাস্টার ৩ ধরনের মানুষদের চেয়ে বরং স্বাভাবিক মানুষদের কাছাকাছি।

ক্লাস্টার ৫-বয়সের সঙ্গে সম্পর্কিত হালকা ধরণের ডায়াবেটিস, যা ওই ধরণের মানুষদের হয় যখন তাদের বয়স বেড়ে যায়। অর্থাৎ এই রোগীরা অন্য গ্রুপগুলোর মানুষদের তুলনায় বেশী বয়স্ক, তবে এদের ডায়াবেটিসের মাত্রা কম।

সম্প্রতি ল্যানসেট ডায়াবেটিস অ্যান্ড এন্ডোক্রিনোলজিতে প্রকাশিত এই গবেষণাপত্র থেকে এসব তথ্য জানা যায়।

গবেষক দলের অন্যতম সদস্য, অধ্যাপক লিফ গ্রুপ বার্তা সংস্থা বিবিসিকে বলেন, "এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, আমরা রোগীদের একেবারে যথাযথ ঔষধ দেয়ার ক্ষেত্রে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাচ্ছি।"

তিনি আরও বলেন, যে তিন ধরণের ডায়াবেটিস তীব্র মাত্রার, তার চিকিৎসা অন্য দুই ধরণের ডায়াবেটিসের চেয়ে জোরালোভাবে করা যেতে পারে। ক্লাস্টার ২ ধরণের রোগীদেরকে এখনকার টাইপ ২ হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে, কারণ তাদের অটোইমিউন রোগ নেই।

পাশাপাশি গবেষণায় এমন ধারণাও পাওয়া যাচ্ছে যে, বেটা-সেলের কোন খুঁতই এসব রোগের অন্যতম কারণ। তবে আক্রান্ত ব্যক্তিরা যে সবাই স্থুলকায় এমনটা নয়।আর তাদের চিকিৎসা ওই ধরণের রোগীদের মতো হওয়া দরকার যারা এখন টাইপ ১ হিসেবে চিহ্নিত।

গবেষণায় আরও বলা হয়, ক্লাস্টার ২ রোগীদের অন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশী।

আর ক্লাস্টার ৩ রোগীদের বেশী ঝুঁকি থাকে কিডনি সম্পর্কিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার।ফলে বেশি করে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় কয়েকটি ক্লাস্টারের রোগীরা উপকৃত হতে পারেন বলেও বলা হয় ঐ গবেষণা পত্রে।

এ গবেষণা বিষয়ে লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের পরামর্শক ও ক্লিনিক্যাল গবেষক ড. ভিক্টোরিয়া সালেম বলেন, বেশীরভাগ বিশেষজ্ঞই জানতেন যে ডায়াবেটিসকে টাইপ ১ এবং টাইপ ২ - এই দু`ভাগে ভাগ করে যে শ্রেণীবিন্যাস করা হয়, তা "খুব একটা সঠিক নয়"।

"এখনো অনেক কিছুই অজানা। এমনও হতে পারে যে জিন এবং স্থানীয় পরিবেশের কারণে বিশ্বজুড়ে ডায়াবেটিসের ৫০০ ধরণের সাব-গ্রুপ রয়েছে।"

"গবেষকদের বিশ্লেষণে পাঁচটি ক্লাস্টার পাওয়া গেছে, কিন্তু এই সংখ্যা বাড়তেও পারে," বলেছেন এই বিজ্ঞানী।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বে প্রতি ১১ জনে একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। আর একবার আক্রান্ত হলে রোগীদের হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, অন্ধত্ব, কিডনি অচল হয়ে পড়া এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে ফেলার মতো ঝুঁকি বেড়ে যায়।

সূত্র: বিবিসি

//এস এইচ এস/টিকে