ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

বিবিসির প্রতিবেদন

বাংলাদেশের ডাক্তাররা রোগীদের সময় দেন না যে কারণে

প্রকাশিত : ০৪:০৯ পিএম, ৪ মার্চ ২০১৮ রবিবার | আপডেট: ০৪:১১ পিএম, ৪ মার্চ ২০১৮ রবিবার

রোগীদের চিকিৎসায় বাংলাদেশের চিকিৎসকেরা গড়ে যে সময় দেন সেটি এক মিনিটও নয়। আর তাতে কতটুকুই বা রোগ নির্ণয় আর চিকিৎসা সম্ভব হচ্ছে সেটি নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। দেশের কয়েকটি মেডিকেলে সরেজমিনে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। এতে কেন ডাক্তাররা রোগীদের সময় দিতে চান না তার সুলোক সন্ধান করা হয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সকাল থেকে বিভিন্ন বিভাগে ভিড় করেন সারা দেশ থেকে আসা নানা ধরনের রোগী এবং তাদের সঙ্গে থাকা আত্মীয় স্বজন।

মোহাম্মদ আবুল কাশেম বগুড়া থেকে এসেছেন ভাতিজাকে নিয়ে। কিন্তু তাকে ভর্তিই করাতে পারেননি। অনেক দূর থেকে এসে তাই হতাশ হয়ে যাচ্ছেন অন্য কোথাও।

নোমান গাজী ময়মনসিংহ এসেছেন। তার পিত্ত-থলীর পাথর হয়েছে সেটির চিকিৎসার জন্য। তিনি বলছেন, ডাক্তাররা বাংলাদেশে রোগীদের যে সময় দেন না তার প্রমাণ আমি। ডাক্তার কখন দেখবেন এখনো বলা যাচ্ছে না। এখন থেকে প্রায় চার ঘণ্টা আগে এসেছি।

এই রোগী ও আত্মীয়দের গলায় স্বভাবতই হতাশার সুর। যার কারণ ফুটে উঠেছে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালের জরিপে। যেখানে রোগী দেখায় সময় দেওয়ার ক্ষেত্রে পাকিস্তান ও ভারত বাংলাদেশের থেকে এগিয়ে। অথচ বাংলাদেশে রোগী প্রতি গড়ে মোটে ৪৮ সেকেন্ড সময় দেওয়া হয়। মিনিটের কাটায়ও তা পৌছায় না চিকিৎসকের সময়। যেখানে এই জরিপে সুইডেনের মতো সাড়ে বাইশ মিনিট না হলেও আবুল কাশেমের মতে অন্তত দশ মিনিট তো দেওয়া উচিত। কিন্তু বহির্বিভাগে ডাক্তারদের কক্ষে গেলে দেখা যায় সেই সুযোগ মেলা খুব কঠিন। ডাক্তারের মনোযোগ পেতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে রোগীদের।

কিন্তু কেন এই পরিস্থিতি তা জানতে চাইলে ঢামেকের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক শারমিন সুলতানা চৌধুরী বিবিসিকে বলেন, যেমন ধরুণ আমাদের রুমে আমরা এখন দুজন আছি। যদি এই রুমে দুইশ’ রোগী হয়, আর আমার কর্মঘণ্টা যদি আটটা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত ধরি তাহলে আপনি নিজেই হিসেব করুর এক একজনকে ক`জন করে রোগী দেখতে হয়। মুল সমস্যাই হল জনসংখ্যা।

কিন্তু প্রাইভেট ক্লিনিক বা হাসপাতালে অনেক টাকা ভিজিট দিয়েও যথেষ্ট মনোযোগ পাওয়া যায় না বলেও অভিযোগ রয়েছে। ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালের জরিপ মতে ভারতে চিকিৎসকেরা রোগীকে প্রায় আড়াই মিনিট সময় দেন। সেটিও খুব কম। তবুও সেখানেও বাংলাদেশ থেকে বছরে হাজার হাজার রোগী যাচ্ছেন চিকিৎসার জন্য। বাংলাদেশে ডাক্তারদের উপরে রোগীদের যেন আস্থার সংকট রয়েছে। জনসংখ্যার অনুপাতে চিকিৎসকের সংখ্যা কম হওয়াই মুল সমস্যা হিসেবে মনে করছেন চিকিৎসকেরা। শিশুদের চিকিৎসক রাজেশ মজুমদার বলছেন রেজিস্টার্ড চিকিৎসক বাড়লে সেবার মানও বাড়বে।

গত মাসেই জাতীয় সংসদে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন দেশে সরকারি নানা ধরনের স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে সাড়ে ছয় হাজার রোগী প্রতি একজন করে চিকিৎসক।

সূত্র: বিবিসি

একে// এআর