সোনালী আঁশে সুদিন ফিরছে
প্রকাশিত : ০৬:৩২ পিএম, ৪ মার্চ ২০১৮ রবিবার | আপডেট: ০৭:১২ পিএম, ৪ মার্চ ২০১৮ রবিবার
সোনালী আঁশের সুদিন ফিরে আসছে। একদিকে সরকারি বন্ধ পাটকলগুলো চালু হচ্ছে, অন্যদিকে বেসরকারি খাতে গড়ে উঠছে নতুন পাটকল। দেশে পাট পণ্যের ব্যবহার বাড়ার পাশাপাশি বাড়ছে বিদেশে রফতানি। পরিবেশ ও কৃষকদের চাহিদা বিবেচনায় নতুন নতুন জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করছে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট।
বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) নিয়ন্ত্রণাধীন বন্ধ পাটকল চালু, পাটকলগুলোর আধুনিকায়নে (বিএমআরই) পদক্ষেপ পাটের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ করেছে সরকার। এর ফলে দেশে গড় পাট উৎপাদন বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে বলে জানায় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। এর মধ্য দিয়ে সোনালী আঁশের হাত ধরে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়েছে।
বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম জানান, দেশের প্রায় চার কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পাট খাতের উপর নির্ভরশীল। মানুষ পাট পণ্যকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করছে। এক বছর আগেও বহুমুখী পাটপণ্যের সংখ্যা ছিল ১৩৫টি। এখন তা বেড়ে ২৩৫টি হয়েছে। তিনি বলেন, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন উদ্যোগ এবং নিরন্তর চেষ্টায় পাট ও পাটজাত পণ্যের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, নতুন পাটপণ্য উদ্ভাবনে সরকার বিজেএমসিকে সার্বিক সহযোগিতা করছে। এর ফলে দেশে গড় পাট উৎপাদন বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
জানা গেছে, বর্তমানে দেশে প্রতি বছর গড়ে ৮৫ থেকে ৯০ লাখ বেল কাঁচাপাট উৎপন্ন হচ্ছে। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে অবশিষ্ট পাট ও পাটজাত পণ্য বিদেশে রফতানি হচ্ছে। ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে উৎপাদিত পাটের পরিমান যথাক্রমে ৮৮ দশমিক ৯৯ লাখ ও ৯১ দশমিক ৯৯ লাখ বেল। কাঁচা পাট রফতানি করে ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে যথাক্রমে ১ হাজার ৫৪ কোটি ৪০ লাখ ও ১ হাজার ৩৪২ কোটি ৭২ লাখ টাকা আয় হয়েছে।
দেশের প্রায় চার কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পাট খাতের উপর নির্ভরশীল। মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণের ফলে পাট ও পাটজাত পণ্যের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বেড়েছে।
সোনালী আশেঁর সোনার দেশ, পাট পণ্যের বাংলাদেশ’এ প্রতিপাদ্য নিয়ে এবার জাতীয় পাট দিবসটি উদযাপিত হবে। পাট দিবসের গুরুত্ব ও পাট সংক্রান্ত বিষয়ে আগ্রহ সৃষ্টির লক্ষ্যে স্কুলের শিক্ষার্থীদের রচনা প্রতিযোগিতা ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। দুই গ্রুপে এ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ছয়জনকে পুরস্কার তুলে দেবেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া ১১টি ক্যাটাগরিতে আরো ১২ জন ব্যক্তির হাতে প্রধানমন্ত্রী পুরস্কার তুলে দেবেন।
নানা উদ্যোগ: বিজেএমসির দুর্নীতি, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা সমূলে নির্মূল করা এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো বেল ভিত্তিক পাটক্রয় ও ডিজিটাল ক্রয় ব্যবস্থাপনা চালু করা হয়েছে। ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে পাটক্রয় কেন্দ্র সংখ্যা আগের ১৮০ টির স্থলে ৭৩ টি করা হয়েছে। এর ফলে একদিকে পাটক্রয়ের ব্যয় হ্রাস পেয়েছে অপরদিকে কেন্দ্রীয়ভাবে পরিবীক্ষন সম্ভব হয়েছে জানান সংশ্লিষ্টরা।
পাট উৎপাদনকারী ৪৪ টি জেলার ২০০ টি উপজেলায় নির্বাচিত পাটচাষীদের প্রত্যায়িত ও ভিত্তি পাটবীজ, রাসায়নিক সার ও কীটনাশক, রিবোনার, হাতুরী ও প্রশিক্ষণ সুবিধা প্রদান করেছে মন্ত্রণালয়। আধুনিক প্রযুক্তি এবং উচ্চফলনশীল পাটবীজ ব্যবহার করায় পাটের একর প্রতি ফলনও বেড়েছে।
‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন ২০১০’ ও ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার বিধিমালা ২০১৩’ এর মাধ্যমে যেকোনো পরিমাণ ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার, চিনি, মরিচ, হলুদ, আদা, পেয়াজ, রসুনসহ ১৭টি পণ্য সংরক্ষণ, পরিবহন ও বাজারজাতকরণে পাটজাত মোড়ক বাধ্যতামূলক ব্যবহার নিশ্চিত করেছে সরকার।
এক নজরে পাটজাত পণ্য উৎপাদন, রফতানি ও রফতানি আয়: গত ২০১০-১১ অর্থবছরে পাটজাত পণ্য উৎপাদন হয়েছিল ৭ লাখ ২৯ মেট্রিক টন। ওই সময় রফতানির পরিমাণ ছিল ৫ লাখ ৯৬ মেট্রিক টন। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ১০৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। ২০১১-১২ অর্থবছরে পাটজাত পণ্য উৎপাদন হয়েছিল ৮ লাখ ৮৫ মেট্রিক টন। ওই সময় রফতানির পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ৩৫ মেট্রিক টন। টাকার পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৬১৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। ২০১২-১৩ অর্থবছরে পাটজাত পণ্য উৎপাদন হয়েছিল ৯ লাখ ৭৭ মেট্রিক টন। একই সময় রফতানির পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ৬৮ মেট্রিক টন। টাকার পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ১৬২ কোটি ৬২ লাখ টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৯ লাখ ৮৩ মেট্রিক টন পাটজাত পণ্য উৎপাদন হয়েছিল। ওই সময় রফতানির পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ৮মেট্রিক টন। আয়ের পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ২২৪ কোটি ২১ লাখ টাকা।
২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৮ লাখ ৬৫ মেট্রিক টন পাটজাত পণ্য উৎপাদন হয়েছিল। ওই সময় রফতানির পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ১৮মেট্রিক টন। টাকার অঙ্কে ছিল ৫ হাজার ৬০২ কোটি ১৬ লাখ টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে পাটজাত পণ্য উৎপাদন হয়েছিল ৯ লাখ ৬৩ মেট্রিক টন। ওই সময় রফতানির পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ২৫মেট্রিক টন যা টাকার পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৬১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৯ লাখ ৮৩ মেট্রিক টন পাটজাত পণ্য উৎপাদন হয়েছিল। ওই সময় রফতানির পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ৪ মেট্রিক টন। যা টাকার পরিমাণে ছিল ৬ হাজার ৪৩০ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
/ আর / এআর