ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

লোকসানে সরকারি পাটকল মুনাফা করছে বেসরকারি কলগুলো

এসএম আলমগীর

প্রকাশিত : ০৮:১২ পিএম, ৪ মার্চ ২০১৮ রবিবার | আপডেট: ১২:১৭ পিএম, ৫ মার্চ ২০১৮ সোমবার

বেসরকারি পাটকলগুলো লাভের মুখ দেখলেও প্রতি বছর লোকসান বাড়ছে দেশের সরকারি পাটকলগুলোতে। প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে বিজেএমসির অধীন ২৬ সরকারি পাটকলের। এভাবে গত ১০ বছরে সরকারি পাটকলে লোকসানের পরিমাণ প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ জুটমিল করপোরেশন (বিজেএমসি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, দীর্ঘ ২৯ বছর পর গত ২০১০-১১ অর্থবছরে ১৯ কোটি ৫৩ লাখ টাকা মুনাফা করে বিজেএমসি। কিন্তু পরের বছর থেকেই আবার লোকাসন শুরু। তার পর আর লাভের মুখ দেখা হয়নি।

এ বিষয়ে বিজেএমসির সচিব মুহাম্মদ সালেহউদ্দিন বলেন, “লাভের অন্যতম একটি অন্তরায় ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদ। কৃষিজাত পণ্যের সুদের হার ৭ শতাংশ। কিন্তু পাট কৃষিজাত পণ্য হলেও বিজেএমসি ১৫ থেকে ১৬ শতাংশ হারে সুদ দিতে হয়। ফলে সুদের ওপর সুদ দিতে হচ্ছে। এতে পুঞ্জীভূত লোকসান বেড়েই চলেছে। এর বাইরে আরও কিছু কারণে লাভের মুখ দেখতে পারছে না সরকারি পাটকলগুলো। তবে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি পাটকলগুলোকে কিভাবে লাভজনক করা যায়।”
 
গত ৯ বছরে বিজেএমসির পাটকলগুলোর লাভ-ক্ষতির পরিসংখ্যান ঘাঁটলে দেখা যায়, ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল-এই ৯ বছর পাটকলগুলোতে লোকসানের পরিমাণ ২ হাজার ৯১৪ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। বিজেএমসি সূত্রে পাওয়া তথ্য দেখা যায়, ২০০৯ সালে সরকারি পাটকলগুলোতে লোকসান হয় ৩০৯ কোটি ৫৫ লাখ ৪ হাজার টাকা। ২০১০ সালে লোকসান ২৭৫ কোটি ২৩ লাখ ৭ হাজার টাকা, ২০১২ সালে লোকসান ৭৮ কোটি ৩৫ লাখ ১৮ হাজার টাকা, ২০১৩ সালে লোকসান ৩৯৬ কোটি ৯৭ লাখ ১২ হাজার টাকা, ২০১৪ সালে লোকসান ৫১৩ কোটি ৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা, ২০১৫ সালে লোকসান ৭২৯ কোটি ১ লাখ ৬১ হাজার টাকা, ২০১৬ সালে লোকসান ৬৫৬ কোটি ৮১ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং গত বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে বিজেএমসির লোকসান হয় ৪৮১ কোটি ৫০ লাখ ৮৮ হাজার টাকা।
আর ২০১১ সালে বিজেএমসি লাভ করে ১৯ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এর আগে সর্বশেষ ১৯৮২-৮৩ অর্থবছরে ২৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা মুনাফা করে প্রতিষ্ঠানটি। এরপর নানা প্রতিবন্ধকতায় মন্দার সাগরে ডুবে যায় পাটকলগুলো।
জানা গেছে, বিজেএমসির ইতিহাসে সর্বোচ্চ মুনাফা হয় ১৯৭৯-৮০ অর্থবছরে ১০৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এরপর ৮০-৮১ অর্থবছরে ৩৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। কিন্তু ৮০`র দশকে সিনথেটিক পণ্যের ব্যবহার ঢুকে যাওয়ার পর পাট খাতে ধস শুরু হয়। সিনথেটিক পণ্য সস্তা হওয়ায় পাটজাত পণ্যের চাহিদা কমে যায়। ফলে ক্রমেই বাজার হারাতে শুরু করে এ শিল্প। অন্যদিকে ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় সুদ বাড়তে থাকে। ফলে প্রতিবছর পুঞ্জীভূত লোকসানও বাড়তে থাকে। তবে বিশ্ব সচেতনতা সৃষ্টি হওয়ায় প্রাকৃতিক পণ্যের ওপর আবারো চাহিদা তৈরি হচ্ছে। ২০১০ সালে পণ্যে ও মোড়কীকরণে পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহার বাড়াতে সংসদে ‘মেন্ডেটারি প্যাকেজিং অ্যাক্ট’ পাস হয়। তবে তা এখনো পুরোপুরি কার্যকর না হলেও বহির্বিশ্বে পাটজাত পণ্যের মোড়কীকরণ ও পণ্যের ব্যবহার ব্যাপক বেড়েছে। ফলে বিজিএমসির পণ্যের চাহিদাও তৈরি হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় কৃষকও পাটচাষে আগ্রহী এবং বিপণন এরিয়াও বেড়ে গেছে। তাই আবারও লাভের মুখ দেখার সম্ভাবনা রয়েছে সরকারি পাটকলগুলোর।

টিকে