ঢাকা, শুক্রবার   ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪,   আশ্বিন ৫ ১৪৩১

মৃত্যুর মিছিল আর রক্তস্রোতে ভাসছে সিরিয়া

প্রকাশিত : ১২:৫০ পিএম, ৫ মার্চ ২০১৮ সোমবার | আপডেট: ১২:৫২ পিএম, ৫ মার্চ ২০১৮ সোমবার

রক্ত আর লাশের স্রোতগঙ্গায় পরিণত হয়েছে সিরিয়া। একদিকে স্বজনের আর্তনাদ, আহাজারি অন্যদিকে নিজে বাঁচার আকুতি সব মিলিয়ে সিরিয়ার আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠেছে। তবুও যেন থামছে না লাশের মিছিল। শিশুদের আর্তনাদ, অমানবিক মৃত্যু বিশ্ববিবেককে নাড়িয়ে দিলেও মন টলাতে পারছে না সিরীয় সরকার ও রুশ বাহিনীর।

এতে লাশের সংখ্যাও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। মৃত্যুর মিছিল হচ্ছে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর। তবে সেখানে মরে যাওয়া মানে চিরকালের জন্য বেঁচে যাওয়া বলে মনে করছেন সেখানকার স্থানীয়রা। মায়ের আর্তনাদ তার সন্তানটি যেন এই নিদারুণ যন্ত্রণা থেকে বেঁচে যান। আর যন্ত্রণা থেকে বাঁচার একমাত্র পথ মৃত্যু। তা জেনেও মা তার সন্তানের সেই মৃত্যুই কামনা করছেন। সিরিয়ায় পরিস্থিতি এখন এমনই ভয়াবহ যে, প্রতিটি বাবা-মা আজ তাদের সন্তানদের মৃত্যু কামনা করছেন।

গত কয়েকদিনে আসাদ বাহিনী ও রুশ বাহিনীর বোমা বৃষ্টিতে ৯৫ শতাংশ ভবন-ই ধসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ হামলায় অন্তত দেড় হাজারেরও বেশি বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। আর প্রতিদিনই সে তালিকায় যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন নাম। আজ ঘুম ভাঙলেই চোখের সামনে লাশের পাহাড়। স্বজনদের বোবা গোঙানি, আর্তনাদ আর ঘরে-উঠোনে বোমা হামলার আতঙ্ক, মৃত্যুভয়- এসব নিয়েই দিন পাড় করছে সিরীয়রা। মধ্যপ্রাচ্যের ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষের অন্যতম বৃহত্তম দেশটি আজ পৃথিবীর সব থেকে বড় কবরস্থানে পরিণত হয়েছে। কেউ কেউ এটাকে পৃথিবীর দোযক বলে আখ্যা দিচ্ছেন।

প্রতিদিন সরকার-বিদ্রোহীদের গোলার আঘাতে মরছেন হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক। নারী, শিশু, বয়স্ক কেউ রেহাই পাচ্ছেন না। ক্ষমতা দখলের এ লড়াইয়ের বলি হচ্ছেন তাজা তাজা প্রাণ। বিমান হামলায় বৃষ্টির মতো বোমা নিক্ষেপে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে নিষ্পাপ শিশুদের দেহ। নারীহত্যা, শিশুহত্যা এখন সিরিয়ার প্রতিদিনের ঘটনা। কি অপরাধ এ শিশুদের? অপরাধ একটাই, তারা সিরিয়ার নাগরিক। শহরের অলিগলিতে সারি সারি লাশ, রক্তের স্রোত। বাতাসে মৃত মাংসের বিদঘুটে গন্ধ! শকুনিরা ছিড়েফেড়ে খাচ্ছে সেই রক্তমাখা লাশের মাংস।

সিরিয়ান নেটওয়ার্ক ফর হিউম্যান রাইটসের (এসএনএইচআর) মতে ২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সিরিয়াতে ৫ লাখের উপরে মানুষ মারা গেছেন। এদের মাঝে ৪ লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক রয়েছে। আর উদ্বাস্তু হয়েছে ১ কোটি ২০ লাখেরও বেশি মানুষ। ইউনিসেফ, এসএনএইচআর, হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে গত ৭ বছরে দেশটিতে শিশু মারা গেছে ২৪ হাজারের বেশি আর নারী ২৩ হাজার।

এরইমধ্যে সিরিয়ার পূর্ব ঘৌতায় হামলা আরও জোরদারের ঘোষণা দিয়েছেন আসাদ। সিরীয় সাধারণ নাগরিকরা পূর্ব ঘৌতা ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে যাওয়া শুরু করায় ইতোমধ্যে হামলার ধার আরও বাড়িয়েছে আসাদ বাহিনী। রয়টার্স জানিয়েছে, ইতোমধ্যে পূর্ব ঘৌতার এক-চতুর্থাংশ দখল করেছে সিরীয় সরকার। আর খুব শিগগিরই পুরো পূর্ব ঘৌতা পুনর্দখল করতে পারবে সিরিয়া সরকার, এমনটাই জানিয়েছে সংবাদ সংস্থাটি।

সূত্র: রয়টার্স, বিবিসি, আল-জাজিরা, আনাদুলো নিউজ এজেন্সি
এমজে/