‘ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতার কারণেই বেসরকারি পাটকলগুলো মুনাফায়’
প্রকাশিত : ০৪:৪০ পিএম, ৫ মার্চ ২০১৮ সোমবার | আপডেট: ০৭:১১ পিএম, ৫ মার্চ ২০১৮ সোমবার
বাংলাদেশের উত্থান-পতনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় জুড়ে আছে সোনালী আঁশ খ্যাত পাট। কৃষি সমৃদ্ধ এ দেশে পাটকে ঘিরে তাই গড়ে উঠেছে ছোড়-বড় অনেকগুলো কারখানা। যে কারখানায় উৎপাদিত পণ্য বিশ্ববাজারে কুড়িয়েছে সুনাম। শক্ত করেছে কৃষক ও দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে নানা দুর্বিপাক আর বিপর্যয়ে হারাতে বসেছিল পাটের সে সুনাম। তবে হাজারো বিপর্যয় ও প্রতিন্ধকতাকে পায়ে মাড়িয়ে আবারও সোনালী দিন ফিরছে সেই সোনালী আঁশ।
বর্তমানে দেশীয় বাজার বিকাশের পাশাপাশি বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি পাটের চাহিদা বাড়ছে। সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও তাৎপর্যতায় অভ্যন্তরীণ পর্যায়েও বাড়ছে পাটের ব্যবহার। পাটের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে রফতানি বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে দ্বিতীয়বারের মত জাতীয় পাট দিবস উদযাপন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আগামী ৬ মার্চ ২০১৮ এ দিবসের কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘সোনালী আশেঁর সোনার দেশ, পাট পণ্যের বাংলাদেশ’এ প্রতিপাদ্য নিয়ে এবার জাতীয় পাট দিবস উদযাপন করা হবে।
দেশের গৌরবের অধ্যায় জুড়ে থাকা এ পাট ও পাটকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা পাটকলগুলোর সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে একুশে টেলিভিশন অনলাইন মুখোমুখী হয় বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএমএ)’র সচিব আবদুল বারেক খানের সঙ্গে।
তার কথায় উঠে এসেছে পাটকলসহ পুরো পাট খাতের নানাবিধ সমস্যা ও সম্ভাবনার দিক। তিনি বলেন, অনেক চড়াই-উৎরায়ের পর দেশের পাট খাতের সুদিন ফিরতে শুরু করেছে ঠিক-ই। কিন্তু এতে সরকারি পাটকলের চেয়ে বেসরকারি পাটকলের অবদান বেশি। সরকারি পাটকলগুলো লোকসান গুণলেও বেসরকারি পাটকলগুলো ঠিক-ই লাভ করছে। আর এ লাভের মূল কারণ ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতা। তার সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন একুশে টেলিভিশন অনলাইন প্রতিবেদক রিজাউল করিম।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: সোনালী আঁশ খ্যাত পাটের ইতিহাস বাংলাদেশে শিকড়জুড়ে। বিভিন্ন চড়াই-উৎরায়ের মধ্যেও তাই এ খাতকে এগিয়ে নিতে বা পাটকলগুলো বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের উদ্যোগের কমতি নেই। যার ধারাবাহিকতায় দেশের সরকারের পাশাপাশি গড়ে উঠেছে বহু সংখ্যক বেসরকারি পাটকল। দেশে বর্তমানে আসলে কতগুলো পাটকল আছে?
বারেক খান: স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে দেশে পাট শিল্প-সংশ্লিষ্ট মিলের সংখ্যা ছিল ৭৭। সবগুলোই ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) আওতায় পরিচালিত হয়ে আসছিল। বর্তমানে সরকারি খাতে পাট শিল্প-সংশ্লিষ্ট কারখানার সংখ্যা মোট ২২টি। বেসরকারি খাতে বিজেএমএর অধীন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৩৪। যার মধ্যে দেশে পাট শিল্পের গোড়াপত্তনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৩৮টি। সময়মতো পণ্য বহুমুখীকরণের দিকে ঝুঁকতে না পেরে এসব কারখানার অধিকাংশই বন্ধ হয়ে গেছে। সরকারি পাটকল ও বিজেএমএর অন্তর্ভুক্ত পাটকলগুলোর পাশাপাশি জুট স্পিনিং খাতেও অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বিজেএসএর (বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশন) আওতায় এমন প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৮৬টি। এ সংগঠনের বেশির ভাগ সদস্যই নতুন বিনিয়োগে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠান।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: ধ্বংসের কিনারা থেকে ফিরে আসা এ খাতের সরকারি-বেসরকারি পাটকলগুলো বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে যদি বলতেন?
বারেক খান: খুব যে ভালো চলছে তা কোনোভাবেই বলা যাবে না। নানা কারণে সরকারি মিলগুলো তো ভালো চলছেই না, পাশাপাশি বেসরকারি অনেক পাটকলও লোকসান বইতে না পেরে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। বেসরকারি খাতের ছোট ছোট অনেক পাটকল বন্ধ হয়ে গেছে। তবে বেসরকারি খাতের যেসব পাটকল ভালো করছে, তারা লাভেই চলছে। এ অবস্থায় বেসরকারি পাটকলগুলোর সহযোগিতা আরও বাড়ানো দরকার।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পাট পণ্যের চাহিদা দিনিদিন বাড়ছে। তারপরও কেন বেসরকারি পাটকল বন্ধ হচ্ছে?
বারেক খান: বেসরকারি খাতের পাটকল বন্ধ হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ হলো বৈষম্য। রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয় প্রতিবছর। অথচ সেই তুলনায় বেসরকারি খাত তেমন কিছুই পাচ্ছে না। শুরু থেকেই এ বৈষম্য চলে আসছে। এ কারণে বেসরকারি খাতের অনেক ভালো ভালো পাটকল নাজুক অবস্থায় চলে গেছে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: বেসরকারি খাতের পাটকলগুলো টিকে আছে এবং বছর শেষে তারা মুনাফাও করছে। তবে সরকারি মিলগুলো পারছে না কেন?
বারেক খান: বেসরকারি যেসব পাটকল ভালো করছে, সেগুলো ভালো ব্যবস্থাপনার কারণে করছে। সরকারের দিকে তাকিয়ে না থেকে সেসব উদ্যোক্তা নিজেরাই নিজেদের সমস্যার সমাধান করছেন। তার মানে ব্যবস্থাপনা দুর্বলতার কারণেই সরকারি পাটকল লাভের মুখ দেখছে না?
সরকারি পাটকলগুলোর ব্যবস্থাপনায় চরম দুর্বলতা ও ত্রুটি রয়েছে। সরকারের কাছে টাকা চাইলেই টাকা পাওয়া যায়, তাই লাভ-লোকসানের দিকে তারা খুব বেশি মনোযোগী না। সরকারি পাটকলগুলোতে কোনো জবাবদিহি নেই। সরকারের কাছ থেকে টাকা আনছে অথচ তার যথাযথ জবাবদিহির কোনো ব্যবস্থা নেই। জবাবদিহির ব্যবস্থা থাকলে আজকে সরকারি পাটকলগুলোর এই অবস্থা তৈরি হতো না।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: সরকারি পাটকলগুলোকে লাভে আনার উপায় কী হতে পারে?
বারেক খান: সরকারি পাটকলগুলোকে ভালোভাবে চালাতে হলে সবার আগে দরকার পাটকল করপোরেশন বা বিজেএমসিকে পুনর্গঠন করা। এখানে দরকার পাট খাত নিয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতা সম্পন্ন লোক। বিজেএমসি পুনর্গঠন করতে হবে এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে।
গত ২০ বছরে বিজেএমসিতে নতুন কোনো লোক নিয়োগ করা হয়নি। ফলে সংস্থাটি তাদের কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। পাশাপাশি সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মিলগুলো পণ্য বৈচিত্র্যও আনা সম্ভব হয়নি। বিশ্ববাজার এখন চরম প্রতিযোগিতামূলক। একটা সময় ছিল যখন যা বানানো হতো, ক্রেতারা তা-ই কিনতেন। আর এখন ক্রেতারা পণ্যের নকশা ঠিক করে দেন। সেটি যারা বানাতে পারেন, তারাই ক্রয়াদেশ পান। তাই বর্তমান বাজারে টিকে থাকতে হলে পণ্যে বৈচিত্র্য আনা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। সেই সঙ্গে বিপণনের ক্ষেত্রেও দক্ষতা বাড়াতে হবে। এ জন্য সবার আগে প্রয়োজন পেশাদারি। বিজেএমসিতে সেই পেশাদারির অভাব রয়েছে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: সরকারি পাটকলগুলোর যে অবস্থা, তাতে পণ্যে বৈচিত্র্য আনা কতটা বাস্তবভিত্তিক?
বারেক খান: আমি মনে করি সরকারের উচিৎ সবার আগে বিজেএমসিকে ঢেলে সাজানো। এরপর পাটকলগুলোর আধুনিকায়নে নজর দিতে হবে। পাশাপাশি সরকারি মিলগুলোকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া দরকার। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে না পারলে তার জন্য জবাবদিহিরও ব্যবস্থা রাখতে হবে। আমি মনে করি সরকারি পাটকলগুলোর পরিচালনা পেশাদার লোকের হাতে ন্যস্ত করা উচিৎ।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: পাট খাতকে আরও এগিয়ে নিতে কী করা উচিৎ বলে আপনি মনে করেন?
বারেক খান: আমি মনে করি, বিজেএমসিকে একটি হোল্ডিং কোম্পানিতে রূপান্তর করা দরকার। উৎপাদন থেকে শুরু করে বাজারজাতসহ বিভিন্ন পর্যায়ের জন্য পেশাদার লোক নিয়োগ করতে হবে। তাতে কাজে গতিশীলতা আসবে। বিজেএমসিতে এখনও কিছু ভালো লোকজন আছে। কিন্তু দুর্নীতিবাজ লোকদের কারণে তারা ভালোভাবে কাজ করতে পারছে না, আবার কাজের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: একদিকে সরকারি পাটকলগুলো লোকসানে, অন্যদিকে বেসরকারি পাটকলগুলো লাভে। সরকারি উদ্যোগ আর বেসরকারি কলগুলোর উৎপাদন দিয়ে দেশের পাটের সুদিন ফিরতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় দেশের পাট খাতে সরকারের তুলনায় বেসরকারি কলগুলোর কাজের পরিধি কতটুকু?
বারেক খান: পাট খাতে সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান বিজেএমসি এখনও লোকসান দিচ্ছে। দেশে পাটের মোট কাজের আট শতাংশ বিজেএমসির হাত দিয়ে হয় এবং ৯২ শতাংশ হয় বেসরকারি খাতে। সরকার কখনও ব্যবসায়ী হতে পারে না। ১৯৭২ সাল থেকে শুরু করে বিজেএমসি মাত্র দুবছর কিছুটা লাভ করেছে। বেসরকারি পাটকলগুলো ক্রমান্বয়ে তাদের উৎপাদন বৃদ্ধি করছে। যার ধারাবাহিকতায় বহুমুখী পাট পণ্যের সংখ্যা আগের ১৩৫টি থেকে বেড়ে ২৩৫টিতে দাঁড়িয়েছে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: ভারত সরকার অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপে বাংলাদেশের কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে?
বারেক খান: ভারতের জুট মিল অ্যাসোসিয়েশন (আইজিএমএ) অভিযোগ তুলে বাংলাদেশি উৎপাদকদের পাট রফতানিতে ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এতে ভারতীয় পাট মার খাচ্ছে। ভারতীয় উদ্যোক্তাদের স্থানীয় বাজার সুরক্ষার এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব অ্যান্টি ডাম্পিং অ্যান্ড অ্যালাইড ডিউটিজ (ডিজিএডি) কর্তৃপক্ষ ২০১৬ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশের পাটজাত পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের সুপারিশ করে। সুপারিশের পর ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি ভারতের রাজস্ব বিভাগ অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপের গেজেট প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠান ভারতে পাটের সুতা, চট ও বস্তা রফতানি করতে চাইলে প্রতি টনে ১৯ মার্কিন ডলার ৫০ সেন্ট থেকে ৩৫২ মার্কিন ডলার ৭২ সেন্ট শুল্ক পরিশোধ করতে হবে। আগে এ পণ্যগুলোর মোট মূল্যের ওপর শতকরা ৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল। তার সঙ্গে বর্তমানে অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক যোগ হচ্ছে। এতে ঢাকার জনতা জুট মিলস লিমিটেড এবং বগুড়ার হাসান জুট মিলস লিমিটেড অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্কের আওতামুক্ত রাখা হয়।
এর ফলে দেশটিতে বাংলাদেশের পাট পণ্যের রফতানিতে ভাটা পড়েছে। বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর যে পরিমাণ পাট ও পাটপণ্য রফতানি হয়ে থাকে তার প্রায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ রফতানি হয় ভারতে। সর্বশেষ হিসেবে ভারতে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২ লাখ মেট্রিক টন পাটপণ্য রফতানি হয়েছে, যা বর্তমানে অর্ধেকে নেমে এসেছে। একইসঙ্গে ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ১ লাখ মেট্রিক টন জুট ইয়ার্ন রফতানি হয়েছে। সেখানে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রফতানি হয়েছে ৭৪ হাজার মেট্রিক টন।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: অ্যান্টি ড্যাম্পিং শুল্ক আরোপে ভারতে কি ধরণের প্রভাব পড়েছে?
বারেক খান: সরকারি সুবিধা কাজে লাগিয়ে ভারতীয় পাটকলগুলোর আধুনিকায়ন ও উন্নয়ন হয়েছে। এর ফলে সে দেশে ভালো মানের পাট পণ্যের উত্পাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার উত্পাদন খরচ কমে যাওয়ায় ভারতে বহুমুখী পাটপণ্য প্রস্তুতের পরিমাণ ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। এতে করে আন্তর্জাতিক বাজারে কম দামে পাট পণ্য রফতানিতে বাংলাদেশের পাটকলগুলো ভারতীয় রফতানিকারকদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে না। দেশীয় পাটকলগুলো লোকসান ও দেনার দিকে যাচ্ছে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: শুল্ক প্রত্যাহারে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি না?
বারেক খান: বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ভারতে কাঁচা পাট রফতানিতে শুল্ক আরোপসহ পাট আইন ২০১৭ বাস্তবায়নের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে। আমার স্বাক্ষরিত স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ভারত হলো বাংলাদেশের পাটপণ্য রফতানির অন্যতম বাজার। গত বছরের ৫ জানুয়ারি ভারতে আমদানিকৃত বাংলাদেশের পাট পণ্যের ওপর ভারত সরকার টন প্রতি ১৯ ডলার থেকে ৩৫২ ডলার পর্যন্ত অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করেছে। ফলে ভারতে রফতানিকৃত পাট পণ্যের পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতে দেশের অনেক পাটকল বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে বিভিন্নভাবে ভারতের সঙ্গে আলোচনা করার পরও কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে উৎপাদিত কাঁচা পাট ব্যাপকভাবে ভারত ক্রয় করছে। কেননা তাদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য কাঁচা পাট দরকার। সেজন্য তারা কাঁচা পাট আমদানির ওপর অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করেনি। বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপতানিকৃত কাঁচা পাটের ওপর যদি সরকার টন প্রতি ৩৫২ ডলার রফতানি শুল্ক আরোপ করে, তাহলে ভারত বাংলাদেশের পাট পণ্যের ওপর আরোপিত অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক উঠিয়ে নিতে পারে বলে অ্যাসোসিয়েশন মনে করে।
অবাক করা বিষয় হলো অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপ রেখেই বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতামূলক অংশীদারিত্ব চুক্তি করার প্রস্তাব দিয়েছেন ভারতের বেসরকারি পাটকল মালিকদের সংগঠন ইন্ডিয়ান জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশন (আইজেএমএ)। তাদের অভিযোগের ভিত্তিতেই শাস্তিমূলক শুল্কারোপ করা হয়। অংশীদারিত্ব চুক্তির বিষয়ে ভারতের প্রস্তাবে দ্বিমত না করলেও বাংলাদেশের কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে আগের অভিযোগ তুলে নিয়ে অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহারের সুপরিশ করার শর্ত দিয়েছে বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশেন (বিজেএমএ)। এ শর্তে আইজেএমএ রাজি না হওয়ায় অংশীদারিত্ব চুক্তি আর সামনে এগোচ্ছে না।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: পাটকলগুলোর সম্ভাবনাময় দিক কোনগুলো?
বারেক খান: পাটের বস্তা ব্যবহার আইন-২০১০ বাস্তবায়িত হলে স্থানীয় বাজারে পাটের চাহিদা বাড়বে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভরশীলতা কমবে। এতে করে পাটশিল্প খাত আত্মনির্ভরশীল খাত হিসেবে গড়ে উঠবে। আর বন্ধ পাটকলগুলো চালু হওয়ার পাশাপাশি গড়ে উঠবে নতুন নতুন পাটকল।
কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্যের উৎপাদন রফতানি বৃদ্ধি, দেশের অভ্যন্তরে পাটপণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধি, পাটের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ ও পরিবেশ রক্ষায় পণ্যে মোড়কীকরণে পাটের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।
পণ্যে পাটজাত মোড়কের ব্যবহার নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশবিরোধী প্লাস্টিক এবং পলিথিন ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। এ জন্য সরকার ব্যাপক জনসচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারের এ উদ্যোগ চলমান রেখে উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় ব্যাংক ঋণ ও আধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ করতে পারলে পাটখাত সেই হারানো গৌরবে সমুজ্জ্বল হবে।
আরকে//এসএইচ/