ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০৭ নভেম্বর ২০২৪,   কার্তিক ২৩ ১৪৩১

ব্যক্তিত্ব দিয়ে দেওয়াল তৈরি করতে হবে: স্পিকার

প্রকাশিত : ০৫:১৬ পিএম, ৬ মার্চ ২০১৮ মঙ্গলবার

কর্মস্থলসহ সব জায়গায় নারীদের নিজের ব্যক্তিত্ব দিয়ে একটি দেওয়াল তৈরির পরামর্শ দিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। নারী নির্যাতন বন্ধে পুরুষদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের পাশাপাশি নারীদেরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন গুণী এই রাজনীতিক।

আজ মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর রুনী মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে সামনে রেখে ‘গণমাধ্যমে নারী ও কর্মপরিবেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও নারী সাংবাদিক সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

এসময় ড. শারমিন বলেন, নারীরা পারে, তারা পেরেছেন এবং আগামীতেও তাঁরা পারবেন। এ জন্য নারীদের পেছনে না তাকিয়ে কেবল সামনে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে ড. শারমিন বলেন, নারীদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আর এর মাধ্যমে বাংলাদেশকেও এগিয়ে নিতে হবে।

নারীদের সম অধিকার প্রশ্নে স্পিকার বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন আগের তুলনায় কয়েকগুণ বেড়েছে। তবে দুঃখের বিষয় এখনো নারী নির্যাতন ও সহিংসতা পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি। তবে কর্মস্থলসহ সর্বত্র নারী নির্যাতন প্রতিরোধে নারীদের নিজেদের আরেকটু সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

কয়েকজন নারী সাংবাদিক গণমাধ্যমে তাদের নিজেদের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করার করেন। তা শুনে স্পিকার বলেন, একদিনের আলোচনা সভায় এ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। আর এই সমস্যা তো শুধু গণমাধ্যমের সমস্যা নয়, এ সমস্যা সমাজের প্রতিটি স্তরে নিহিত রয়েছে। তাই সমস্যা নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি কিভাবে এ সমস্যা উৎরানো যায় সে দিকের প্রতি নজর দেওয়ার আহ্বান জানান স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডিআরইউজের সভাপতি সাইফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক শুকুর আলী শুভ, নিউজ টুয়েন্টিফোর এর বার্তা সম্পাদক শাহানাজ মুন্নী, নাগরিক টিভির প্রধান প্রতিবেদক শাহানাজ শারমীন, সিনিয়র সাংবাদিক সুমি খান, বাসস’র সিনিরয় রিপোর্টর সেলিনা শিউলি, এটিএন বাংলার নাদিরা চৌধুরীসহ সিনিয়র নারী সাংবাদিকবৃন্দ।

এর আগে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির করা এক গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরা হয় আলোচনা সভায়। কর্মক্ষেত্রে নারীরা কতটুকু নিরাপদ তা যাচাই করতেই এ গবেষণা কার্যক্রম চালানো হয়। গবেষণায় দেখা যায়, গণমাধ্যমে কর্মরত নারীরা বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার। এ ছাড়া রিপোর্টিংয়ে নারীর সংখ্যা বাড়লেও নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে নারীর সংখ্যা একেবারেই নগণ্য বলে গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ঝর্ণা মল্লিক।

ঝর্না মল্লিক বলেন, দেশে বর্তমানে সংবাদ ক্ষেত্রে নারীর সংখ্যা ১৬ শতাংশ। তবে সংবাদপত্রে এ সংখ্যাটা মাত্র ৮ শতাংশ, যেখানে রেডিওতে কাজ করছে ৩৩ শতাংশ আর টেলিভিশনে কাজ করছে ১৯ শতাংশ। এদিকে উপস্থাপনায় পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেশি। রেডিওতে উপস্থাপনায় নারীর সংখ্যা ৬১ শতাংশ আর টেলিভিশনে সে সংখ্যাটা ৬৭ শতাংশ। তবে নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে নারীর উপস্থিতি মাত্র শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ।

এদিকে ৮৭.৯১ শতাংশ নারী সাংবাদিক বিশ্বাস করেন যে, তাদেরকে গণমাধ্যমে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়। অন্যদিকে ৪১.৯৪ শতাংশ মনে করেন তাদেরকে স্রেফ পণ্য হিসেবে ব্যবহার করে নীতিনির্ধারণী পর্যায়। এ ছাড়াও চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রেও নারীদের বেগ পেতে হয় বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। আলোচনা সভায় নারী সাংবাদিকরা বলেন, একটু বয়স হলেই নারীদের আর কর্মক্ষেত্রে নেওয়া হয়না। শুধু তাই নয়, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্মে তাদের মূল্যায়ণও কমতে থাকে পাল্লা দিয়ে। এমন নানা অভিযোগ করেন তারা।

এদিকে সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দুই নারী সাংবাদিককে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। সম্মাননা পাওয়া দুই নারী সাংবাদিক হলেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন ও বাংলাদেশে নারী সাংবাদিকতার পথিকৃৎ মাহমুদা চৌধুরী।

আলোচনায় অংশ নিয়ে ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, নারীদেরকেই এগিয়ে যেতে হবে। কেউ তাদের এগিয়ে নিবে না। তাই একজন নারীকে অন্য নারীর হাত ধরে সামনে এগোতে হবে। এর মাধ্যমে নারীরা এগিয়ে যাবে, এগিয়ে যাবে দেশ। তিনিও নারীদের ব্যক্তিত্ব দিয়ে দেওয়াল তৈরি করার আহ্বান জানিয়েছেন। নারীদের আরও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা কারও খেলার গুটি হবেন না। খেলার গুটি হয়ে অন্য নারীর ক্ষতি হবেন না।

এদিকে মাহমুদা চৌধুরী বলেন, কেউ আমাদের পথ তৈরি করে দেয়নি। দাঁত দিয়ে পাথর কাটার মতো করে আমাদেরকে সামনে এগোতে হয়েছে। নিজের লড়াইয়ের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, অনেক সময় কেবল নারী প্রতিবেদক বলে তাকে সংবাদ কাভারেজে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তবে নিজে লড়াই করে গেছেন এবং জয়ী হয়েছেন। তাই সবাইকে পরিশ্রমী ও দৃঢ় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দেশের নারী সাংবাদিকতার এই পথপ্রদর্শক।

এমজে/