লোনা পানিতে পাট চাষে বিপ্লব
রিজাউল করিম
প্রকাশিত : ০৬:৩৪ পিএম, ৬ মার্চ ২০১৮ মঙ্গলবার | আপডেট: ০২:১৫ পিএম, ২৯ মার্চ ২০১৮ বৃহস্পতিবার
আর পড়ে থাকবে না দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত জমি। কারণ লবণাক্ততাকে জয় করে এরইমধ্যে সেখানে সাড়া ফেলেছে উদ্ভাবিত নতুন জাতের দেশী পাট। বাংলাদেশ জুট রিসার্চ ইনস্টিটিউট ( বিজেআরআই) ‘দেশী পাট-৮’জাতের এ পাট উদ্ভাবন করেছে। প্রতিষ্ঠানটির পরীক্ষামূলক এ চাষাবাদে পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। বছরের পর বছর পরিত্যক্ত থাকা জমিতে পাট আবাদে এলাকার কৃষকরা আগ্রহী হয়ে উঠছেন। পাটের এ জাতকে ২০১৯ সালের মধ্যে সাধারণ কৃষক পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনায় আছে বিজেআরই।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, লবণসহিষ্ণু নতুন জাতের এ পাটের পরীক্ষামূলক আবাদ শুরু হয় তিন বছর আগে। ফলনও বাম্পার হয়েছে। এখন তা সাধারণ কৃষক পর্যায়ে পৌঁছে দিতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নতুন উদ্ভাবিত বীজ অনুমোদন পাওয়ার জন্য আবেদন করা হবে। অনুমোদন পেলে আগামী বছরের শেষ নাগাদ তা কৃষক পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া হবে। এতে দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকা আর পতিত থাকবে না। সেখানে লোনা পানিতেও পাট চাষের বিপ্লব ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের ১৮ জেলায় মোট কৃষি জমির পরিমাণ ২৮ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে চাষযোগ্য জমি ৩০ শতাংশ। চাষযোগ্য এই জমির মধ্যে ১০ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমিই বিভিন্ন মাত্রার লবণাক্ততায় আক্রান্ত। দিন দিন এই লবণাক্ততার পরিমাণ বাড়ছে। ফলে প্রতি বছর খরিফ-১ মৌসুমে এই বিশাল পরিমাণ জমি পতিত পড়ে থাকে।
বিজেআরআই সূত্র জানায়, উপকূলের বিশাল লবণাক্ত জমিকে খরিফ-১ মৌসুমে পাট চাষের আওতায় আনার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় ২০১৫ সালে একটি প্রকল্প নেয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহযোগিতায় বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট তাদের উদ্ভাবিত মধ্যম মাত্রার লবণসহিষ্ণু দেশী পাট-৮ এবং উচ্চমাত্রার লবণসহিষ্ণু চারটি লাইন উপকূলীয় অঞ্চলের ৬ জেলার ৬ উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে আবাদ শুরু করে। এই উপজেলাগুলো হলো- বরগুনা জেলার বেতাগী, পিরোজপুরের নাজিরপুর, খুলনার দাকোপ, বাগেরহাট জেলার মোরলগঞ্জ এবং সাতক্ষীরা সদর উপজেলা। প্রতিটি উপজেলায় ৫০ জন কৃষককে নির্বাচিত করে তাদের প্রশিক্ষণ, মাঠ দিবস ও মতবিনিয়ের মাধ্যমে দেশী পাট-৮ ও অপর চারটি লাইন আবাদে উপযোগী করে তোলা হয়। এর মধ্যে পরপর তিন মৌসুমেই দেশী পাট-৮ জাত বাম্পার ফলন হয়েছে। বিশেষ করে এ বছর প্রতিটি পর্যবেক্ষণ মাঠেই পাট গাছগুলো যেমন মোটা এবং তেমনি লম্বা হয়েছে।
জানা গেছে, পটুয়াখালীর কলাপাড়ার পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটে মধ্যম মাত্রার লবণসহিষ্ণু দেশী পাট-৮ (৯ ডিএস/মিটার) এবং উচ্চ লবণাক্ততা সহিষ্ণু (১৪ ডিএস/মিটার) চারটি জাতের লাইন উদ্ভাবন করা হয়েছে। যা এখন পরীক্ষামূলকভাবে চাষাবাদ করা হচ্ছে। দেশী পাট-৮ জাত আবাদের সাফল্যে অর্থকরী এ ফসল আবাদের মাধ্যমে উপকূলীয় অঞ্চলে অন্তত দুটি ফসল ফলানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
বিজেআরআই পরিচালক এস এম মাহবুব আলী বলেন, লবণাক্ত মাটিতে পাটের ফলন দেখে মুগ্ধ হয়েছি। উপকূলীয় অঞ্চলের চাষীরা আগামীতে এ ধরনের পাট চাষ করে বেশি লাভবান হবেন। সেই সঙ্গে তারা একই জমিতে পরপর দুটি ফসল লাগাতে পারবেন।
তিনি বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলে মধ্যম মানের লবণাক্ত এলাকাই বেশি। এখন একটি ফসলের (টি-আমন) পর এই এলাকার জমি পতিত থাকে। তাই কৃষিমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছিলেন এই জমিতে ফসল আবাদের জাত উদ্ভাবন করতে হবে। সে লক্ষ্যেই বিজেআরআই বিভিন্ন শঙ্করায়নের মাধ্যমে দেশী পাট-৮ জাত উদ্ভাবন করে। এই জাত ৯ ডিএস/মিটার পর্যন্ত লবণসহিষ্ণু।
তিনি বলেন, তবে এরইমধ্যে ‘উচ্চ লবণসহিষ্ণু (১৪ ডিএস/মিটার) আরও চারটি পাটের লাইন নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করে আবাদও করা হয়েছে। তাতে ভালো ফলনও পাওয়া গেছে। আশা করছি, দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের লবণাক্ত জমিতে পাট আবাদের নতুন দুয়ার খুলে যাবে।
তিনি আরও বলেন, দেশী পাট-৮ এর ব্যাপক সাফল্যে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, এই জাত মধ্যম মানের লবণাক্ততা সহিষ্ণু এবং উপকূলীয় অঞ্চলে চাষের উপযোগী। কৃষকের মধ্যে এই পাট আবাদের জন্য ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। তারা এখন আমাদের কাছে বীজ চাচ্ছে। আমরা আগামী মৌসুমে প্রত্যেক উপজেলায় ১০০ কেজি করে দেশী পাট-৮ বীজ প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
আরকে// এআর