ঢাকা, রবিবার   ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪,   আশ্বিন ১৩ ১৪৩১

প্রশ্ন ফাঁসকারীদের ফায়ারিং স্কোয়াডে দেওয়ার পরামর্শ [ভিডিও]

প্রকাশিত : ০৮:০৮ পিএম, ৬ মার্চ ২০১৮ মঙ্গলবার | আপডেট: ১০:১৫ পিএম, ৬ মার্চ ২০১৮ মঙ্গলবার

সাম্প্রতিক সময়ে লাগাতার প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। প্রশ্ন ফাঁসের সাথে যারা জড়িত এবং ফাঁস ঠেকাতে যারা ব্যর্থ হয়েছে তাদেরকে ‘ফায়ারিং স্কোয়াডে’ দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন রাষ্ট্রপতি।

আজ মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “দেশের আগামী প্রজন্মকে ধ্বংসের এই প্রক্রিয়ায় যারা জড়িত, তাদের ‘ফায়ারিং স্কোয়াডে’ দেওয়া উচিত।

ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তৃতায় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস সবচেয়ে আলোচিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে শিক্ষক-ছাত্র-অভিভাবকদের সংশ্লিষ্টতা নিয়েও বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে”।

তবে বরাবরের মত লিখিত বক্তৃতা পাঠের প্রটোকল ভেঙ্গে নিজের অলিখিত বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি বলেন, “সব বাবা-মাই চায়, তার সন্তান ফার্স্ট-সেকেন্ড হোক, গোল্ডেন এ প্লাস পাক। কিন্তু যখন শোনা যায় যে বাবা-মাই ছেলেকে নকল সরবরাহ করছে- তা কী করে সম্ভব”।

“এর চেয়ে লজ্জাজনক-জঘন্য কাজ আর কি হতে পারে! এই বাপ আর মা তার ছেলে-মেয়েকে কী শিখাইতাছে? তারে কী বানাইতে চাইতাছে? ভবিষ্যতে তারে দিয়া কী হবে? দেশের কী হবে?”

বক্তব্যের এক পর্যায়ে টিউশনি আর কোচিং ব্যবসার সাথে জড়িত শিক্ষদের বিরুদ্ধেও উষ্মা প্রকাশ করেন দেশের সর্বোচ্চ নির্বাহী। তিনি বলেন, “যেসব শিক্ষক ছেলে মেয়েদের শিখাইবো, তারা নিজেরাই... তার মার্কেট ভালা করার জন্য, প্রাইভেট পড়াইবার মার্কেট ভালা করার জন্য সে যদি প্রশ্ন কইয়া দেয়- ‘এই প্রশ্ন আইতাছে লেখ’… মার্কেট ভালো হবে, বেশি বেশি (শিক্ষার্থী) পড়তে আইব, এসব চিন্তা থেকে তারা এইগুলি করতেছে।

“তারা দেশটাকে কী দিচ্ছে? এখন কথা কইলেতো খারাপ কথা… দেশ ও জাতির স্বার্থে দে শুড গো টু ফায়ারিং স্কোয়াড। ফায়ারিং স্কোয়াডে দেওয়া উচিত।”

ঊনিশশ’ পঞ্চাশের দশকে মেট্রিক পাস করা আবদুল হামিদ নিজের সময়ের সাথে বর্তমান পরিস্থিতির তুলনা করে অনুষ্ঠানে বলেন, “আমাদের তো বাপ-মা খবরই নিছে না। স্কুলে গেছে নি? অহনতো পাছার মইধ্যে লাইগা থাকে। লাইগা থাকে ভালা কথা, অসুবিধা নাই। ভালা জিনিস শিখাক। ফার্স্ট-সেকেন্ড হইলে কী হয়? আমিতো খুব খারাপ ছাত্র আছিলাম। আমার মত খারাপ ছাত্র যদি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হইতে পারে, তাহলে অত ভালা ছাত্র হওয়ার দরকারটা কী?”

দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তির এমন বক্তব্যে করতালি আর অট্টহাসিতে ফেটে পরে পুরো মিলনায়তন।

এসময় পরীক্ষায় বহুনির্বাচনী নৈব্যত্তিক প্রশ্ন ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার বিষয়েই নিজের সম্মতির কথা জানান তিনি। রাষ্ট্রপতি বলেন, “আমার মনে হয় এখন যে টিক মার্ক দিয়া দেয়। ইট শুড বি স্টপড। এমন সিস্টম করা দরকার প্রশ্ন আগেই চলে আসবে। এই প্রশ্ন আইব, এখন তুমি লেখ। মিনিস্ট্রি থেকে বইলা দেন- এই প্রশ্ন আইব। সব কোর্স-সিলেবাস মিলাইয়া ২০-২৫টা প্রশ্ন করেন। সব প্রশ্ন ওয়েবসাইটে দিয়া দেন। ২৫টা প্রশ্ন থাকলে পুরো সিলেবাস কাভার করবে। কিন্তু কুনডা আইবো হেইডা কইতে পারত না… এই সিস্টেম যদি হয়, তাহলে প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়ে দুশ্চিন্তা করা লাগবে না।”

প্রসঙ্গত, সাস্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ধারাবাহিকতায় এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় বেশিরভাগ বিষয়ের প্রশ্ন পরীক্ষা শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগেই ফাঁস হয়ে যায়, সেসব প্রশ্ন ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে।

নানান উপায় অবলম্বন করেও ঠেকানো সম্ভব হয়নি প্রশ্নপত্র ফাঁস।

প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে লাগাতার ব্যর্থ হওয়া শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ব্যাপক সমালোচনার মুখে পরেন। বিভিন্ন মহল থেকে তার পদত্যাগের দাবিও ওঠে।

এসএইচএস/টিকে