ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

যে পরিস্থিতিতে অপরাধ করলে শাস্তি হয় না

প্রকাশিত : ১০:৫৬ পিএম, ৬ মার্চ ২০১৮ মঙ্গলবার

সব ক্ষেত্রেই আপনি আইন বিরোধী কোনো কিছু করলেই যে আপনি অপরাধী হয়ে যাবেন এমনটা কিন্তু নয়। এমন কিছু কিছু ক্ষেত্র রয়েছে যেখানে আপনি নিজের জীবন অথবা সম্পত্তির সুরক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য কোনো কাজ করেছেন যা দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী অপরাধ কিন্তু যে পরিস্থিতিতে আপনি কাজটি করেছেন তার বিবেচনায় কাজটি অপরাধ হবে না। শুধু নিজের জীবন বা সম্পত্তিই না বরং অন্য কোন ব্যক্তির জীবন বা তার সম্পত্তির রক্ষায়ও আপনি সেসব কাজ করতে পারবেন। আর সেক্ষেত্রে আপনাকে এর জন্য শাস্তি পেতে হবে না। কারণ আইন আপনাকে অধিকার দিয়েছে, যে কোনো আসন্ন বিপদ এড়ানোর জন্য আপনিও কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবেন নিজ বা অন্যের নিরাপত্তা ও সম্পত্তি রক্ষার জন্য।

শুধু তাই নয়,  নিজের সম্ভ্রম রক্ষার্থে অথবা সম্ভাব্য নিশ্চিত ধর্ষণ প্রতিরোধেও একজন নারী ধর্ষণ চেষ্টাকারীকে প্রতিহত করতে সর্বোচ্চ ব্যবস্থাও নিতে পারেন। এক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি নিহত হলেও আইনে দন্ডিত হবেন না ঐ নারী।

তবে এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো যে, আপনি নিজের/অন্যের জান-মালের নিরাপত্তায় যে ব্যবস্থাই নেন না কেন তার মাত্রা হতে হবে জীবন বা সম্পত্তির ওপর হওয়া হামলা বা ঝুঁকির মাত্রার সাথে সংগতিপূর্ণ।

একটা উদাহরণ দিয়ে বিষয়টা বুঝানো যেতে পারে। ধরুন একজন ব্যক্তি আপনাকে এমনভাবে আঘাত করছে যার জন্য আপনার নিজের জীবননাশের কোন সম্ভাবনা নেই বলে আপনি বুঝতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনি ঐ ব্যক্তি প্রতিহত করতে সব কিছুই করতে পারেন তবে আক্রমণকারীকে হত্যা করতে পারবেন না।

তবে আপনার ওপর আক্রমণ যদি এমন হয় যে, আক্রমণকারীকে হত্যা না করলে আপনি নিজের জান-মাল নিরাপদ করতে পারবেন না তাহলে আপনি তাকে হত্যাও করতে পারেন।

বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ধারা ৯৬ থেকে ধারা ১০৬ পর্যন্ত আত্মরক্ষার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

দণ্ডবিধির ৯৬ ধারা

ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার জন্য আপনি কোনো অধিকার প্রয়োগ করলে আপনার করা কোনো কাজই আইনে অপরাধ বলে গণ্য করা হবে না।

দণ্ডবিধির ৯৭ ধারা

চুরি, দস্যুতা, অনিষ্ট সাধন বা অনধিকার প্রবেশের মাধ্যমে নিজের বা অপর ব্যক্তির স্থাবর কিংবা অস্থাবর সম্পত্তি রক্ষার জন্য আপনি এই প্রতিরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। তবে সেই অধিকার আপনাকে দণ্ডবিধির ৯৯ ধারার বর্ণিত বিধিনিষেধ অনুযায়ী প্রয়োগ করতে হবে।

দণ্ডবিধির ৯৮ ধারা

মানসিক বিপর্যস্ত পরিস্থিতি, অক্ষমতা বা মাতাল হলে কিংবা পাগলামির কারণে কেউ কোনো অপরাধ করলে তার সেই কাজের জন্য তাকে অপরাধী করা যাবে না। কিন্তু ওই মানসিকভাবে অক্ষম, বিপর্যস্ত ব্যক্তি বা পাগলের হাত থেকে আপনার যুক্তিসঙ্গত প্রতিরক্ষার অধিকার থাকবে।

দণ্ডবিধির ৯৯ ধারা

সরকারিভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি অথবা তাঁর নির্দেশে অন্য কোনো ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি সরল বিশ্বাসে যদি এমন কোনো কাজ করে যাতে করে অন্তত কারো মৃত্যু বা গুরুতর আঘাতের আশঙ্কা না থাকে তবে সেই ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আপনার ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার থাকবে না।

এই অধিকার আপনি যতটুকু নিজের আত্মরক্ষার জন্য প্রয়োজন, কোনো অবস্থায় তার অতিরিক্ত প্রয়োগ করতে পারবেন না। যেমন আপনি চোরের চুরি ঠেকাতে গিয়ে তাঁকে খুন করে বসতে পারেন না। এমন কিছু করলে এর জন্য আপনাকে আইনে নির্ধারিত শাস্তি পেতে হবে।

দণ্ডবিধির ১০০ ধারা

কোন কোন ক্ষেত্রে আপনি আত্মরক্ষা করতে গিয়ে অন্য কারো মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারেন। আর এগুলো হলো নিজের নিশ্চিত মৃত্যু ঠেকাতে, মারাত্মক আঘাত থেকে যেখানে পরবর্তী সময়ে আপনার মৃত্যু হতে পারে এমন, ধর্ষণ থেকে বাঁচতে, অস্বাভাবিক কাম লালসার হাত থেকে রক্ষা পেতে, অপহরণের হাত থেকে রক্ষা পেতে এবং কেউ যদি এমনভাবে আপনাকে আটক করতে পারে বলে মনে হয়, যেখান থেকে আপনি সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আর কোনো সাহায্য নিতে পারবেন না তখন।

দণ্ডবিধির ১০১ ধারা

সম্পূর্ণ ইচ্ছাকৃতভাবে আক্রমণকারীর মৃত্যু ঘটানো যাবে না যতক্ষণ না পর্যন্ত অন্য কোনোভাবে আত্মরক্ষা করা যায়।

দণ্ডবিধির ১০২ ধারা

এই অধিকার অব্যাহত থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত আপনার দেহ বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। আশঙ্কা কেটে যাওয়ার পর ওই অধিকার আর আপনি পাবেন না।

দণ্ডবিধির ১০৩ ধারা

কখনও কখনও আপনি সম্পত্তি রক্ষা করতে গিয়ে কারো মৃত্যু ঘটাতে বা অন্য কোনো ক্ষতি করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই দণ্ডবিধির ৯৯ ধারার বর্ণিত বিধিনিষেধের কথা মনে রেখে তা করতে হবে।

দণ্ডবিধির ১০৪ ধারা

চুরি, ক্ষতি বা অনধিকার প্রবেশ যদি উল্লিখিত ওপরের মতো ভয়ংকর না হয় তবে আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে ৯৯ ধারায় বর্ণিত বিধিনিষেধ অনুযায়ী দুষ্কৃতিকারীর অন্য কোনো ক্ষতি করা গেলেও অন্তত কারো মৃত্যু ঘটানো যাবে না।

দণ্ডবিধির ১০৫ ধারা

কখনও কখনও কারও সম্পত্তি রক্ষার ক্ষেত্রে এই অধিকারের শুরু হয় এবং কতক্ষণ পর্যন্ত এই অধিকার অব্যাহত থাকে। যেমন সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির ক্ষেত্রে ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিরক্ষার অধিকার শুরু হবে। চুরির ক্ষেত্রে চোর পালিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত বা সরকারি কর্তৃপক্ষের সাহায্য লাভ না করা পর্যন্ত অথবা ওই সম্পত্তি উদ্ধার না করা পর্যন্ত আপনার প্রতিরক্ষার অধিকার থাকবে। দস্যুতার ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তির মৃত্যু বা আঘাত করা বা অবৈধ অবরোধের চেষ্টা অব্যাহত থাকা পর্যন্ত প্রতিরক্ষার অধিকার থাকবে। অনধিকার প্রবেশ বা অনিষ্ট সাধনের ক্ষেত্রে এর চেষ্টা অব্যাহত থাকা পর্যন্ত আর রাতের বেলা চুরির ক্ষেত্রে যতক্ষণ পর্যন্ত ঘরে কারো অনধিকার প্রবেশ অব্যাহত থাকবে, আপনার ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার ততক্ষণ পর্যন্ত থাকবে। চোর চুরি করে চলে যাওয়ার পর আর আপনার ওই অধিকার থাকবে না।

দণ্ডবিধির ১০৬ ধারা

আপনার মৃত্যু হতে পারে এমন কোনো আক্রমণে আত্মরক্ষা করতে গিয়ে যদি কোনও নিরপরাধ মানুষেরও ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি থাকে, তাহলেও আপনি এমন ঝুঁকি নিয়ে আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। যেমন আপনি নিজেকে বাঁচাতে কোনো কোনো উচ্ছৃঙ্খল জনতার ওপর গুলি চালাতে পারেন। যদি ওই জনতার ভেতরে থাকা কোনো শিশুও যদি আহত বা নিহত হয়, তবে তার জন্য আপনি দায়ী হবেন না।

একে/টিকে