ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০৭ নভেম্বর ২০২৪,   কার্তিক ২৩ ১৪৩১

৭ মার্চের ভাষণ সংবিধানের মূলমন্ত্র: ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ

প্রকাশিত : ১২:০৭ এএম, ৭ মার্চ ২০১৮ বুধবার

ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর। বাংলাদেশের সংবিধানকে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের প্রতিচ্ছবি হিসেবে মনে করেন তিনি। এই ভাষণের মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষের করুণ আর্তনাদ ফুটে উঠে, তেমনি প্রতিষ্ঠিত হয় আলাদা একটি জাতিসত্তা; বাঙালি জাতীয়তাবাদ। ১৯৯২ সাল থেকে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিক সংস্থা-ইউনেস্কো মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড- এর স্বীকৃতি প্রদান শুরু করে। এ পর্যন্ত বিশ্বের ৪২৭ টি প্রামাণিক দলিলকে মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ডের স্বীকৃতি দেয়। তার মধ্যে অলিখিত ভাষণ হিসেবে স্বীকৃতি পায় একমাত্র বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ। যা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের বিষয়ে একুশে টেলিভিশন অনলাইনের মুখোমুখি হন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন একুশে টেলিভিশন অনলাইন প্রতিবেদক আলী আদনান।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ সম্প্রতি ‘মেমোরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড’-এর স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিক সংস্থা-ইউনেস্কো। বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখছেন?

ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ: বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ আজ সারা বিশ্বে তাৎপর্যপূর্ণ একটি ঐতিহাসিক প্রামাণিক দলিল হিসেবে পরিগণিত। যাকে অতিসম্প্রতি ‘মেমোরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড’ এর স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। ১৯৯২ সালে ইউনেস্কো তার ‘মেমোরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড’-এর স্বীকৃতি প্রদান কর্মসূচি শুরু করে। উদ্দেশ্য হচ্ছে, বিশ্বের কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণিক দলিলসমূহকে মানব সভ্যতার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া। এই ধারাবাহিকতায় আজ অবধি গোটা বিশ্বে মোট ৪২৭টি প্রামাণিক দলিলকে ‘মেমোরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড’-এর স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। এই ৪২৭টি প্রামাণিক দলিলের মধ্যে অলিখিত ভাষণ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে একমাত্র বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটি। বাঙালি জাতির জন্য কী অনবদ্য এক অর্জন! ইউনেস্কো তার ওয়েব পেজে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ সম্পর্কে বর্ণনা করেছে: “The speech effectively declared the independence of Bangladesh. The speech constitutes a faithful documentation of how the failure of post-colonial nation-states to develop inclusive, democratic society alienates their population belonging to different ethnic, cultural, linguistic or religious groups. The speech was extempore and there was no written script.” অর্থাৎ ইউনেস্কোর বিবেচনায় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ কার্যকর অর্থে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছে। এই ভাষণ গোটা বিশ্বের উত্তর-ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রসমূহের সর্বজনীন গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার ব্যর্থতার এক অকাট্য প্রামাণিক দলিল। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটি ছিল একটি উপস্থিত-বক্তৃতা অর্থাৎ ভাষণটির কোনো লিখিত রূপ ছিল না। আর আজকে এই ভাষণ শুধু বাঙালি জাতির একান্ত ঐশ্বর্য নয়, বরং বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ আজ বিশ্বমানবতার ঐশ্বর্য। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে ইউনেস্কো কর্তৃক ‘বিশ্ব প্রামাণ্য দলিলের’ অন্তর্গত করার মাধ্যমে বিশ্বমানবতার বিজয় প্রতিষ্ঠিত হল। এগিয়ে যাক বিশ্বসভ্যতা, বিশ্ব মানবতা।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণকে আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনার ৪টি মূলনীতির মূলসূত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে, বিষয়টিকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন?

ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ:  আমার মতে, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা বাংলাদেশের সংবিধানের এই চার মূলনীতি বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতীয়তাবাদের কথাই বলেছেন। তিনি বাংলার মানুষের অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক মুক্তির কথা বলেছেন। তাঁর বক্তৃতায় বাঙালি জাতির উপর তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের নির্যাতনের করুণ বর্ণনা দিয়েছেন। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে বাঙালি জাতির গণতান্ত্রিক অধিকারের দাবি তুলেছেন। বঙ্গবন্ধুর ভাষণে শোষণমুক্ত সমাজতন্ত্রের প্রতিফলনও আমরা দেখতে পাই। তিনি তাঁর বক্তব্যে একদিকে যেমন বাঙালি জাতির অর্থনৈতিক মুক্তির দাবি জানিয়েছেন, তেমনি অসহযোগ আন্দোলনে শ্রমজীবী গরিব মানুষের কথা উল্লেখ করেছেন।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: আপনি কেন মনে করেন যে, "জাতীয়তাবাদ" নীতির মূলসূত্র বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ?

ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ: বঙ্গবন্ধু তাঁর ৭ মার্চের ভাষণে বাঙালি জাতীয়তাবাদ যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, তা আজ পর্যন্ত বিশ্বের আর কোনো নেতা পারেননি। তিনি ৭ মার্চের ভাষণে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, “আজ বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, তারা বাঁচতে চায়। তারা অধিকার পেতে চায়। নির্বাচনে আপনারা সম্পূর্ণভাবে আমাকে এবং আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেছেন শাসনতন্ত্র রচনার জন্য। আশা ছিল জাতীয় পরিষদ বসবে, আমরা সেখানে শাসনতন্ত্র তৈরি করব এবং এই শাসনতন্ত্রে মানুষ তাদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি লাভ করবে। কিন্তু ২৩ বছরের ইতিহাস, বাংলার মানুষের রক্ত দিয়ে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস। ২৩ বছরের ইতিহাস, বাংলার মানুষের মুমূর্ষু আর্তনাদের ইতিহাস, রক্তদানের করুণ ইতিহাস। নির্যাতিত মানুষের কান্নার ইতিহাস।” অতএব, আমরা দেখতে পাচ্ছি বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বাঙালি জাতীয়তাবাদের আলোকে উদ্ভাসিত।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন:  আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ:  আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ।

টিকে