রুশ এমপির বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ বিবিসি সাংবাদিকের
প্রকাশিত : ০৭:০২ পিএম, ৭ মার্চ ২০১৮ বুধবার | আপডেট: ০৭:১২ পিএম, ৭ মার্চ ২০১৮ বুধবার
ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন-বিবিসি’র এক নারী সাংবাদিক রাশিয়ার সংসদ সদস্য লিওনিড স্লাটস্কির বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছেন। এ নিয়ে তৃতীয় কোনো নারী সাংবাদিক রাশিয়ার জ্যেষ্ঠ্য এই রাজনীতিকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির প্রকাশ্যে অভিযোগ করলেন।
বার্তা সংস্থা বিবিসি আজ বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে জানায়, সংস্থাটির রাশিয়ান কার্যালয়ে কর্মরত ফরিদা রুসতামোভা নামের তাদের এক সংবাদ কর্মী গত বছর ২০১৭ সালের ২৪ মার্চ দেশটির সংসদ ডুমায় লিওনিডের কার্যালয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সে সময়কার ফ্রেঞ্চ প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী মেরিন ল্য পেনের রাশিয়া সফর নিয়ে লিওনিডের এক মন্তব্য আনতেই তার কার্যালয়ে ফরিদা গিয়েছিলেন বলে জানায় সংস্থাটি।
সে সময় দেশটির পররাষ্ট্র বিষয়ক সংসদীয় কমিটির প্রধান ছিলেন লিওনিড।
তবে বরাবরের মত নিজের বিরুদ্ধে আসা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন লিওনিড স্লাটস্কি। উলটো ফরিদার বিরুদ্ধে আদালতে ‘মানহানি’র মামলা করার ঘোষণা দেন তিনি।
কিন্তু ফরিদার বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে যে, ফরিদার অভিযোগের সমর্থনে একটি অডিও রেকর্ড রয়েছে বিবিসি’র কাছে। এই অডিও রেকর্ডে লিওনিডের যৌন হয়রানিমূলক কথাবার্তা সংরক্ষিত আছে। কিন্তু বিবিসি এখনও সেই অডিও রেকর্ডটি প্রকাশ করেনি।
এদিকে বিবিসি’র এই প্রতিবেদনে ফরিদা এবং লিওনিডের কথোপকথনের ধরণ তুলে ধরা হয় অনেকটা এভাবে-
লিওনিডঃ তুমি বিবিসি’র চাকরি ছেড়ে আমার সাথে কাজ কর।
ফরিদাঃ না।
লিওনিডঃ তুমি আমার কাছে থেকে দূরে যেতে চাইছ। তুমি আমাকে চুমু দেবে না। তুমি আমার অনুভূতিকে কষ্ট দিলে।
ফরিদাঃ আমার বয়ফ্রেন্ড আছে। আমি তাকে বিয়ে করব।
লিওনিডঃ ঠিক আছে। তুমি তার বউ হও। তবে আমার রক্ষিতা হয়ে থাকো।
কথোপকথনের এই পর্যায়ে লিওনিড তার চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে ফরিদার হাতের তালু এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত অংশে স্পর্শ করা শুরু করেন বলে অভিযোগে নিজেই জানান ফরিদা।
সে মুহুর্তের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে ফরিদা বলেন, “আমি বুঝে উঠতে পারছিলাম না যে কী হল! আমি কথা বলার মত ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলাম। কিছু সময়ের জন্য কী করব তাই বুঝতে পারছিলাম না।তিনি যেন আমাকে অনুভব করছিলেন”।
এদিকে লিওনিড ফরিদার এই বক্তব্যের প্রতিবাদে বলেন, “আমি মানুষদের অনুভব করি না। করলেও হয়ত অল্প। কাউকে স্পর্শ করে অনুভব করাটা খুবই নোংরা একটা ব্যাপার”।
ফরিদার এমন অভিযোগকে ‘বিশেষ গোষ্ঠীর উদ্দেশ্য প্রণোদিত’ বলে উল্লেখ করে বলেন, “পররাষ্ট্র বিষয়ক সংসদীয় কমিটির কার্যক্রমে কেউ কেউ রুষ্ট। এমন অভিযোগ তাদের হীন উদ্দেশ্যেরই একটি উদাহরণ। তবে তাদের এমন কর্মকান্ডে আমাদের মনোবল ভাঙ্গবে না বরং আরও বাড়বে”।
তবে ফরিদা একমাত্র নারী সাংবাদিক নন যিনি লিওনিডের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করলেন। এর আগে আরও দুই জন নারী সাংবাদিক প্রকাশ্যে এমন অভিযোগ আনেন।
আরটিভিআই টিভি চ্যানেলের উপ সম্পাদক ইয়েক্যাটেরিনা কট্রিকাডজি এবং টিভি রেইনের প্রযোজক ডারিয়া ঝুক গত দুই সপ্তাহে পৃথক পৃথকভাবে লিওনিডের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনেন।
রাশিয়ায় যৌন হয়রানিঃ
১) যৌন হয়রানিকে সংজ্ঞায়িত করে রাশিয়ায় কোন আইন নেই।
২) যৌন হয়রানির অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে উলটো অভিযোগ আনার প্রবণতা রাশিয়ায় অনেক বেশি। এমনকি ধর্ষিতা নারীদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ওঠে যে, তারা নিজেরাই ইচ্ছাকৃতভাবে এমন অভিযোগ এনেছেন।
৩) তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৬ সালে দেশটিতে একটি প্রচারণা ব্যাপক সাড়া ফেলে যার নাম ছিল “আমি বলতে ভয় পাই না”।
৪) সামাজিক কর্মীরা বলছেন দেশটিতে কিশোর-কিশোরীদের জন্য ‘সেক্স এডুকেশন’ চালু করা উচিত।
৫) আইনজীবীরা আইনে ‘সম্মতি’র বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে জোর দিচ্ছেন।
সূত্রঃ বিবিসি
//এস এইচ এস// এআর