ঢাকা, রবিবার   ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪,   আশ্বিন ১৩ ১৪৩১

দ্য ডিপ্লোম্যাটে জয়ের নিবন্ধ

দরিদ্রদের ভাগ্য বদলাবে ডিজিটাল আইল্যান্ড প্রকল্প

প্রকাশিত : ১১:২৬ এএম, ৮ মার্চ ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১১:২৭ এএম, ৮ মার্চ ২০১৮ বৃহস্পতিবার

মহেশখালীতে ডিজিটাল দ্বীপ তৈরি হলে সেখানকার দরিদ্রতম মানুষের ভাগ্য বদলে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ডিপ্লোম্যাটে লেখা এক নিবন্ধে এই মন্তব্য করেন তিনি।

ওই নিবন্ধে তিনি বলেন, মহেশখালীতে তিন লাখ ২০ হাজার মানুষের বসবাস। প্রত্যন্ত এ অঞ্চলে দেশের দরিদ্রতম মানুষ বসবাস করে, যাদের শিক্ষা বা চিকিৎসা সেবার সুযোগ মেলে না সব সময়। তবে এটিই হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল আইল্যান্ড। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রকল্প বাস্তবায়নে একবিংশ শতাব্দীর প্রযুক্তি সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রয়াসেই এই উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

সজীব ওয়াজেদ বলেন, মহেশখালী মূল জনপদ থেকে ১৪ মাইল দূরে। সেখান থেকেই ফাইবার অপটিক কেবল দিয়ে আনা হয়েছে ইন্টারনেট। সেখানকার স্কুলেও এখন এই সুবিধা রয়েছে। শিশুরা প্রথমবারের মতো বিশ্ব দেখছে ইন্টারনেটে। এখন মূল জনপদের শিক্ষকদের সঙ্গেও সরাসরি যোগাযোগ করতে পারছে শিক্ষার্থীরা।

মহেশখালীতে স্বাস্থ্যসেবাও উন্নত হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এই ডিজিটাল দ্বীপে চারটি কমিউনিটি ক্লিনিকে আল্ট্রাসনিক ডিভাইস যুক্ত করা হযেছে। আরও সুবিধা আসছে। এতে করে এখান হাসপাতালগুলো ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো বড় হাসপাতালের মতো রোগীদের পরীক্ষা ও চিকিৎসা করতে পারবে।

মহেশখালীতে সব সময় লবণ তৈরি ও মাছ ব্যবসার জন্য বিখ্যাত। তবে উদ্যোক্তারা মূল জনপদে গিয়ে ব্যবসা করার সুযোগ কম পায়। সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ডিজিটাল আইল্যান্ড প্রকল্পের আওতায় সরকার সেখানে একটি ই-কমার্স কেন্দ্র খুলেছে যেখানে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা তাদের ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের তথ্য পাবেন।

খুব শিগগিরই সেখানে সমুদ্রবন্দর ও কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, অনলাইনের মাধ্যমেই বাসিন্দারা এখন চাকরির জন্য নিজেদের দক্ষ করে তুলতে পারে। কারণ সামনে অনেক চাকরি আসছে এবং দ্বীপটির অর্থনীতিই পাল্টে দেবে তারা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘মহেশখালী আমাদের সম্পদ, কিন্তু আমরা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারিনি। কারণ এটা বিচ্ছিন্ন।’ এই বক্তব্যকে তুলে ধরে জয় বলেন, তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে এই ডিজিটাল দ্বীপের সাফল্যের মডেল অন্যান্য প্রত্যন্ত দ্বীপেও প্রয়োগ করা হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অনেকগুলো প্রকল্পের একটি হচ্ছে মহেশখালী।

সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে ১৬ কোটি ৩০ লাখ মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যে ইন্টারনেট ছড়িয়ে দিতে পাঁচ হাজার ডিজিটাল সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে। স্থাপন করা হয়েছে তথ্যকেন্দ্রও। প্রতি আড়াই মাইলের মধ্যেই একটি করে কেন্দ্র রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এছাড়া শিক্ষকদের জন্যও একটি পোর্টাল তৈরি করা হয়েছে, যেখানে অংশ নিয়েছে প্রায় দুই লাখ ২০ হাজার শিক্ষক। এতে করে একটু অভিজ্ঞ শিক্ষকরা প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিতে পারছেন। উন্নত হচ্ছে শিক্ষার মান।

বাংলাদেশের ডিজিটাল বিপ্লব ঘটাতে ইতোমধ্যে ফোরজি নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি আনা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন জয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যখন মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহারের হার খুব দ্রুত বাড়ছে তখনই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়। ২০১২ সালে তিন কোটি ১০ লাখ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করতো। আর এখন সেই সংখ্যা প্রায় আট কোটি যা মোট জনসংখ্যার অর্ধেক। আর মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৪ কোটি ৫০ লাখ। ২০১২ সালে যা ছিল আট কোটি ৭০ লাখ।

এই অগ্রগতির কারণে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া এখন সহজ হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, এমন বিপ্লবের কারণে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ইন্টারনেট ইনস্টিটিউটও গত বছর বাংলাদেশে অভূতপূর্ব পরিবর্তন দেখেছে। বিশ্বে বাংলাদেশ অনলাইন কর্মী নিয়োগে দ্বিতীয় অবস্থানে। তাদের সামনে শুধু ভারত। এমন কাজের মধ্যে সফটওয়ার ডেভেলপমেন্ট, সেলস এন্ড মার্কেটিং ও মাল্টিমিডিয়ার কাজই বেশি।

আর মহেশখালীর শিশুদের জন্য এখন স্কুল আরও অনেক বেশি আনন্দের।

এসএইচ/