ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

আমৃত্যু প্রেসিডেন্ট থাকতে পারবেন শি জিনপিং

প্রকাশিত : ০৩:৫০ পিএম, ১১ মার্চ ২০১৮ রবিবার | আপডেট: ০৪:৫৬ পিএম, ১১ মার্চ ২০১৮ রবিবার

চীনের প্রেসিডেন্টের সর্বোচ্চ দুই মেয়াদের বিধান বাতিল করে সংবিধান সংশোধন করেছে চীনের পার্লামেন্ট।  এর ফলে আমৃত্যু চীনের প্রেসিডেন্ট থাকতে পারবেন শি জিনপিং।

রোববার দেশটির পার্লামেন্টের (ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস) বার্ষিক অধিবেশনে অনুষ্ঠিত ভোটাভুটিতে সংবিধান সংশোধনের পক্ষে তথা জিনপিংয়ের পক্ষে ভোট পড়ে ২ হাজার ৯৫৮টি ভোট; যেখানে তার বিপক্ষে পড়েছে দু’টি এবং তিনজন এমপি ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিলেন।
১৯৯০ সাল থেকে চীনা প্রেসিডেন্ট ৫ বছর করে সর্বোচ্চ দু’বারের জন্য নির্বাচিত হতে পারার নিয়ম ছিল।
ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে কমিউনিস্ট পার্টি চীনের সংবিধান থেকে প্রেসিডেন্টের মেয়াদসীমা তুলে দেওয়ার প্রস্তাব তোলে। ২০২৩ সাল পর্যন্ত মেয়াদ ছিল শি জিনপিংয়ের।
আগে থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল সংবিধান সংশোধন করতে জিনপিংকে কোনো বেগ পেতে হবে না। কারণ, কাগজে-কলমে কংগ্রেসই হলো চীনের সবচেয়ে বড় আইন প্রণয়নকারী সংস্থা। কিন্তু এটাকে স্রেফ একটা কাঠের পুতুল বলেই মনে করা হয়, কারণ, যেমন নির্দেশনা থাকে কংগ্রেস সেভাবেই সব অনুমোদন করে থাকে। বিগত ৫০ বছরের ইতিহাসে এর ব্যত্যয় ঘটেওনি।
রোববার সংবিধান সংশোধনীর উদ্দেশ্যে আয়োজিত ভোটে প্রধম ভোটটিই দেন শি জিনপিং। লাল একটি বক্সে প্রতিটি ব্যালট পেপার পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই হাতে তালি দিয়ে প্রেসিডেন্টের মেয়াদসীমা বিলুপ্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রতিনিধিরা।
২০৫০ সালের মধ্যে চীনকে অর্থনৈতিক ও সামরিক দিক থেকে সুপারপাওয়ারে পরিণত করার স্বপ্ন লালন করেন শি। সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে আজীবন ক্ষমতায় থাকার পথ পরিষ্কার করে নিজের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলেন তিনি।
শি জিনপিং ২০১২ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি দেশটির কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর থেকেই শি দেশটির ইতিহাসে ধারাবাহিকভাবে আত্মপ্রত্যয়ী ও নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ববাদী একটি যুগের সূচনা করেন। একইসঙ্গে তার হাত ধরে চীন এক নতুন জাগরণ দেখতে পেয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়। পরাক্রমশালী দেশ হিসেবে বিশ্বের কাছে চীনের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে তিনিই এখন সামনে থেকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে সফলতার পাশাপাশি ভিন্ন মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক ধরপাকড়ের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
গত বছর অক্টোবরে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর চিন্তাকে দলীয় গঠনতন্ত্রে অন্তর্ভূক্ত করার প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন করে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি। আধুনিক চীনের রূপকার হিসেবে স্বীকৃত মাও সে তুং-এর পর শি জিনপিং হলেন দ্বিতীয় ব্যক্তি, ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থায় যার চিন্তা দলীয় গঠনতন্ত্রে মতাদর্শের মর্যাদা পায়। মতাদর্শের মর্যাদা পাওয়ায় মাও-এর মতবাদ যেমন মাওবাদ হিসেবে বিবেচিত হয়, শি’র চিন্তাধারাও বিবেচিত হচ্ছে শি-বাদ হিসেবে। এর বিরুদ্ধে যে কোনও চ্যালেঞ্জ এখন থেকে কমিউনিস্ট পার্টির বিরুদ্ধের অবস্থান বলে বিবেচিত হয়।
কংগ্রেসের শুরুতে উপস্থিত প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে তিন ঘন্টা ভাষণ দেন শি। ওই ভাষণে প্রথমবারের মতো ‘নতুন যুগের চীনা পদ্ধতির সমাজতন্ত্র’ সংক্রান্ত শি জিনপিং-এর চিন্তাধারা’ নামে নিজের মতামত তুলে ধরেছিলেন তিনি। পরে পার্টির এক প্রস্তাবে বলা হয়, ‘কংগ্রেস দ্ব্যর্থহীনভাবে শি জিনপিং-এর চিন্তাধারাকে দলীয় গঠনতন্ত্রের মূলনীতি অংশে স্থান দেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে’।
সূত্র: বিবিসি।
/ এআর /