বন্দরে আটকা দেড় হাজার প্রতিষ্ঠানের পণ্য
প্রকাশিত : ০৪:৩৪ পিএম, ১২ মার্চ ২০১৮ সোমবার
পোশাক খাতসহ প্রায় ২০টি শিল্প খাতের কাঁচামাল ও বাণিজ্যিক পণ্য নিয়ে বাংলাদেশের জলসীমায় ভাসছে কনটেইনারবাহী পাঁচটি জাহাজ। এসব জাহাজ কখন জেটিতে ভেড়ানো যাবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। বিদেশি সেই পাঁচটি জাহাজে স্থানীয় এজেন্সি পরিচালনার কাজ কে করবে, তা নিয়ে জটিলতায় জাহাজাগুলো জেটিতে ভেড়ানোর অনুমতি মিলছে না।
এজেন্সি পরিচালনার কাজ পাওয়া না পাওয়া নিয়ে দুটি প্রতিষ্ঠানের দ্বন্দ্বে পড়ে ভুগছেন আমদানিকারকেরা। এই পাঁচ জাহাজে চট্টগ্রাম, ঢাকা, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, হবিগঞ্জ, রংপুরসহ ১৩ জেলার প্রায় দেড় হাজার শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের আমদানি পণ্যবাহী ৬ হাজার ১৩ একক কনটেইনার রয়েছে বলে জাহাজ কোম্পানির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
বন্দর জলসীমায় আসা জাহাজ জেটিতে ভিড়তে দুই-তিন দিন দেরি হলে যেখানে ব্যবসায়ীদের উৎকণ্ঠা শুরু হয়, সেখানে এ পাঁচ হাজারের একটি এমভি টিআর আরামিস ২৩ দিন ধরে পণ্য নিয়ে ভাসছে। এছাড়া এমভি থরস্কাই ১১দিন, ক্যাপ অ্যারাক্সস ৯ দিন, এমভি চার্লি ৮দিন এবং ক্যাপ ওরিয়েন্ট ৫ দিন ধরে বাংলাদেশের জলসীমায় ভাসছে।
এসব জাহাজে আমদানি করা শিল্পের কাঁচামাল না পেয়ে ইতিমধ্যে অনেক কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন পোশাক শিল্পকারখানার মালিকেরা। কারণ পণ্য উৎপাদনের জন্য তারা সময় পান বড়জোর তিন থেকে পাঁচ সপ্তাহ। পণ্য উৎপাদনের অধিকাংশ সময় চলে গেলেও তারা কাঁচামাল হাতে পাচ্ছেন না। এর মধ্যে এনভয় টেক্সটাইল, রিজেন্সি গার্মেন্টস, বেক্সিমকো ফ্যাশন, রিফাত ফ্যাশন, মিলেনিয়াম টেক্সটাইলসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
এছাড়া ওষুধ, কাচ, ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম, সিরামিক, রং, সিমেন্ট, প্রসাধন, কাজ, পলিথিন, প্লাইউড, সার, প্লাস্টিক, গাড়ি সংযোজন, টায়ার, আসবাব, চা প্রকিয়াজাতকরণ ও জুতা প্রস্তুতকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের আমদানি করা পণ্য রয়েছে।
তৈরি পোশাক রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র বন্দর ও জাহাজীকরণ বিষয়ক স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, পণ্য উৎপাদনের জন্য বিদেশী ক্রেতারা সর্বোচ্চ ২৫ থেকে ৩০ দিন সময় দেন। এর মধে যদি ২৩ দিনেও কারখানায় পণ্য না ঢোকে, তাহলে তো উড়োজাহাজে পণ্য পাঠানো ছাড়া বিকল্প উপায় থাকবে না।
কাস্টম সূত্রে জানা যায়, এজেন্সি পরিচালনা হস্তান্তর নিয়ে যে দুটি প্রতিষ্ঠানের দ্বন্দ্ব চলছে তার একটি হলো মেসার্স সি মেরিন শিপিং লাইনস লিমিটেড। অপরটি হলো মার্কো শিপিং কোম্পানি। কনটেইনার জাহাজ পরিচালনাকারী সিঙ্গাপুরভিত্তিক ফার শিপিং লাইনস লিমিটেডের বাংলাদেশের এজেন্ট ছিল সি মেরিন।৩১ জানুয়ারি সি মেরিন শিপিং লাইনস লিমিটেডের সঙ্গে ফার শিপিং কোম্পপনির এজেন্সি পরিচালনা চুক্তি শেষ হয়।এরপরই বিদেশি কোম্পনিটি সি মেরিনকে বাদ দিয়ে মার্কো শিপিং কোম্পানিকে এজেন্সি পরিচালনার জন্য নিয়োগ দেয়। নিয়োগ পাওয়ার পর ফার শিপিংয়ের পক্ষে বন্দরে আসা জাহাজের কাজ করার অনুমতি চেয়ে কাস্টমস কর্তপক্ষ দুই পক্ষের উপস্থিতিতে যৌথ ঘোষণাপত্র নিয়ে নতুন প্রতিষ্ঠানকে এজেন্সি পরিচালনার অনুমতি দেয়।
এ নিয়মানুযায়ী, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ যৌথ ঘোষণাপত্র প্রদানের জন্য চিঠি দেয় দুই পক্ষকেই।সি মেরিন যৌথ ঘোষণাপত্র প্রদান না করায় ফার শিপিং কোম্পানিটির পক্ষে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের দায়দেনা গ্রহণসংক্রান্ত অঙ্গীকারনামা কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে প্রদান করে মার্কো শিপিং।
এরপর ১৩ ফেব্রুয়ারি বন্দরে সাময়িকভাবে কাজ করার জন্য মার্কো শিপিংকে শর্ত সাপেক্ষে অনুমতি দেয় কাস্টমস কর্তপক্ষ।কাস্টমস কর্তপক্ষ মার্কো শিপিংকে চূড়ান্ত অনুমোদন না দেওয়ায় তারা উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করে।
আরকে// এআর