ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

‘বংশ পরম্পরায় কোটার সুবিধা পুনর্বিবেচনা দরকার’

প্রকাশিত : ০৭:২৪ পিএম, ১৩ মার্চ ২০১৮ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৬:৪৩ পিএম, ১৫ মার্চ ২০১৮ বৃহস্পতিবার

একুশে টিভি অনলাইনকে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর

একুশে টিভি অনলাইনকে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর

একসময় নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ পাওয়া যেতো। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়-মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের ঘটনা ঘটে। এখন তো সেটি আরও ব্যাপকতা পেয়েছে। এইচএসসি-এসএসসির পর প্রাথমিক সমাপনীর প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো ঘটনাও ঘটছে। প্রযুক্তির কল্যাণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগের রাতেই প্রশ্নপত্র ছড়িয়ে পড়ে। সেই প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়ে সার্টিফিকেট নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন দেশের গোটা শিক্ষাব্যবস্থাকে হুমকির মুখে এমনকি বিপর্যায়ে ফেলে দিচ্ছে এ প্রশ্নফাঁস।

গত একমাস জুড়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বড় জায়গাজুড়ে স্থান পেয়েছে এসএসসিতে প্রশ্নপত্র ফাঁসের খবর। এ নিয়ে তুমুল বির্তক চলছে দেশজুড়ে। একের পর এক প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে দেশের গোটা শিক্ষা ব্যবস্থা ও পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলে। এ থেকে উত্তরণে ওপেন বুক এক্সামের প্রস্তাব করেছেন শিক্ষাসচিব। কেউ কেউ বলছেন, সব পরীক্ষায় সৃজনশীল পদ্ধতির প্রয়োগ ঘটানো দরকার। এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে অনেকেই বলছেন শিক্ষকদের তৈরি না করে শিক্ষাব্যবস্থায় সৃজনশীল পদ্ধতি সংযোজন করায় বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। যার কারণে বাধ্য হয়ে কোচিংয়ের ধারস্থ হতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। তাই সৃজনশীল পদ্ধতিকে আদর্শ শিক্ষাপদ্ধতি মানতে নারাজ বহু শিক্ষাবিদ।

এছাড়া শিক্ষাব্যবস্থা কর্মমুখী না হওয়ার কারণে একাডেমিক শিক্ষার সর্বোচ্চ সনদ নিয়েও বছরের পর বছর পার করে দিচ্ছে শিক্ষার্থী, চাকরি মিলছে না। স্নাতকোত্তর পাশের পর ৩ থেকে ৪ বছর আবার চাকরির জন্য আলাদাভাবে প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। করতে হচ্ছে কোচিংও। আবার যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কোটার মারপ্যাঁচে ধুঁকছে মেধাবীরা। তাহলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার গলদটা আসলে কোথায়? এর সুলোক সন্ধানে একুশে টেলিভিশন অনলাইন মুখোমুখি হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক, লেখক ও  প্রাবন্ধিক ড. সৌমিত্র শেখর এর। তার কথায় উঠে এসেছে প্রশ্নফাঁস, কোচিং বাণিজ্য, কোটা পদ্ধতির সংস্কার, শিক্ষার্থীদের চাকরির সমস্যাসহ শিক্ষাব্যবস্থার নানা অসঙ্গতি-গলদ। সৌমিত্র শেখর মনে করেন, বংশ পরম্পরায় কোটা ব্যবস্থা চলমান থাকার ব্যাপারটি পুনর্বিবেচনার দরকার। বড়জোর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা কোটা সুবিধা ভোগ করতে পারে। কিন্তু নাতি-নাততিরা এ সুবিধা ভোগ করাটা কতটা যৌক্তিক সেটি ভেবে দেখা দরকার। এছাড়া সব সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বয়সসীমা বেধে দেওয়ার মধ্যেও কোনো যুক্তি নেই বলে মনে করেন এ শিক্ষাবিদ।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন একুশে টেলিভিশন অনলাইন প্রতিবেদক রিজাউল করিম । দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্ব পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো-

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: সম্প্রতি বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার বির্তক চলছে দেশজুড়ে। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ও পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে নানা মহল থেকে। ইতোমধ্যে ওপেন বুক এক্সামের প্রস্তাব করেছেন শিক্ষাসচিব। পরীক্ষা পদ্ধতিটা আসলে কেমন হওয়া উচিত?

সৌমিত্র শেখর: আমাদের দেশে পরীক্ষা এমন একটা বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখানে শুধুমাত্র একটি সার্টিফিকেট দেওয়ার জন্য অনুষ্ঠান করা হয়ে থাকে।বিশেষ করে পাবলিক পরীক্ষাগুলো যে পর্যাযে গেছে, তাতে প্রকৃত মেধাবী যারা, তাদের চিহ্নিত করা খুব কঠিন। আমি পরীক্ষাকে দুটি ভাগে ভাগ করতে চাই। এর একটি হচ্ছে সার্টিফিকেট দেওয়ার জন্যে যে পাবলিক পরীক্ষাগুলো হয় সেটা। অপরটি হচ্ছে চাকরি দেওয়ার জন্যে যে পরীক্ষা হয় সেটা।

দুটি পরীক্ষার চরিত্র ভিন্ন, পাবলিক পরীক্ষায় সনদ দেওয়া বা নেওয়ার ব্যাপার থাকে।এই জায়গায় পরীক্ষা গ্রহণ, খাতা মূল্যায়ন এবং সবশেষে সনদ দেওয়া। এসবের সঙ্গে সরকারের ভাবমূর্তি নির্ভর করে, পরিবারের শান্তি নির্ভর করে; যে পরীক্ষার্থীর সন্তুষ্টি নির্ভর করে। এ পরীক্ষাটি খানিকটা উৎসবে মতো হয়। পিইসি, জেএসসি ও এসএসসি অনেকটা এ উৎসবের মধ্যে পড়ে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো-এসব পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা অনেক বেশি। এখানে পরীক্ষার্থীসহ মা-বাবা চান যেন জীবনের প্রথম পরীক্ষায় ভালো ফল হয়।

কিন্তু দ্বিতীয় যে ধাপটি আছে সেটি হলো-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা বা চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা। এই পরীক্ষাটি হলো এক্সামিনেশন অব এলিমিনেশন। অর্থাৎ এটি সার্টিফিকেট দেওয়ার পরীক্ষা নয়, বাদ দেওয়ার পরীক্ষা।

প্রথম পাবলিক পরীক্ষাটা কত বেশি পাশ করলো এ ক্রেডিট নেওয়ার পরীক্ষা। সে ক্রেডিট নেওয়ার প্রতিযোগিতা সরকারের পক্ষ থেকে থাকে, পরিবারের পক্ষ থেকে থাকে; পরীক্ষার্থীদের পক্ষ থেকেও থাকে। মা-বাবা বলে আনন্দ পান যে, তার সন্তান এতো পয়েন্ট পেয়ে পাশ করেছে। আর যারা পরীক্ষা নেন অর্থাৎ সরকারও ফলাও করে প্রচার করে যে তাদের এতো শতাংশ পাশ করেছে। ওমুক বোর্ড থেকে ওমুক বোর্ডে পাশের হার এতো বেশি। অথবা গত বছরের তুলনায় এ বছর পাশের হার এতো বেশি।শিক্ষার হার বাড়ছে।

এই যে উৎসব মুখরপরিবেশ ও প্রতিযোগিতা। এখানেই প্রশ্ন ফাঁস হয়। প্রকৃত শিক্ষা এখানে গৌণ হয়ে পড়ে। মুখ্য হয় সনদ নেওয়া। এছাড়া পরীক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি চাপও প্রশ্নফাঁসের কারণ।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: আপনি বলতে চাচ্ছেন পরীক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি চাপও প্রশ্নফাঁসের কারণ?

সৌমিত্র শেখর: পরীক্ষায় অনেক বেশি বিষয় থেকে প্রশ্ন আসাও প্রশ্নফাঁসের কারণ।আমরা যদি শুধু বাংলা, ইংরেজি, গণিত এবং বিজ্ঞান এ চারটি বিষয় ছেলে-মেয়েদের শিখাতে চাই, সেখানে যে বিষয়ে প্রশ্নফাঁস হবে সে বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ধরতে হবে। কেন তার প্রশ্ন ফাঁস হলো। এছাড়া আমাদের পঞ্চম, ষষ্ঠ ও দশম তথা শ্রেণীভিত্তিক যে পাঠ্য বিষয় আছে সেটা ঠিক নেই। দেখা যাচ্ছে পঞ্চম শ্রেণীতে যে ছাত্র ৬টি বিষয়ে পড়লো। এক বছর পরেই ষষ্ঠ শ্রেণীতে তাকে পড়তে হচ্ছে ১০টা বা তার অধিক বই। আবার দশম শ্রেণীতে পড়ানো হচ্ছে আরো বেশি। এখন কথা হচ্ছে যে শিক্ষার্থী ২০১৬ সালে ৬টি বিষয়ে পড়লো। সে এমন কী যোগ্যতা অর্জন করেছে যে, পরের বছর ২০১৭ তে তার ঘাড়ে ১০টি বই চাপিয়ে দেওয়া হবে। আমাদের শিক্ষায় এই যে বাড়তি চাপ শিক্ষার্থীরা হয়তো নিতে পারছে না। এই যে পূর্বাপর বিবেচনা ছাড়া বাড়তি চাপ। এটার কারণে ছেলে-মেয়েরা সব বিষয় আয়ত্ব করতে পারছে না। যার কারণে পরীক্ষার সময় এলে তারা প্রশ্নফাঁস বা অসদুপায় অবলম্বন করতে থাকে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: সনদের বিষয়টি পাবলিক পরীক্ষাগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। নিয়োগ পরীক্ষায় তো সনদ নাই, তবে কেন এ পরীক্ষাতেও প্রশ্নফাঁস হচ্ছে?

সৌমিত্র শেখর: পরীক্ষা নিয়ে যখন আলোচনা করবো তখন একমুখী আলোচনা করা যাবে না। সরকারি চাকরি বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি এটা এক রকম। আবার পাবলিক পরীক্ষাগুলো আর এক রকম। সরকারি চাকরি বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় সিজিপিএ অপেক্ষাকৃত বেশি রাখা উচিত। যাদের বেশি সিজিপিএ আছে শুধু তারাই অংশ নিতে পারবে।এসব পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার পরিধি কমিয়ে আনতে হবে।এটা করলে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্নফাঁস কমে যাবে।

পরীক্ষায় প্রার্থী বেশি থাকার কারণে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গাতে এক যোগে পরীক্ষা নিতে হয়। দূরত্বের জায়গাগুলোতে আগে থেকেই প্রশ্ন পাঠাতে হয়। সেখানেই হয় গলদ।অর্থাৎ এক জায়গা থেকে আর এক জায়গাতে প্রশ্ন নেওয়ার সময় প্রশ্নফাঁস হয়। অল্প সংখ্যক পরীক্ষার্থী হলে অল্পসংখ্যক কেন্দ্রে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়। তাতে প্রশ্নফাঁস বন্ধের ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

তবে প্রশ্নফাঁসে আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা আমরা প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করতে পারি নাই। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে পারি নাই। এটা করতে পারলে প্রশ্নফাঁস বন্ধ করা যেতো।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: আপনি কী বলতে চাইছেন পরীক্ষা সনদ কেন্দ্রীক হয়ে পড়েছে, যার জন্য এমন প্রশ্নফাঁস হচ্ছে?

সৌমিত্র শেখর: অনেকটা তাই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ শতাংশ পাশ করলে পত্রিকায় বড় করে সংবাদ আসে যে মাত্র এতো শতাংশ পাশ করেছে।কম পাশ করার সমালোচনা হয়।কিন্তু অনেকে বুঝেই না যে এটা ফেল করানোর পরীক্ষা, পাশ করানোর না। পারলে ২ শতাংশ না, ১ শতাংশ পাশ করাবে। সেটাই ভালো।তাতে যারা মেধাবী তারাই আসতে পারবে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: বর্তমান সময়ে সাধারণ চাকরি প্রত্যাশীদের মধ্যে কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবি বেশ জোরালো হয়ে উঠছে। দাবির প্রেক্ষাপটে সরকারি চাকরিতে কোটায় কোন পদ শূণ্য থাকলে তা মেধাতালিকা থেকে নেওয়ার পরিপত্রও জারি হয়েছে। আসলে কোটা বাতিলের দাবি কতটা যৌক্তিক? আর সেটার প্রেক্ষাপটে মেধাতালিকা থেকে নেওয়ার ঘোষণাও বা কতটা বাস্তবসম্মত?

সৌমিত্র শেখর: মেধাতালিকা থেকে নেওয়ার ঘোষণাটা মন্দের ভালো। তবে এ ব্যাপারে আমার স্পষ্ট বক্তব্য হলো-বংশ পরম্পরায় চাকরির ব্যাপারটি পুনর্বিবেচনার দরকার। এখানে বড় জোর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পর্যন্ত ঠিক আছে।এ সন্তানদেরও না দিলে-ই ভালো হয়। তবে সার্বিক দিক বিবেচনায় শুধু সন্তান পর্যন্ত রাখা যেতে পারে। পরবর্তী ধাপগুলোর সুযোগ উঠিয়ে দেওয়া উচিত। এটা করলে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ থেকে স্বাভাবিকভাবে কমে আসতে থাকবে। অর্থাৎ আমরা ঘোষণা দিয়ে বন্ধ না করেও পদ্ধতিগতভাবে এটা বন্ধ করে দিতে পারি।

পদ্ধতিটা হলো আমরা যদি বলি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। তাহলে মুক্তিযোদ্ধার নাতি আর আবেদন করতে পারবে না। এটা সরকারে একটা এক্সিট পয়েন্ট বলে আমি মনে করি। সরকারের পক্ষ থেকে একটা সিদ্ধান্ত দিয়ে সেখান থেকে ফিরে আসা কঠিন হয়।

আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান করি। আমাদের পরিবার থেকেও মুক্তিযোদ্ধা আছেন। বহুজনের পরিবার থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। এদের অনেকে সার্টিফিকেট নিয়েছেন, আবার অনেকে সার্টিফিকেট নেননি। আমি মুক্তিযোদ্ধাদের সময়ের শ্রেষ্ঠ সন্তান বলে মনে করি।

তার মানে এই নয় যে, স্বাধীন বাংলাদেশের ৫০ বছর হতে যাচ্ছে। সেই জায়গাই যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে কিন্তু সার্টিফিকেট নেননি, অথবা পরবর্তীকালে মুক্তিযুদ্ধ বা এ ধরণের ক্ষেত্র তৈরি হয়নি বলে মুক্তিযোদ্ধা হতে পারিনি। তাদেরকে চাকরির ক্ষেত্রে কোটার মাধ্যমে সঙ্কুচিত করে ফেলি।

সরকার যদি মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের সন্তানদের জায়গাই এসে কোটার বিষয় পুনর্বিবেচনা করেন।তাহলেই আমার মনে সরকারের জন্য এটি ইতিবাচক হবে। এটা বর্তমান প্রজন্মের কাছেও গ্রহণযোগ্য হবে। সরকারের জন্য ভালো হবে। বিষয়টি একটা সম্মানজনক জায়গায় দাঁড়াবে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: আমাদের দেশে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩০ বছর। পৃথিবীর অন্যদেশের তুলনায় এ বয়স বাড়িযে ৩৫ বছর করতে সাধারণ চাকরি প্রত্যাশিরা দাবি তুলেছে। তাদের দাবিকে আপনি কতটা যৌক্তিক মনে করছেন?

সৌমিত্র শেখর: চাকরি পাওয়ার অধিকার আসলে সবার-ই আছে। আমার মনে হয়, চাকরির ক্ষেত্রে আমরা যে বিষয়টা মাথায় রাখছি; সেটা হচ্ছে সব চাকরির ক্ষেত্রে বয়স একই হওয়া উচিত। সেজন্য চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩০ বছর বেঁধে দেওয়া হয়েছে। আসলে ঢালাওভাবে সব চাকরির  ক্ষেত্রে এমন বয়স বেঁধে দেওয়া বাস্তব সম্মত না। কোনো কোনো চাকরির ক্ষেত্রে বয়সসীমা বাড়ানো যেতে পারে। যেখানে অপেক্ষাকৃত শারীরিক পরিশ্রম কম হবে। সেখানে অবশ্যই চাকরির বয়স বাড়ানো যেতে পারে। তাছাড়া যারা চাকরিতে প্রবেশ করবে তারা তো যোগ্যতার পরিচয় দিয়েই ঢুকবে। তবে কেন বয়স দিয়ে তাদের আটকে দেওয়া হচ্ছে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: চাকরি প্রত্যাশিদের যুক্তি পৃথিবীর অনেক দেশে কোন বয়সসীমা নাই। আবার থাকলেও তা বাংলাদেশের ৩০ বছরের চেয়ে বেশি। তাদের বক্তব্য কতটা যৌক্তিক মনে করছেন?

সৌমিত্র শেখর: পৃথিবীর বহুদেশে এমনকি আমাদের পার্শবর্তী দেশ ভারত ও পাকিস্তানে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা এতোটা শক্ত করে ধরা হয়নি। যেমন সেনাবাহিনীতে যারা চাকরিতে যোগ দিবে তাদের চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ বছর নয়। অর্থাৎ সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী, নৌবাহিনী এমন প্রতিষ্ঠান, যেখানে শারীরিকভাবে শক্তিশালীদের নিয়োগ দিতে হয়। যে কারণে ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে তাদের প্রবেশের বয়সসীমা রাখা হয়।

কিন্তু যারা রেলওয়ে বা পোষ্ট অফিসে যাবে তার জন্যে তো বয়সসীমা দরকার নেই। সে তো সেখানে ৪০ বছরেও কাজ করতে পারে। পার্শবর্তী দেশ ভারতে এমন পদ্ধতি আছে। তারা প্যানেল করে রাখে। প্যানেল অনুসারে চাকরিতে ডাকে।সে অনুযায়ী প্রার্থীরা চাকরিতে যোগ দিতে পারে। অর্থাৎ এক একটা পরীক্ষা নেওয়ার জন্য এক একটা পৃথক প্যানেল গঠন করা হয়।ওই দেশগুলোর নিয়ম হচ্ছে রেলওয়েতে চাকরির জন্য বাংলাদেশের মতো পিএসসির মাধ্যমেই যেতে হবে তা নয়। তারা পৃথক চাকরির জন্য পৃথক পৃথক বোর্ড করেছে। আবার পদমর্যাদার ক্ষেত্রে সমন্বয় করেছে।তাদের এটি সুদূর প্রসারী আমলাতান্ত্রিক চিন্তার প্রতিফল।

সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় পর্ব প্রকাশিত হবে আগামীকাল।

/ এআর /