ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১১ ১৪৩১

সুখের সংসার এক মুহূর্তেই শেষ

প্রকাশিত : ১১:৪৫ এএম, ১৪ মার্চ ২০১৮ বুধবার

প্রায় সাত বছর আগে ১৯ বছরের তরুণ রাকিবুলের সঙ্গে ১৬ বছরের তরুণী নাসরিন আক্তারের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছিলো গভীর ভালোবাসা। অনেক দিন ধরে লুকিয়ে লুকিয়ে চলা প্রেমের পর শুরু হয় ঘরবাঁধার স্বপ্ন। কিন্তু রাজি ছিল না দুই পরিবারের কেউ। ফলে দুজনে বিয়ে করে ফেলেন দুই পরিবারের অমতে। স্বজনদের থেকে দূরে গিয়ে বাঁধলেন সুখের সংসার। সেখানে রাকিবুল শুরু করলেন নির্মাণ শ্রমিকের কাজ (রাজমিস্ত্রি)।বিয়ের দেড় বছর পর সুখের সংসারে ভালোবাসার সিঁড়ি বেয়ে আসলো ফুটফুটে একটি কন্যা সন্তান। পরে দুজনের পরিবার মেনে নিল তাদের ভালোবাসার সম্পর্ক। বিয়ের পাঁচ বছর পর এলো আরও একটি কন্যা সন্তান।

সুখেই চলছিল তাদের সংসার। কিন্তু তাদের সাত বছর ধরে তিলতিল করে গড়ে তোলা ভালোবাসার সংসারে এক অশুভ শক্তি ভর করলো গত সোমবার দিবাগত রাতে। রাত ১২টার দিকে বন্ধু সুজনের কল পেয়ে বের হন রাকিবুল। আর এক মুহূর্তেই নাসরিনের ভালোবাসার সুখের সংসার যেন চুরমার হয়ে যায়। ঘটনাটি নরসিংদীর।

সোমবার রাত ১২টার দিকে স্ত্রীকে না জানিয়ে রাকিবুল আরও চার-পাঁচজন যুবকের সঙ্গে গভীর রাতে বের হন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, সবাই মিলে যান পাশের গ্রামের একটি বাড়িতে মোটরসাইকেল চুরি করতে। মোটরসাইকেল চুরি করতে গিয়ে স্থানীয় জনতা তাদেরকে ধাওয়া দিলে চার যুবক পালিয়ে যায়। কিন্তু ধরা পড়েন রাকিবুল। আর তাতেই গণপিটুনিতে মৃত্যু হয় তার। সেইসঙ্গে মৃত্যু ঘটে তিলতিল করে গড়ে তোলা একটি স্বপ্নের।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গের সামনে অশ্রুজলে প্লাবিত হয়ে এভাবেই ঘটনার বর্ণনা করছিলেন রাকিবুলের স্ত্রী নাসরিন আক্তার। যাকে নিয়ে স্বপ্ন ছিল বেঁচে থাকার, যার জন্য পরিবার পরিজন সব ছাড়ল, সেই রাকিবুল তাকেই ছেড়ে চলে গেল চিরদিনের জন্য।

সোমবার দিবাগত রাতে নরসিংদীর মাধবদী উপজেলার বিরামপুরে চুরি করতে গিয়ে গণপিটুনিতে নিহত হন রাকিবুল (২৬)। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার রসুলপুর গ্রামে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে বসবাস করতেন তিনি। সেখানে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। কাজের সুবাদে সহকর্মী কয়েকজনের সঙ্গে গড়ে ওঠে বন্ধুত্ব। কিন্তু তারা যে এমন চুরির মতো ঘটনা করবেন স্বামী রাকিবুলকে নিয়ে তা কখনও বুঝতে পারেননি স্ত্রী নাসরিন।

নাসরিন বলেন, রাত ৩টায় মোবাইলের শব্দ শুনে ঘুম ভাঙলে দেখি মোবাইলে রাকিবুলের কল। দেখি বিছানায় সে নাই। ফোন রিসিভ করার পর যারা তাকে মেরেছে তাদের একজন আমাকে জিজ্ঞেস করলেন আমি তার কী হই। আমি তার স্ত্রীর পরিচয় দিই। একথা শুনে ওই লোক আমাকে বললেন, আপনার স্বামী চুরি করতে এসে হাতে ধরা পড়ে পিটুনি খেয়েছে। সকালে সেখানে গিয়ে শুনি রাকিবুলকে নরসিংদী সরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। গিয়ে দেখি রাকিবুলকে তারা এত মেরেছে, সে কথা পারছে না। পরে তাকে নিয়ে দুপুর ১২টায় ঢাকা মেডিকেলে আসি। কিন্তু ততক্ষণে আমার রাকিবুল আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।

তিনি বলেন, দেশে আইন আছে। রাকিবুল অপরাধ করলে আইনগতভাবে শাস্তি দিত। কিন্তু তাকে মেরেই ফেলল। এ বিচার আমি কই পাব। আমার ছোট ছোট দুইটা মেয়ে নিয়ে আমি এখন কই যাবে?

একে// এআর