হকিং চেয়েছিলেন গণিত পড়তে বাবার ইচ্ছা ছিল চিকিৎসা বিদ্যা
প্রকাশিত : ১০:৪১ এএম, ১৫ মার্চ ২০১৮ বৃহস্পতিবার
স্টিফেন হকিং। নামটি নিলেই চোখের সামনে ভেসে আসে হুইলচেয়ারে গর্দান ঝুলিয়ে বসে থাকা একটি চেহারা। যিনি অপলকে তাকিয়ে আছেন একদিকে। আলাভোলা চেহারা। যেন কিছুই বুঝেন না। প্রায় ৫ দশক এভাবেই জীবনটা পার করে দিয়েছেন। গতকাল হকিং পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন। তার জীবন নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। বেরিয়ে আসছে তার জীবনের কিছু অজানা তত্ত্ব। হকিং চেয়েছিলেন গণিত নিয়ে পড়তে আর তার বায়োলজিস্ট বাবার ইচ্ছা ছিলেো ছেলে হবে বড় ডাক্তার।
হকিং স্মরণীয় হয়ে থাকবেন তার সময়ের সবচেয়ে আলোচিত, সবচেয়ে সম্মানিত, সবচেয়ে মেধাবী বিজ্ঞানীদের একজন হিসেবে, যিনি মোটর নিউরন নামের এক দুরারোগ্য ব্যধির কারণে তারুণ্যে চলৎশক্তি হারিয়েও ৭৬ বছর বয়স পর্যন্ত নিজেকে নিয়োজিত রাখেন বিজ্ঞানের সাধনায়; আধুনিক সৃষ্টিতত্ত্বকে দিয়ে যান নতুন আকৃতি। যিনি পৃথিবীকে-বিজ্ঞান মনস্ক মানুষকে করে গেছেন ঋণী।
আইনস্টাইনের সাধারণ অপেক্ষবাদের সঙ্গে বোর-হাইজেনবার্গের কোয়ান্টাম তত্ত্বকে মিলিয়ে মহাবিশ্বের সৃষ্টিরহস্যের ব্যাখ্যা করাই হকিংয়ের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব বলে বিবেচনা করা হয়। তিনি ধারণা দেন, স্থান আর কালের সূচনা হয়েছিল বিশ্বজগতের সৃষ্টির সময়, এক মহাবিস্ফোরণ বা বিগ ব্যাংয়ের মধ্যে দিয়ে। আর এর ইতি ঘটতে পারে ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বরে।
গ্যালিলিওর মৃত্যুর ঠিক তিনশ বছর পর ১৯৪২ সালের ৮ জানুয়ারি ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডে জন্ম নেন স্টিভেন উইলিয়াম হকিং। আর ১৪ মার্চ যে দিন তার মৃত্যু হল, পৃথিবীর মানুষ তা স্মরণ করে তত্ত্বীয় পদার্থবিদ্যার আরেক দিকপাল আলবার্ট আইনস্টাইনের জন্মদিন হিসেবে।
হকিংয়ের বাবা ফ্র্যাঙ্ক হকিং আর মা ইসোবেল ছিলেন উত্তর লন্ডনের বাসিন্দা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তারা যখন ‘তুলনামূলক নিরাপদ শহর’ অক্সফোর্ডে চলে আসেন, হকিং তখন মায়ের গর্ভে।
তার আট বছর বয়সে পুরো পরিবার উত্তর লন্ডন থেকে ২০ মাইল দূরের সেইন্ট আলবানস শহরে চলে যায়। ১১ বছর বয়সে এখানকার সেইন্ট আলবানস স্কুলে ভর্তি হন হকিং, এরপর যান বাবার পুরনো শিক্ষাঙ্গন অক্সফোর্ডে।
হকিংয়ের ইচ্ছা ছিল গণিত নিয়ে পড়বেন। কিন্তু রিসার্চ বায়োলজিস্ট বাবা চেয়েছিলেন ছেলে ডাক্তার হোক। শেষ পর্যন্ত তিনি অক্সফোর্ডে পড়েন পদার্থবিদ্যা। পরে কেমব্রিজে যান কসমোলজির ওপর স্নাতকোত্তর করতে।
কিশোর বয়সে ঘোড়ায় চড়তে ভালোবাসতেন হকিং। কিন্তু ২১তম জন্মদিনের কিছুদিন পর ১৯৬৩ সালে হকিংয়ের এক ধরনের মোটর নিউরন রোগ এএলএস ধরা পড়ে। তার প্রায় পুরো শরীর অসাড় হয়ে পড়ে, বাকশক্তি লোপ পায়; চলাফেরা সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে হুইল চেয়ারে।
১৯৬৪ সালের জুনে হকিং যখন বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন চিকিৎসক সাফ জানিয়ে দেন, তার হাতে বড়জোর আর দুই কি তিন বছর আছে।
চিকিৎসকরা যতটা ভয় পাচ্ছিলেন, ততটা দ্রুত বাড়েনি হকিংয়ের রোগ। প্রথম স্ত্রী জেন ওয়াইল্ডের সঙ্গে তার সংসারে তিন সন্তানের জন্ম হয়। বিশেষভাবে তৈরি ভয়েস সিন্থেসাইজার দিয়ে হকিংয়ের ভাব প্রকাশের ব্যবস্থা হওয়ার পর ১৯৮৮ সালে তিনি ‘এ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’শেষ করেন।
সূত্র : হকিং ডট অরগ।
/ এআর /