‘ভোক্তা সোচ্চার হলে তার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে’
প্রকাশিত : ০৯:০৯ পিএম, ১৫ মার্চ ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৩:৩৩ পিএম, ১৯ মার্চ ২০১৮ সোমবার
ভোক্তাদের অভিযোগ ফুডকোর্ট থেকে শুরু করে মুদির দোকান, ফাস্টফুডে বা অধিক দামে পণ্য বিক্রি, পণ্যে ভেজালসহ ওজনের হেরফের করে বিক্রিতারা। ব্যবসায়ীরা অধিক দামে পণ্য বিক্রি করলেও অধিকাংশ ভোক্তাই জানেন না তাদের অধিকার বা এর প্রতিকার বিষয়। যদিও ভোক্তার স্বার্থ রক্ষায় সরকার বিভিন্ন উদ্যেগ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, প্রতিযোগিতা কমিশন।
তবে পণ্যে ভেজাল বা অধিক দামে পণ্য বিক্রি কিংবা মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য দেখামাত্র ক্রেতারা অভিযোগ করতে পারেন ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতরে। অপরদিকে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস। এসব বিষয়ে একুশে টেলিভিশন অনলাইনের মুখোমুখি হয়েছেন ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণে কাজ করা বেসরকারি সংগঠন ‘কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশে’র (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান। স্বাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ইয়াসির আরাফাত রিপন।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: দেশের ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণে সরকারের পাশাপাশি আপনারাও কাজ করছেন। বর্তমানে ভোক্তাদের অধিকার কতটা সংরক্ষণ হচ্ছে বলে আপনি মনে করেন?
গোলাম রহমান: দেশে ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণের জন্য বেশ কিছু আইন হয়েছে। এর আগেও কিছু আইন ছিল। কিন্তু সেগুলোর ব্যাপারে মানুষ খুব বেশি সচেতন ছিল না। আইনগুলো কমপ্রিহেনসিভ (ব্যাপক) ছিল না। ২০০৯ সালে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০১২ সালে প্রতিযোগিতা আইন, ২০১৩ সালে নিরাপদ খাদ্য আইন এবং ২০১৫ সালে ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন করা হয়। এই প্রত্যেকটি আইনই ভোক্তা বান্ধব। এই আইনগুলোর সাথে সাথে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তোলার চেষ্টা হয়েছে সরকার।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: ভোক্তার স্বার্থ সংরক্ষণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সরকার গড়ে তুলেছে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে কি ভোক্তারা উপকৃত হচ্ছেন?
গোলাম রহমান: ভোক্তার স্বার্থ রক্ষায় সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগেই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, প্রতিযোগিতা কমিশন। ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার এখন অনেক সচেতন। তবে এসব প্রতিষ্ঠানগুলো এখনও পরিপূর্ণতা লাভ করেনি। প্রতিষ্ঠানগুলো যদি পরিপূর্ণতা লাভ করে, তাদের দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে তাহলে ভোক্তারা অবশ্যই উপকৃত হবে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: প্রতারক চক্ররা অনেক সময় নামি-দামি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করে বলে শোনা যায়। তারা মূলত জরিমানার একটা অংশ নেওয়ার জন্যই এমনটা করে। এ ব্যাপারে আপনরা মতামত জানতে চাইব।
গোলাম রহমান: জরিমানার জন্য কোনো প্রতারক চক্র যদি তথ্য দেয় বা ভোক্তা হিসেবে যদি কেউ প্রতারিত হয় আর তাদের কাছে যদি প্রমাণ থাকে তাহলে তাকে প্রতারক বলে না। তবে কোনো প্রতারক চক্র প্রমাণ ছাড়াই যদি জরিমানার উদ্দেশ্যে আসে তাহলে তাদের ব্যাপারে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। তাছাড়া তাদের প্রতারণাটি ফাঁস হয়ে যাবে তদন্তের সময়। অবশ্যই প্রমাণ না থাকলে তার কোনো জরিমানা হবে না। কারণ তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতেই কোনো প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: ভোক্তারা কোনো পণ্য কিনে প্রতারিত হলে কোথায় এবং কিভাবে অভিযোগ করবে?
গোলাম রহমান: ভোক্তার অধিকার নিয়ে কাজ করছে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর এবং কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ক্যাব)। ভোক্তারা চাইলে এ সংগঠন দুটিকে জানাতে পারবেন। আর অধিদফতরতো এখন যে কোনো ধরণের অভিযোগ সাত দিনের মধ্যেই নিষ্পত্তির করার চেষ্টা করছে। কোনো প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে ভোক্তার অভিযোগ যদি সঠিক হয়, তাহলে ওই প্রতিষ্ঠান থেকে জরিমানা আদায়ের এক-চতুর্থাংশ ভোক্তা পাবে। আর ক্যাবও ভোক্তার অধিকার আদায়ে প্রয়োজনে আদালত পর্যন্ত যাবে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: ভোক্তার অধিকার কতটুকু প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
গোলাম রহমান: ভোক্তা প্রতারিত হলে বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্রথমে অবশ্যই ভোক্তাকে সচেতন হতে হবে। এর প্রতিকারের জন্য দাবি জানাতে হবে, দাবি তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে, ভোক্তা যদি সোচ্চার হয়, প্রতিবাদি হয়, সচেতন হয় তাহলেই ভোক্তার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: বড় বড় প্রতিষ্ঠানে ভেজাল ধরা পড়লে তাদের অনেকেই প্রভাব বিস্তার করতে চায়, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করাতে চায়। এ বিষয়ে আপনার পারমর্শ কি?
গোলমা রহমান: ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতরের যে দায়িত্ব তা একটা পবিত্র দায়িত্ব। এ দায়িত্ব একটা বড় দায়িত্ব। তাই তাদেরকে সকল প্রকার ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে কাজ করতে হবে। তারা যদি নিষ্ঠার সাথে কাজ করে তাহলেই ভোক্তার অধিকারটা প্রতিষ্ঠিত হবে, তাদের পবিত্র দায়িত্ব পালনটা যথাযথ হবে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর ও ক্যাবের মথ্যে কোনো বিষয়ে মতবিরোধ আছে কিনা?
গোলাম রহমান: আমাদের দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কোনো মতবিরোধ নেই। আমাদের উভয় প্রতিষ্ঠানই ভোক্তার অধিকার নিয়ে কাজ করে। আমরা যে লক্ষে কাজ করছি তারাও একই লক্ষ নিয়ে কাজ করছে। আমাদের কোনো আইনগত ক্ষমতা নেই তবে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতরের আইনগত ক্ষমতা আছে। তাই তাদের সাথে সহযোড়িতার মাধ্যমে আমরা ভোক্তাদের অধিকার আদায়ে সচেষ্ঠ আছি।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন (ক্যাব) কি ধরণের কাজ করে?
গোলাম রহমান: আমরা হলাম অ্যাডভোকেসি। আমরা ভোক্তার অধিকার নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের সাথে দেনদরবার করি, জনসচেতনতা সৃষ্টি করি। আবার কিছু প্রজেক্ট নিয়ে আমরা ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য নানা উদ্যোগ গ্রহণ করি। এসবরে মধ্যে যেমন এখন আমরা নিরাপদ ডিম, নিরাপদ টমেটো, নিরাপদ আম এসব বিষয়ে কাজ করছি।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: ভোক্তার আইন আছে, কিন্তু ক্যাবের নেই। ক্যাবের ক্ষেত্রে যদি আইনের প্রয়োজন হয় তখন কি করেন আপনারা?
গোলাম রহমান: এখন আমরা নিরাপদ খাদ্য নিয়ে কাজ করছি। প্রয়োজন হলে আমরা আদালতে যাই। যেমন কিছু দিন আগে সরকার দুই মুখো গ্যাসের চুলাতে ৯৫০ টাকা নির্ধারণ করেছিল। তখন আমরা ভোক্তার স্বার্থের কথা ভেবে আদালতে গিয়েছি। আদালতের নির্দেশে এখন সেটা ৮০০ টাকায় স্থীর করা হয়েছে। আমরা আইনি ব্যবস্থা নেই, আমরা প্রতিবাদী হই, আমরা র্যালি করি, মানববন্ধন করি, সভা-সেমিনার করি, সংবাদ সম্মেলন করি এবং সরকারের সাথে দেনদরবার করি। এক কথায় ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণের জন্য যা যা করার দরকার আমরা তাই করার চেষ্টা করি আমাদের সীমিত পরিসর থেকে।
একুশে টেলিভিশন অনলাইন: আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
গোলাম রহমান: একুশে টেলিভিশন অনলাইনকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আর/টিকে