হীরার আংটি হারিয়ে গেলে!
আবু এন. এম. ওয়াহিদ
প্রকাশিত : ০৩:০২ পিএম, ১৭ মার্চ ২০১৮ শনিবার | আপডেট: ১০:৫৫ এএম, ২৩ এপ্রিল ২০১৮ সোমবার
আজ সকালে অফিসে যাওয়ার সময় গাড়িতে উঠেই গতানুগতিকভাবে রেডিওটা চালু করলাম। ‘এনপিআর নিউজ’-এ একটি অভিনব খবরের শেষাংশটাই কেবল শুনতে পেলাম। আমেরিকার কোনো এক শহরে, এক ধনাঢ্য মহিলা তার হীরার আংটিটি হারিয়ে ফেলেছেন। এই আংটির মূল্য ৮৫ লাখ টাকা। বাংলাদেশে এ টাকা খুব বেশি না হলেও মার্কিন মুল্লুকে এখনো এক লাখ ডলার দিয়ে অনেক কিছু করা যায়! সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে এই মূল্যবান অলঙ্কারটি যখন মিলল না তখন এক পর্যায়ে আংটির মালিক নিশ্চিত হলেন যে, তিনি নিজেই ভুলবশত আংটিখানা রান্নাঘরে ময়লার টিনে ফেলে দিয়েছেন, কিন্তু হায়, ততক্ষণে আবর্জনার ব্যাগ বাইরে ফেলা হয়ে গেছে, ময়লার ট্রাক এসে সেটা তুলেও নিয়ে গেছে! এখন কী হবে! তড়িঘড়ি করে ময়লা ব্যবস্থাপনা কোম্পানিকে ফোন করা হলো, কর্তৃপক্ষ ট্রাকটিকে সনাক্ত করে ল্যান্ডফিলে না গিয়ে অফিসে ডেকে পাঠাল। দেখা গেল, ট্রাক কানায় কানায় ভর্তি, আরও বোঝা গেল ১০ টন কম্প্রেস্ড আবর্জনার মাঝে মহামূল্যবান আংটিটি লুকিয়ে আছে। কাজটি যত কঠিনই হোক না কেন, সুখের সংবাদ এই যে, স্তুপ স্তুপ ময়লা ঘাঁটাঘাঁটির পর অবশেষে অক্ষত অবস্থায় হারানো আংকটি উদ্ধার করা গেছে!
খবরটির এখানেই সমাপ্তি, কিন্তু আমি আজ আপনাদের সামনে যে ছোট্ট গল্প নিয়ে হাজির হয়েছি তার শেষ নয়, বরং সূত্রপাত এখান থেকেই। আমি ভাবলাম, বাংলাদেশে ১৬ কোটি মানুষ আছে, তাদের অধিকাংশই মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও গরিব। তাদের হীরার আংটি হারিয়ে গেলে কী হবে! আপনারা বলবেন, গরিবের জন্য ‘অন্নচিন্তাই তো চমৎকার’, তার আবার আংটি কিসের! আমি যদি বলি, প্রতিকী অর্থে তাদের প্রত্যেকেরই একটি করে হীরার আংটি আছে। অবশ্য তাদের আংটি আঙ্গুলে চমকায় না, অন্তরে ঝিলিক মারে! এই আলোর চ্ছটা আমরা কেউ দেখতে পাই, কেউ পাই না। যে মানুষটি নিজের মাঝে সৎ বিশ্বাস ও সৎ চরিত্র ধারণ ও লালন করে সে-ই একটি অতি মূল্যবান ‘হীরার আংটি’-র মালিক। এই মানুষটি জ্ঞাতসারে সচেতনভাবে যদি তার হৃদয়ের ‘হীরার আংটি’ আবর্জনার টিনে বিসর্জন দেয় তাহলে সেটা ফিরে আর কোনো দিন ফিরে পাবে?
লেখক: আবু এন. এম. ওয়াহিদ; অধ্যাপক- টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটি।
এডিটর - জার্নাল অফ ডেভোলাপিং এরিয়াজ।